অনীক দত্ত ও কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব বিতর্ক এবারও। তবে নয়া মোড়কে। ২৫তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে তালিকাভুক্ত হয়েও অনীক দত্ত পরিচালিত ছবি ‘বরুণবাবুর বন্ধু’র জায়গা হল না মূল উৎসব প্রাঙ্গণে। অর্থাৎ কিনা নন্দন চত্ত্বরের হলগুলিতে দেখানো হচ্ছে না অনীকের ছবি। সেটিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে। যদিও বেঙ্গলি প্যানোরমার বাকি সব ছবি দেখানো হবে নন্দন চত্ত্বরের হলগুলিতেই। উল্লেখ্য, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে এমনটা কোনোকালে ঘটেনি। একটি বিভাগের একটি ছবিকে আলাদা করে ‘দ্বীপান্তরে’ পাঠিয়ে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব! আর এখানেই ‘ভূতের ভবিষ্যতে’র পরিচালক প্রশ্ন, এমন কেন হবে? কী কারণে? গোটা ঘটনা জানিয়ে অনীক তাঁর ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্টও করেছেন। পরিচালকের বক্তব্য, ”নন্দন চত্ত্বর হল মূল উৎসব প্রাঙ্গণ, সেখানেই চলচ্চিত্র প্রেমীদের আনাগোনা। তাছাড়া দেশ-বিদেশি ডেলিগেটসরাও নন্দন ১, ২, শিশির মঞ্চ কিংবা রবীন্দ্রসদনেই ছবি দেখতে অভ্যস্ত। এর একাধিক কারণ রয়েছে।
প্রথমত, চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলিকে এই হলগুলিতেই দেখানো হয়ে থাকে। পাশপাশি নন্দন চত্ত্বর শহরের প্রাণকেন্দ্রে। যাতায়াতের সমস্যা নেই।” সোস্যাল মিডিয়ায় অনীক জানাচ্ছেন, ”আগামী ৯ তারিখ আমার ছবি কোথায় দেখানো হচ্ছে তা বন্ধুদের জানাতে গিয়ে বুঝতে পারছি রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনের নামই শোনেননি অনেকে।” সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ”অন্য বাংলা ছবিগুলি যখন রবীন্দ্রসদন-নন্দন চত্ত্বরে প্রদর্শিত হচ্ছে তখন একটি ছবির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন?”
উৎসব কর্তৃপক্ষ এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। উত্তর চেয়ে অনীকের প্রযোজক মেল করেছিলেন কমিটিকে। এরপর ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর পরিচালক দেখা করেন ফেস্টিভেল ডিরেক্টরের সঙ্গেও। সব শুনে মূল প্রাঙ্গণে ছবিটির দ্বিতীয় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। যদিও অনীকের দাবি—একবারই দেখানো হোক, কিন্তু অন্য ছবিগুলির সঙ্গে এক হলে।
পরিচালকের এই বক্তব্যের পর তেমন বন্দোবস্ত করা যায় কিনা দেখবেন বলে জানান ফেস্টিভেল ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ”আমি জানি না, এটা কী হল!” গতবার মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে মুখ খোলার জন্যই কি? বিতর্কে যেতে চাননি অনীক। তাঁর বক্তব্য, ”সেটা অন্যরা বলতে পারবে। তবে আমার ছবিটিকে রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন ঠেলে দেওয়ার যে কারণ দেখানো হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য না।” অভিযোগ জানানোর পর উৎসব কমিটি থেকে কোনও ফোন পেয়েছেন? অনীক জানান, ”না। নিজেও ফোন করেছি। ফোন নট অ্যাভেলেবল। খবর নিতে লোকও পাঠিয়েছি, দেখা যাক কোনও সংবাদ মেলে কিনা।”
৯ নভেম্বর সন্ধে ৬টা খুব দূরে নয়। বোঝাই যাচ্ছে, অনীকের ছবি মূল প্রাঙ্গণে ফিরছে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বঙ্গ চলচ্চিত্র ও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য সোজাসাপটা। তাঁদের দাবি, অনীক দত্তের সঙ্গে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। সেবার তাঁর ‘ভবিষ্যতের ভূত-এর প্রদর্শনও তো বন্ধ হয়ে গেল অজ্ঞাত কারণে। তারপর কোর্টকাচারি করে হলে ফিরল ছবি। এর জন্য অনীক নিজেই দায়ী। সেই যে তিনি গতবার, ২৪তম চলচ্চিত্র উৎসবের সময় মুখ্যমন্ত্রীর এত ছবি কেন উৎসব প্রাঙ্গণে বলে ‘যুদ্ধ’ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন, সেই ‘যুদ্ধে’র আঁচেই পুড়েছে ‘ভবিষ্যতের ভূত’। অনীক দত্তের ‘বরুণবাবু বন্ধু’কেও একই কারণে রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে পাঠিয়ে ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে।