বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গকে ভিত্তি করে দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গি তৎপরতা বাড়িয়ে নিতে সোশ্যাল সাইটে জোর দিয়েছে আল কায়েদা জঙ্গি সংগঠন। চলছে জনমত গঠনে প্রচার। প্রাথমিকভাবে নাশকতা ঘটানো নয়, বরং ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমত গঠন করে বিরাট আকারে জিহাদ-এর পথ নিয়েছে তারা।
বাংলাদেশের জঙ্গি দমন শাখা সিটিটিসি খতিয়ে দেখছে আল কায়েদাপন্থী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ। এতে উঠে এসেছে, এই সংগঠনটি বাংলাদেশের জন্য আগামী সময়ে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে, আনসার আল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়েছে। তবে সেখানে তারা সংগঠনের পুরনো নাম অর্থাৎ আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) নামেই কাজ চালাচ্ছে। সম্প্রতি এবিটি জঙ্গিদের কয়েকজন পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র চালানের সময় ধরা পড়ে।
আর বাংলাদেশে আনসারুল্লা বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর, তারা নতুন নাম নেয় আনসার আল ইসলাম। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি) যে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে তাতে উঠে এসেছে, আল কায়েদাপন্থী আনসার আল ইসলাম জনগণকে জড়িয়ে নিয়েই জিহাদ শুরু করতে চায়। এই কাজে তারা ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আনসার আল ইসলাম সংগঠনটির অনলাইন ফোরামে সক্রিয় প্রায় তিনশো সদস্য। জনপ্রিয় ও বিতর্কিত ইস্যুর আলোচনা উস্কে দিয়ে তারা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কর্মী সংগ্রহের চেয়ে সমর্থক সংগ্রহে তাদের আগ্রহ বেশি। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করছে তারা। এতে না বুঝেই অনেকে অংশ নিচ্ছেন। ক্রমাগত সেই প্রচারের ধাক্কায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্যকেই সত্যি বলে মনে করছেন অনেকে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট বলছে, আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য, ২০১৪ সালে আল কায়েদা বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারে উপস্থিতির কথা ঘোষণা করে। আল কায়েদা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের (এআইকিউএস) অংশ হিসেবে তখন থেকে কাজ শুরু করে আনসার আল ইসলাম (পূর্বতন আনসারুল্লা বাংলা টিম)। যুক্তিবাদী ব্লগারদের খুনে জড়িত এই সংগঠন। পরে তারা পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন ছড়াতে মনোযোগ দেয়।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির তালিকা হল-
১.হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি–বি)
২,জামাত উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং তাদেরই ভেঙে যাওয়া আইএসপন্থী জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি
৩.জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি
৪.শাহাদৎ ই আল হিকমা
হিযবুত তাহরীর
৫.আনসার আল ইসলাম (পুরনো এবিটি)
গোয়েন্দা বিভাগের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই সংগঠনগুলোর মধ্যে জেমবির নতুন ও পুরোনো অংশ, আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহ্রীর সক্রিয়। তবে পরিধি বিস্তারে এগিয়ে আনসার আল ইসলাম।
২০১৬ সালে ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলায় জড়িত ছিল নব্য জেএমবি। কিন্তু আনসার আল ইসলাম সেই পদ্ধতি নেয়নি। তারা গ্রহণ করেছে, গোপনে নিজেদের প্রসার ঘটানো।