রামমন্দির লড়াইয়ের পথ প্রদর্শক অশোক সিংহল

আজ রামমন্দির এর ভূমি পূজন কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর উপস্থিতিতে সম্পন্ন হতে চলেছে । কোটি কোটি হিন্দুর আস্থা রামমন্দির ফিরে পাওয়া কে কেন্দ্র করে কখনো চলছে শারীরিক লড়াই,তো কখনো আইনি লড়াই,আন্দোলন সবকিছুই। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।

এসবের মাঝেই যে মানুষটির নাম বারবার উঠে আসছে তার নাম হলো অশোক সিংহল, যিনি স্বাধীন ভারতের রাম মন্দির আন্দোলনের কারিগর। অশোক সিংহলের জন্ম ২৭ শে সেপ্টেম্বর ,১৯২৬ সালে উত্তর প্রদেশের আগ্রায়। অশোক সিংহ জি আইআইটি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে বি.টেক করেন। পরিবারের লোক ভেবেছিলেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং করবে বা পারিবারিক ব্যবসা সামলাবেন। কিন্তু তিনি সেই পথে না গিয়ে গোরক্ষপুর এর গোরক্ষ নাথ মন্দিরের গীতা প্রেসে বেদ উপনিষদ এর অধ্যায়ন শুরু করেন।
অশোক সিংহ জি আরএসএস এর সাথে সম্পর্কে আসেন ১৯৪২ সালে বালাসাহেব দেওরাসের হাত ধরে। পরে গীতা প্রেস এ বেদ উপনিষদ অধ্যায়ন করা কালীন আরএসএস নেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ তথা রজ্জু ভাই এর নির্দেশে তিনি নাগপুরে সরসঙ্ঘচালক মাধবরাও গোলওয়ালকার এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। উনার সাথে সাক্ষাতের পরে অশোক জি সঙ্ঘের প্রচারক(বাড়ি ঘর ছেড়ে পূর্ণ সময় সঙ্ঘ কাজে সমর্পণ করা)জীবন শুরু করেন।১৯৭০ সালে জেপি আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হন।পরে তাকে দিল্লি প্রান্ত প্রচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপরে সঙ্ঘ ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর কাজ দেখার দায়িত্ব দেন,এবং ১৯৮১ সালে মিনাক্ষিপুর সম্মেলনের পরে তাকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়।পরে তিনি সর্বভারতীয় সভাপতি হন।
অশোক জি ১৯৮৪ সালের ৭ই এবং ৮ই এপ্রিল দিল্লির বিজ্ঞান ভবনের সন্তদের নিয়ে প্রথম ধর্ম সংসদ আয়োজন করেন।এবং সেই ধর্ম সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শ্রীরাম জন্মভূমিকে মুক্ত করবার জন্য আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।
এই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত একা অশোক সিংহল এর ছিলো,যা ধর্ম সংসদে সাধু-সন্তরা সমর্থন দেয়। তার আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রসঙ্গে যোজনায় রামমন্দির নিয়ে আন্দোলনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না, এমনকি এই আন্দোলনের উপর তৎকালীন বহু নেতৃত্বের কোন ভরসা ছিল না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় রাম মন্দির নিয়ে যখন প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্যাড পর্যন্ত ব্যবহার করেননি।
অশোকজী গো -গঙ্গা- গীতা- গায়েত্রী থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অভিমুখ সম্পূর্ণ রাম মন্দির দিকে নিয়ে চলে যান। অশোক জির যোজনার ফলেই প্রচারের আলো তে না থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর কথা সমগ্র সমাজ জানতে পারে। তার আগে সংঘের সাথে যুক্ত নয় এরকম খুব কম ব্যক্তি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কথা জানতেন। কিন্তু রাম জন্মভূমি আন্দোলনে নামার পর সমগ্র বিশ্ব জেনেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কথা। একটা সময় আন্দোলনের উপর সবার সেইভাবে ভরসা না থাকলেও পরে অশোক জির কথাই সংঘ পরিবারের শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায়, তার দেখানো রাস্তাতেই সঙ্ঘ যেতে বাধ্য হয়।
অশোক সিংহল জীর আন্দোলনের ফলেই বিজেপি সংসদে ২টি আসন থেকে ১২০টি আসন পায় এবং সর্বভারতীয় দলের মর্যাদা পায়। উত্তরপ্রদেশেও করসেবকদের উপর গুলি চলার পর নির্বাচনে বিজেপি সরকার গঠন করে মুখ্যমন্ত্রী হন কল্যান সিং। অশোকজী যেকোনো রাজনীতিতে যুক্ত হন নি, তিনি মানছেন ধর্মের থেকে বড় রাজনীতি হতে পারে না।১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাম মন্দিরের বিষয়কে দূরে সরিয়ে রাখলে অশোক সিংহল জি আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করেন,পরে অটলজি নিজে এসে উনার অনশন ভঙ্গ করেন।
অশোক জি ২০১৩ সালে এলাহাবাদ মহাকুম্ভ তে ধর্মসংসদে নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন ঘোষণা করেন। কারণ তার বিশ্বাস ছিল মোদি সরকার আসলে রাম মন্দির অবশ্যই হবে।

অবশেষে ১৭ই নভেম্বর ২০১৫ তে হিন্দু হৃদয় সম্রাট অশোক সিংহল জি ইহলোক ত্যাগ করেন।

আজ তার মৃত্যুর সরে চার বছর পরেই রামজন্মভূমি এর ভূমিপুজন হচ্ছে আজকের দিনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.