চাষের জমি ফালাফালা। তেষ্টায় গলা কাঠ। বর্ষায় মুম্বই ভাসলেও মহারাষ্ট্রের বাকি প্রান্ত যেন ঝলসে গেছে রোদের তেজে। বিদর্ভের ভূমি যেন মৃত্যু উপত্যকা। প্রায় জলশূন্য বাঁধ ও জালাধারগুলো যেন দাঁত বার করে পৈশাচিক হাসি হাসছে। জলের তোড় কমে যাওয়ায় বহু যুগ ধরে চাপা পড়া মন্দিরগুলো একটু একটু করে জেগে উঠছে। এক সময় বাঁধ ভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল যে ঘরবাড়ি, তাদের কঙ্কালও ভেসে উঠে আগাম মৃত্যুর পরোয়ানা পাঠাচ্ছে।
বৃষ্টির ঘাটতির আশঙ্কায় দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। তীব্র জলসঙ্কট। ট্যাঙ্কারে জল পাঠাতে হচ্ছে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, মরাঠাওয়াড়ায়। ওয়ার্ধা বাঁধ প্রায় জলশূন্য। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, মাত্র ১২ শতাংশ জল অবশিষ্ট রয়েছে বাঁধে। অমরাবতীর এই ওয়ার্ধা বাঁধ এলাকাতেই বছর কয়েক আগে জলের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল একটি প্রাচীন মন্দির। বাঁধের জল নেমে যাওয়ায় ফের সেই মন্দিরের চূড়া ভেসে উঠছে জলের উপরে।
একই দশা জায়াকওয়াড়ি বাঁধ এলাকাতেও। মারাঠাওয়াড়ার পানীয় জলের অন্যতম উৎস এই বাঁধের জলের পরিমাণ বর্তমানে ৬ শতাংশ। জারি হয়েছে সতর্কবার্তা। মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি খরা কবলিত এলাকা গুলির মধ্যে রয়েছে বিদর্ভ ও মারাঠাওয়াড়া। বছর বছর খরার প্রকোপ দেখা দেয় বিদর্ভে। শয়ে শয়ে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। চলতি বছরে মারাঠাওয়াড়ার অবস্থা খুবই করুণ। তৃষ্ণার্ত গ্রামবাসীদের জলের চাহিদা মেটাতে পাঠানো হয়েছে তিন হাজার ট্যাঙ্কার। মারাঠাওয়াড়ার ঔরঙ্গাবাদা ও বিডের গ্রামবাসীরা জলভর্তি ট্যাঙ্কারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
সূত্র বলছে, মহারাষ্ট্রের ৩৫৩টি তালুকের মধ্যে ২৭৫টিতে প্রায় জলশূন্য দশা। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জলকষ্টে ভুগছেন। পশ্চিম মহারাষ্ট্রে শোলাপুরের অবস্থা ভয়ানক। আরও ২৭৫টি গ্রামে খরা মারাত্মক আকার নিয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর মহারাষ্ট্রে ৩৬ শতাংশ গ্রীষ্মকালীন ফসল কম রোপণ হয়েছে। টানা চার বছরের খরায় কর্নাটকের চাষিরা হাহাকার করছেন। সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানাতেও। মহারাষ্ট্রের বহু জলাধারের মোট ধারণক্ষমতার ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অনাবৃষ্টির ফলে ক্রমশ কমছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারও।