করোনা নিরাময়ে অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি ভারতেও যথেষ্ট ফলপ্রসূ, প্রয়োগের ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হচ্ছেন রোগী

ভারতে কোভিড নিরাময়ের উপায়ে নতুন সংযোজন অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিডের বিরুদ্ধে চলছে ওষুধ সংস্থা ‘রোশ ফার্মা’-র মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল ট্রিটমেন্ট। এই অ্যান্টিবডির একটি ডোজ স্বল্প থেকে গুরুতর ভাবে আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলছে খুব শীঘ্রই।

ইতিমধ্যে হায়দ্রাবাদ, দিল্লী এবং মুম্বাইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে এই অ্যান্টিবডি প্রয়োগের দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোভিড নিরাময়ের জন্য এই অ্যান্টিবডি ককটেল ব্যবহৃত হলে এই থেরাপি চর্চায় আসে এবং ভারতেও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

স্যুইজারল্যান্ডের ওষুধ সংস্থা ‘রোশ ফার্মা’-র এই অ্যান্টিবডি ৬০০ গ্রাম ক্যারিসিভিম্যাব এবং ৬০০ গ্রাম ইমডিভিম্যাব মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সংমিশ্রনে তৈরী। উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৫-৭ দিনের মধ্যেই এই ওষুধ প্রয়োগ করলে মিলবে ভালো ফলাফল, দাবি সংস্থার
হায়দ্রাবাদের এশিয়া ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি হাসপাতালে ৪০ জন কোভিড আক্রান্তের ওপর এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়। হাসপাতালের চেয়ারপার্সন ডা. নাগেশ্বর রেড্ডি জানান, অ্যান্টিবডি প্রয়োগের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তাদের জ্বর, কাশি, অস্বস্তিবোধের মত নানা উপসর্গগুলি নিরাময় হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর আবার পরীক্ষা করা হলে, ৪০ জন রোগীর মধ্যে কারোর দেহেই করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন ডা. রেড্ডি।

ইউকে, ব্রাজিলের পর এবার ভারতে পাওয়া ডেল্টা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানী দিল্লী এবং মুম্বাইয়েরও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে বেশ কিছু আক্রান্তের চিকিৎসায় এই অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে সেখানকার চিকিৎসকরাও একই মতামত দিয়েছেন। তাদের মতে, এই ওষুধ রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উপযোগী ফলে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে।
তবে তারা এও দাবি করেন, যতই কার্যকরি হোক না কেন এই ওষুধের ভুল এবং অত্যাধিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুবা কোভিডের নতুন মিউটেন্ট উদ্ভাবনের সম্ভাবনা প্রবল হবে। তাই চিকিৎসক এবং এমারজেন্সি ইউজ অর্গানাইজেশনের নির্দেশেই এটি ব্যবহার করা উচিত।
এই অ্যান্টিবডি ভারতে ট্রায়াল না হলেও বিশ্বব্যাপী ৪ হাজার ৫৬৭ জনের ওপর ৩ ধাপে ট্রায়াল করেছে ওষুধ সংস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে আপাতকালীন ব্যবহারে ছাড় পাওয়ার পর ভারতও ছাড় দেয়। সেন্ট্রাল ড্রাগস কন্ট্রোলার অর্গানাইজেশন ভারতে আপাতকালীন ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

ভারতে এই ওষুধ বিপননের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওষুধ সংস্থা সিপলা ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ প্যাকের জোগান দিয়েছে। জুন মাসে আরও প্যাক আসবে বলে সূত্রের খবর। প্রতিটি ওষুধের দাম রাখা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭৫০ টাকা। একটি প্যাকে দুজন রোগীর চিকিৎসা হবে বলে জানিয়েছে দুই ওষুধ সংস্থা।
প্রসঙ্গত, গত বছর অক্টোবরে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোভিড আক্রান্ত হলে চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এই অ্যান্টিবডি ককটেল এবং আশানুরূপ ফলাফল মেলায় আপাতকালীন ব্যবহারের অনুমতি পায় ওষুধ সংস্থা। দেশে সম্প্রতি টিকাকরন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে এই ওষুধ সরকার, চিকিৎসক তথা সমস্ত দেশবাসীর উদ্বেগকে সামান্য হলেও লাঘব করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.