অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ বা এনআরসি -ইস্যুতে যাবতীয় বিতর্কে বারবার উঠে আসছে অসম চুক্তি বা Assam Accord এর প্রসঙ্গ৷ সংসদে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ নিজের ব্যাখ্যা সম্প্রতি বলেছেন, রাজীব গান্ধী অসম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন৷ অসমে নাগরিকপঞ্জিকরণ নিয়ে বিতর্ক তোলার অধিকার নেই কংগ্রেসের৷ কী আছে এই অসম চুক্তিতে? নিচে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হল৷ এনআরসি -ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে এই চুক্তিতেই৷
Assam Accord হল All Assam Students Union (AASU), All Assam Gana Sangram Parished (AAGSP) এবং ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি৷ অসমে বিদেশি অনুপ্রদেশ সংক্রান্ত বিষয়েই চুক্তি সাক্ষর করা হয়েছে৷ ১৯৮৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার অসমে বিদেশি অনুপ্রবেশের সমস্য মেটাতে তৎপর ছিল৷ All Assam Students Union (AASU) এবং All Assam Gana Sangram Parished (AAGSP) এই বিষয়ে সুষ্পষ্ট সমাধান চাইছিল৷
ইতিমধ্যেই ১৯৮০ সালে ২ ফেব্রুয়ারি All Assam Students Union (AASU) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছিল, রাজ্যে বিদেশি অনুপ্রবেশ যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তবে তা , জনজীবনে খারাপ প্রভাব ফেলবে এবং রাজ্যে রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিবেশে তার চরম ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে৷
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী All Assam Students Union (AASU), All Assam Gana Sangram Parished (AAGSP) সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেন৷ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ এবং তারও পরে ১৯৮৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্তরে আলোচনা হতে থাকে৷ তবে সেসবই ছিল সাধারণ আলোচনা৷ প্রথামাফিক আলোচনার সূত্রপাত হয় ১৯৮৫ সালেই৷ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি, জাতীয়স্বার্থ এবং মানবিকদিক মাথায় রেখেই আলোচনা এগিয়েছিল৷
বিদেশি সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশিদের চিহ্নিতকরণ এবং তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে ১.১.১৯৬৬ মূল সাল হিসেবে ধরা হবে৷ যারা ওই সময়ের আগে অসমে এসেছেন তারা থাকবেন৷ অসমে ১৯৬৭ সালে নির্বাচন হয়েছিল৷ সুতরাং ১.১.১৯৬৬ আগে আসা যেসব মানুষের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে, তারাও থাকতে পারবেন৷ কিন্তু যেসব বিদেশি ১.১.১৯৬৬ তারিখে থেকে ২৪ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এসেছেন, তাদের Foreigners Act, 1946 এবং Foreigners (Tribunals) Order 1964 অনুযায়ী চিহ্নিত করা হবে৷ বিদেশিদের চিহ্নিতকরণ, এবং তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ২৪ মার্চ ১৯৭১ এর পরে যে বিদেশিরা অসমে ঢুকেছে, তাদের বিতারিত করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার৷
সেক্ষেত্রে পরিপ্রেক্ষিত বিচার করলে বোঝা যাবে, সংসদে অমিত শাহের বক্তব্যে রাজীব গান্ধী সম্পর্কে যে শ্লেষাত্মক ধ্বনী ছিল, তার কিছুটা হলেও গুরুত্ব রয়েছে৷ রাজীব গান্ধী ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেও Assam Accord অনুযায়ী কাজ করতে পারেননি বা করার সাহস দেখাননি৷ চুক্তির বিশ্লেষণই বলে দিচ্ছে, সংসদে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ ভুল কিছু বলেননি৷
চুক্তিতে পরিষ্কার বলা রয়েছে, অসমীয় নাগরিকদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ এবং তাঁদের সংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ভাষাগত পরিচয়ে দিকটি যাতে সুরক্ষিত থাকে, সে বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকবে কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় সরকারই Indian Citizenship Certificates (ICC) দেবে এবং প্রয়োজনে All Assam Students Union (AASU), All Assam Gana Sangram Parished (AAGSP) এর অভিযোগগুলিও খতিয়ে দেখবে৷ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কেন্দ্র৷ পাঁচিল বা কাঁটাতারের বেড়া ছাড়াও সীমান্তে রাস্তা তৈরি করার প্রস্তাবও রয়েছে চুক্তিতে৷ বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র৷
অসম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন All Assam Students Union (AASU) এর সভাপতি পি কে মোহন্ত এবং সাধারণ সম্পাদক বি কে ফুকন৷ All Assam Gana Sangram Parished (AAGSP) এর আহ্বায়ক বিরাজ শর্মা, স্বরাষ্ট্র সচিব আর ডি শর্মা, মুখ্য সচিব শ্রীমতি পি পি ত্রিবেদি৷ দিল্লিতে চুক্তি স্বক্ষর হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উপস্থিতিতে৷ তাঁরও স্বাক্ষর চুক্তিতে জ্বলজ্বল করছে৷