দেশে কোনও জাতীয় সুরক্ষা নীতি ছিল না, মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর সুরক্ষানীতি তৈরি হয়েছে, দাবি অমিত শাহের

আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত একেবারে নিশ্ছিদ্র করে ফেলা হবে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিএসএফের একটি অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত দেশে কোনও জাতীয় সুরক্ষা নীতি ছিল না। ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই বিস্তারিত সুরক্ষা নীতি তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে পশ্চিম সীমান্ত অনেকাংশে সুরক্ষিত হলেও পূর্ব সীমান্তের একটি বড় অংশ এখনও অরক্ষিত। এটি দেশের সুরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। ২০০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্তে দেড় কিলোমিটার এলাকায়ও যদি কাঁটাতারের বেড়া না থাকে তা হলে গোটাটাই অর্থহীন হড়ে পরে বলে মনে করেন অমিত শাহ।

কেন্দ্র সরকার সেইসব ফাঁকা জায়গাগুলি চিহ্নিত করে সীমান্তকে কিভাবে সুরক্ষিত করা যায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসন ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শাহ বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য আগামী বছরের মধ্যে পূর্ব-পশ্চিম সীমান্তকে সুরক্ষিত করা। সীমান্ত অসুরক্ষিত থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। পূর্ব পশ্চিম সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে এমন কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে যা কোনোভাবেই কাটা সম্ভব নয়। তার কথায়, “নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগে দেশে কোনও স্বাধীন জাতীয় সুরক্ষানীতি ছিল না। সুরক্ষানীতি কে প্রভাবিত করত বৈদেশিক নীতি। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় আসার পরে যে নীতি নেওয়া হয় তাতে ঠিক হয় ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলবে ঠিকই, কিন্তু কেউ যদি ভারতের সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়, যদি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিপদ দেখা যায়, তাহলে সে বিদেশি শক্তিকে তাদের ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে”।

এই ইটের বদলে পাটকেল নীতি কোনও দেশের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে তার নাম অবশ্য প্রকাশ্যে বলেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু তিনি বলেন,আমি কাদের কথা বলছি তা সবাই বুঝতে পারছেন। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নে মোদী সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন শাহ।

তাঁর কথায়, সীমান্ত এলাকাগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আধাসেনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। সীমান্তের পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে তবে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের পলায়ন বন্ধ করা সম্ভব হবে, তখনই সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে।

অন্যদিকে গত এক বছর ধরে পশ্চিম সীমান্তের ওপার অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে ড্রোন উড়ে আসার মত বিপদ বেড়েছে। পাঞ্জাব জম্মুতে সীমান্ত সুরক্ষায় থাকা বিএসএফ গত এক বছরে ৬১টি ড্রোনকে চিহ্নিত করেছে যেগুলি সীমান্তের ওপার থেকে উড়ে এসেছে। সাম্প্রতি জম্মু বিমান বন্দরের ওপর উড়ে আসা ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে যার পেছনে পাক মদদপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে রয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসছে।

ড্রোন সমস্যা নিয়ে অমিত সাহ বলেন, ড্রোন থেকে বিপদ ঘটার আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিআরডিও এবং অন্যান্য সংস্থা ড্রোন আটকানোর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। খুব দ্রুত ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে সীমান্তে ড্রোন আটকে দেওয়া সম্ভব হবে।

তবে শুধু ড্রোন নয় পশ্চিম সীমান্তে সুরঙ্গও চিন্তা বাড়িয়েছে সীমান্তরক্ষীদের। জম্মু-কাশ্মীরে সীমান্ত এলাকায় একাধিক সুরঙ্গের খোঁজ পেয়েছে বিএসএফ। সুরঙ্গগুলির একটি মুখ পাকিস্থানে অন্যটি ভারতে। ফরেনসিক সমীক্ষায় দেখা গেছে ঐ সুরঙ্গ ব্যবহার করে যাতায়াতও চলেছে। এই সুরঙ্গগুলি ব্যবহার করে জঙ্গি ও মাদক পাচারকারীরা যাতে যাতায়াত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.