ভারত কী করছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই এক পক্ষের, আর অন্য পক্ষ চাইছে, চিনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি যেন ভারতকে বাদ দিয়ে না হয়। রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নিয়ে এখন দ্বিধাবিভক্ত সংশ্লিষ্ট দেশগুলি।
চিনের হয়ে মুখ খুলেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথির বিন মহম্মদ। কাশ্মীর নিয়ে আগেই তিনি ভারতকে বিঁধেছিলেন, এবার তিনি আমেরিকার বাণিজ্যিক আগ্রাসন প্রসঙ্গ তুলেছেন। সূত্রের খবর, মহাথির বলেছেন, আমেরিকা এখন তাদের আক্রমণাত্মক বাণিজ্যিক নীতি প্রয়োগ করতে চাইছে আসিয়ান ব্লকের উপরে। নিজেদের দেশের রফতানিকারীদের কথা ভেবে প্রতিটি দেশকে আলাদা ভাবে তারা নিশানা বানাচ্ছে। তাঁর সাফ কথা, এই সময় এশিয়ার দেশগুলিকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তার জন্য যদি চিনের অর্থনীতির কাছাকাছি আসতে হয়, তা হলেও।
মালয়েশিয়া যখন ভারতকে গুরুত্ব দিতে রাজিই নয়, তখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও অন্য দেশগুলি কোনও মতেই ভারতকে বাদ দিতে রাজি নয়। ২০১২ সালে নম পেনে আরসিইপি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই গোষ্ঠীতে রয়েছে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত ১০টি দেশ: ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং মুক্তবাণিজ্য গোষ্ঠীভুক্ত ছয় দেশ: ভারত, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “আরসিইপির সদস্য দেশগুলির মধ্যে যে আলোচনা চলছে সেই আলোচনা থেকে যাতে ব্যাপক ও ভারসাম্যযুক্ত ফল পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে ভারত দায়বদ্ধ। এই বৈঠককে ফলপ্রসূ করার পিছনে প্রতিটি দেশেরই স্বার্থ রয়েছে। তাই ভারত চাইছে পণ্য, পরিষেবা ও বিনিয়োগের মতো প্রতি স্তম্ভেই যেন ভারসাম্য থাকে।” আসিয়ান এবং আরসিইপির বৈঠকে যোগ দিতে এখন ব্যাঙ্ককে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই অবস্থায় যদি সদস্য দেশগুলি মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারে, তা হলে আলোচনা এখনও চলতে থাকবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভারত জানিয়েছে, দেশের বিশাল বাজার খুলে দেওয়ার আগে নয়াদিল্লি নিশ্চিত করতে চায়, ভারতও যাতে একই রকম সুবিধা ভোগ করতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টিও চিন্তায় রেখেছে ভারতকে।
জাপানের একটি নিউজ চ্যালেন জানিয়েছে, চিনের সস্তার পণ্য যাতে ভারতের বাজারে আরও বেশি করে ঢুকে না পড়ে সে জন্য বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর থেকে আমদানি শুল্ক বাতিল করতে ভারত রাজি নয়।
আরসিইপি ভুক্ত দেশগুলিকে এখন বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করে চিন। তাই চুক্তি হোক বা না হোক, চিনের কোনও ক্ষতি নেই। অবশ্য এখন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে নিশানা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাকেই রুখতে চাইছে মালয়েশিয়া।
কূটনৈতিক মহল আগেই জানিয়ে রেখেছিল যে ভারত যদি রাজি হয়ে যায় তা হলে সোমবারই সই হয়ে যাবে এই চুক্তি। যদিও এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এই চুক্তি সই হওয়া দূর অস্ত্। ভারতকে এই চুক্তিতে সামিল করার পক্ষে রয়েছে বেশিরভাগ দেশই। সূত্রের খবর, আরও কয়েক মাস এ নিয়ে আলোচনা চলবে এবং আসিয়ান ও এফটিএ ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তি সই হতে পারে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে।