কর্নাটকের উইস্ট্রনের আইফোন উৎপাদন কারখানায় কিছুদিন আগে মোবাইল তৈরির প্ল্যান্ট ধ্বংস, লুটপাট, আগুন লাগানো ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হয়। কর্ণাটক পুলিশ ঘটনার পর দিন শনিবার ভোরে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কারনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি-র ছাত্র সংগঠন – স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (SFI) র স্থানীয় প্রেসিডেন্ট ‘কমরেড শ্রীকান্ত’ কে গ্রেপ্তার করেছে। যে কলার এসএফআইয়ের তালুক সভাপতি ছিল। কলার পুলিশ নৃশপুরায়, ভাঙচুর করার অভিযোগে তাকে আটক করেছিল।
জানা গেছে, উইস্ট্রন এবং এসএফআইয়ের কর্মীরা 12 ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় কলার কালেক্টর সত্যভামার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, শ্রীকান্ত হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে কর্মীদেরকে উস্কানি দিয়ে এই ভাঙচুর করেছিল অর্থাৎ এই ঘটনায় এটাই প্রকাশ পায় কমরেড শ্রীকান্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু কর্মীদের উস্কানি দিয়ে আহ্বান করে এই ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়ে তাকে প্রতিবাদ এর নাম দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
কলারের পুলিশ এর তথ্য অনুযায়ী, শ্রীকান্ত বেশ কয়েকজন এসএফআই কর্মীকে প্ররোচিত করেছিল 12 ডিসেম্বর সকালে উইস্ট্রনের চত্বরে প্রবেশ করে প্ল্যান্টে ঘটে যাওয়া ভাঙচুরে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য ।
“শ্রীকান্তকে সহিংসতায় প্ররোচিত করার জন্য এবং প্ল্যান্টে ভাঙচুর করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল,” পুলিশ জানিয়েছে।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কমিউনিস্ট পার্টি-সম্পর্কিত ট্রেড ইউনিয়নগুলি হামলার পক্ষ নিয়ে দাবি করেছে যে, বেতন পরিশোধ না করার জন্য এই ভাঙচুর হয়েছে। কৃষ্ণ সিদ্ধি, যিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন, বলেছিলেন যে ওভারটাইমের করে বেতন সঠিক ভাবে দিচ্ছে না তাই এই বিক্ষোভ, কিন্তু কমিউনিস্ট অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়নগুলির দাবির বিপক্ষে, কর্ণাটকের শ্রম বিভাগ দৃঢ় ভাবে জানিয়েছিল যে সংস্থাটি নিয়মিতভাবে তাদের কর্মীদের বেতন দিচ্ছে এবং একটি সফ্টওয়্যার এর কারণে এই মাসে মাত্র চার দিনের বিলম্ব হয়েছে বেতন দিতে।
এই সামান্য কারনকে ভিত্তি করে শনিবার কয়েক শত শ্রমিকরা তাণ্ডব চালিয়ে কোটি কোটি টাকার সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্থ করে। পরে সংস্থার কর্মকর্তারা এফআইআরটি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, পুলিশ কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি বলে জানিয়েছে।
সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা হল ভারতের কমিউনিস্টদের দ্বারা এই আইফোন কোম্পানিতে ভাঙচুরের ঘটনার সাথে চীনের দেওয়া হুমকির সাদৃশ্য দেখা যায়। যেমন- চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও তাদের উৎপাদন ইউনিটগুলি চীন থেকে ভারতে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত। যেসব সংস্থা চীন থেকে ভারতে আসছে সেই সব সংস্থাগুলিকে হুমকি দিতে পিছুপা হয়নি চীন।
কর্ণাটকের কলারে কর্মচারী এবং কমিউনিস্ট অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়নগুলি, অ্যাপলের চুক্তি প্রস্তুতকারক উইস্ট্রন ইন্ডিয়া প্ল্যান্টে ভাংচুর করার ঠিক কয়েকদিন পরে, দেশের বাইরে চলে যাওয়া সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সমস্যা তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগ করে চীনের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়।
চীনের গ্লোবাল টাইমসের কমিউনিস্ট পার্টির চিফ রিপোর্টার চিংকিং চেন বলেছিলেন, যে ভারতে উইস্ট্রনের প্ল্যান্ট ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এর থেকেই প্রমাণিত, ভারতের কারখানা স্থাপন করার জন্য চীন ছেড়ে আসা সংস্থাগুলির পক্ষেও এটি একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি বলে মনে হয়।
কর্নাটকে এসএফআই (SFI) দ্বারা অ্যাপল কোম্পানিতে ভাংচুরের ঘটনায় কোথাও না কোথাও ভারতীয় কমিউনিস্টদের, চীনের কমিউনিস্টদের প্রতি একটি অদ্ভুত আত্মীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় অর্থাৎ চীনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা যেন ভারতের বামপন্থী দল গুলো যথাসাধ্য ভাবে পূরন করবেই। এই ঘটনার দ্বারা প্রকাশ পায় চীন আমাদের ভারতবর্ষের ক্ষতির প্রয়াস সব সময় বর্ডারে না এসেও বা ভারতের মধ্যে প্রবেশ না করেও করতে পারে অর্থাৎ নিশ্চিন্তে ভারতের কমিউনিস্ট আত্মীয়দের ওপর কমিউনিস্ট চীন নির্ভর করতে পারে।
চীনের প্রয়াসকে সফল করার জন্য ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির চেষ্টা করে চলেছে যেন চীন থেকে কোনো কোম্পানি ভারতবর্ষে লগ্নী না করতে পারে। এই ভাবে দিনের পর দিন বৃহৎ কোম্পানি গুলোয় বাম ইউনিয়নের সদস্যরা বেকার ইস্যু তৈরী করে ভাঙচুর করে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে কোম্পানি গুলোকে এটাই বোঝবে যে তারা কতটা অন্যায় করেছে ভারতবর্ষে লগ্নী করে। ঠিক এভাবেই চাপ সৃষ্টি করলে সমস্ত কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার চীনের প্রতি আকৃষ্ট হবে, এটিই ভারতীয় কমিউনিস্ট ও কমিউনিস্ট চীনের মনের বাসনা। কমিউনিষ্ট চীনের হয়ে হয়ে তাদের শাখা-প্রশাখা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি অনবরত এই কন্সপিরেসি খেলা করে ভারতবর্ষের পরিকাঠামো নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর।।
©অতনু লাহা