ঠিক যেন সব্যসাচী। একদিকে পেশায় আইনজীবী। সেইসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। অবশ্য এ সবের বাইরেও একটা পরিচয় ছিল ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির। ক্রিকেট ভালোবাসতেন তিনি। শুধু ভালোবাসা নয়, চাইতেন ক্রিকেটের প্রশাসনে থাকতে। আর তাই তো দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদে ছিলেন দীর্ঘ ১৪ বছর। হয়েছিলেন বিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন জেটলি।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর শনিবার দিল্লির এইমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন জেটলি। রাজনৈতিক মহল থেকে দল নির্বিশেষে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকে। তবে শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, জেটলি শ্রদ্ধা পেয়েছেন খেলার জগত থেকেও। বিশেষ করে দিল্লিওয়ালাদের কাছে তিনি ছিলেন গডফাদার। দিল্লির ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে আনার পিছনে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম।
জেটলির মৃত্যুর পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আকাশ চোপড়া, গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। আকাশ চোপড়া যেমন বলেছেন, দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটারদেরও নামে চিনতেন জেটলি। তৃণমূল স্তর থেকে দিল্লির ভালো ক্রিকেটার তুলে আনার চেষ্টা করতেন। সত্যিই তো তাঁর সময়েই রাজধানী থেকে ভারতের হয়ে খেলছেন আকাশ, সেহওয়াগ, গম্ভীররা।
টুইট করে সে কথা স্বীকারও করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনার বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। তিনি টুইটে লেখেন, একটা সময় ছিল, যখন দিল্লি থেকে খুব বেশি ক্রিকেটার ভারতীয় দলে সুযোগ পেত না। কিন্তু তাঁর সময়ে এটা বদলেছিল। শুধুমাত্র দক্ষ প্রশাসকই নন, ক্রিকেটটা বুঝতেন জেটলিজি। আর তাই তাঁর সময়ে দিল্লি থেকে একাধিক ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছে।
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বর্তমানে বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীরও জেটলিকে সম্বোধন করেছেন ফাদার ফিগার হিসেবে। গম্ভীর বলেন, একজন ফাদার ফিগার আপনাকে চলতে শেখায়, স্বপ্নের পিছনে দৌড়তে শেখায়। অরুণজি ছিলেন দিল্লি ক্রিকেটের সেই ফাদার ফিগার।
তবে এই ডিডিসিএ সভাপতি থাকার সময়েই শেষদিকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল জেটলির বিরুদ্ধে। তাই বাধ্য হয়েই ১৯৯৯ থেকে ২০১৩, দীর্ঘ ১৪ বছর পর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে আসেন জেটলি। কিন্তু তারপরেও ফিরোজ শাহ কোটলাতে একাধিক ম্যাচে দেখা গিয়েছে অরুণ জেটলিকে।
শুধু মাত্র দিল্লি ক্রিকেট নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক জগতেও প্রাক্তন এই অর্থমন্ত্রী ছিলেন এক বড় নাম। স্পট ফিক্সিং-এর কালিমায় যখন ভারতীয় ক্রিকেট স্তব্ধ সেই সময় দক্ষ হাতে তাকে সামলেছেন তৎকালীন বিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অরুণ জেটলি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও আপস করেননি তিনি। তৎকালীন আইপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লর সঙ্গে মিলে কড়া আইন নিয়ে এসেছিলেন জেটলি। যার জন্য শ্রীসন্থ, গুরুনাথ মাইয়াপ্পন-দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল আইপিএল কমিটি।
ভারতের রাজনীতির মতোই ভারতীয় ক্রিকেটও প্রশাসক হিসেবে অরুণ জেটলির গুরুত্ব ভুলবে না। কারণ একদিকে তিনি যেমন ছিলেন জহুরি, অন্যদিকে তেমনই শক্ত হাতে হাল ধরতে পারা কাণ্ডারি। ছিলেন গডফাদার।