লোকসভার পর অবশেষে এ বার রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট ( ইউএপিএ ) সংশোধনী বিল। এর ফলে দল নয়, ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়া যাবে। এনআইএ চাইলে রাজ্য পুলিশকে না জানিয়েই সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। রাজ্যসভায় এই বিল পাশের পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সই করলেই এই বিল আইনে পরিণত হবে।
এ দিন রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিলে সংশোধনী আনেন। এই সংশোধনী আনতে গেলে দরকার ছিল ভোটাভুটির। তার আগে অমিত শাহ বলেন, “সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীর কোনও ধর্ম হয় না। এরা মানবিকতার বিরোধী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনতে হলে তাতে দল নির্বিশেষে সবার সমর্থন জানানো উচিত।” ভোটাভুটির পর দেখা যায় রাজ্যসভার ২৪২টি ভোটের মধ্যে সংশোধনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪৭ জন। বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৪২টি। বাকিরা ভোটদান থেকে বিরত থেকেছেন।
লোকসভায় সহজেই এই সংশোধনী পাস করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু কংগ্রেস এই বিলের বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য, এই বিল পাশ হলে বিরোধীদের গায়েও সন্ত্রাসবাদীর তকমা এঁটে দিতে পারে সরকার। আইনের অপব্যবহারের কথা তুললেও রাজ্যসভায় কিন্তু এককাট্টা হতে পারলেন না বিরোধীরা। ফলে বিজেপির মাত্র ১০৭ সাংসদ থাকা সত্বেও তারা ভোট পেল ১৪৭টি। অর্থাৎ বিরোধীদের অনেকেই এই বিলের সমর্থনে ভোট দিয়েছেন।
১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই ভারতের সংবিধানে আনা হয়েছিল এই ধারা। তবে এতদিন পর্যন্ত কোনও সংগঠনকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার অধিকারই ছিল এই বিলে। সেটাই এ দিন বদল হলো।
তবে এ দিন রাজ্যসভাতেও এই বিলের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস। বর্ষীয়ান নেতা এম এ চিদম্বরম অভিযোগ তোলেন, বিলের সংশোধনীর ৫ ও ৬ নম্বর ধারা নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, কখন এবং কোন ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত করে বলা নেই এই বিলে। চিদম্বরমের জবাবে অমিত শাহ বলেন, “আপনারা আইনের অপব্যবহারের কথা বলছেন? নিজেদের অতীত দেখুন। জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেস সংবাদপত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সব বিরোধী নেতাদের জেলে ভরেছিল। ১৯ মাস দেশে কোনও গণতন্ত্র ছিল না। তারপরেও আপনারা আইনের অপব্যবহারের কথা বলেন।”
চিদম্বরম আরও প্রশ্ন করেন, যখন বেশিরভাগ জঙ্গি সংগঠনই নিষিদ্ধ, তখন এই আইনের কী দরকার? তার উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অনেক জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ার পর জঙ্গিরা অন্য সংগঠনের নাম নিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করে। কতগুলো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবো আমরা।”
শাহ আরও জানিয়েছেন, “আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই আইনের অপব্যবহার হবে না। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীদের রোখার জন্যই আনা হয়েছে এই সংশোধনী। কাউকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার আগে চার স্তরীয় চেকিং করা হবে। কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না। কিন্তু যখন একাধিক জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে, তখন ব্যক্তিগত কাউকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার আইন থাকা খুবই জরুরি।”
জানা গিয়েছে, এনআইএ সব তদন্তের দায়িত্বে থাকবে। কাউকে জঙ্গি ঘোষণা করা হবে কিনা, তার আগে এনআইএ-র পরামর্শ নেবে স্বরাষ্টমন্ত্রক। তবে এখনও এই বিলে সন্তুষ্ট নয় কংগ্রেস। চিদম্বরম জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।