অবশেষে দলের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহর যোশীর সঙ্গে দেখা করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। উনিশের লোকসভার আগে সোমবার দলের ইস্তাহার প্রকাশ করা হলো দিল্লিতে। ইস্তাহার প্রকাশের পরেই এই দুই প্রবীণ নেতার সঙ্গে দেখা করেন শাহ। দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন এই দুই প্রবীণ নেতা। প্রকাশ্যে তা বলেওছিলেন দুজনে। এই বিষয় নিয়ে বিরোধীরা বারবার আক্রমণ করছিল শাসক দলকে। আর তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব, এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক ছিল দলীয় ইস্তাহার প্রকাশের আগেই এই দুই নেতার সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে ইস্তাহারের কপি তুলে দেবেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে এও জানা গিয়েছিল, দলের দুই প্রবীণ নেতার সঙ্গে ইস্তাহারের ব্যাপারে নাকি কথাও বলবেন তিনি। কিন্তু পরে জানা যায়, ইস্তাহার প্রকাশের পরেই আডবাণী ও জোশীর সঙ্গে দেখা করেন শাহ। সূত্রের খবর, দুই নেতার সঙ্গে দেখা করে বিজেপি সভাপতি তাঁদের বোঝান, কেন ৭৫ বছরের বেশি বয়সী নেতাদের প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, চাপে পড়েই এই দুই নেতার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ। বিজেপির দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ২০১৪ সাল পর্যন্ত দলের সাংসদ ছিলেন। কিন্তু এ বছর লোকসভার টিকিট দেওয়া হয়নি দুজনকেই। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থী চাইছে না বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব। আডবাণীর ছ’দফার লোকসভা কেন্দ্র গুজরাতের গান্ধীনগরে এ বার প্রার্থী হয়েছেন বিজেপি সভাপতি নিজেই। অন্যদিকে মুরলী মনোহর জোশীর কেন্দ্র বারাণসীতে চোদ্দর লোকসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ফলে খানিকটা বাধ্য হয়েই নিজের কেন্দ্র ছেড়ে কানপুরে দাঁড়িয়েছিলেন জোশী। কিন্তু এ বার আর টিকিট পাননি তিনি। এই সিদ্ধান্তে বেশ কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এই দুই বর্ষীয়ান নেতা। তার প্রভাব পড়ছিল দলের অন্দরেও। চাপ বাড়ছিল বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের উপর। আর তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ।
পর্যবেক্ষকদের আরও মতে, টিকিট না পাওয়ার পর যদি আডবাণী-জোশী মুখ না খুলতেন, তাহলে একটা চাপ বাড়ত না বিজেপির উপর। কিন্তু কিছুদিন আগেই নিজের লোকসভা কেন্দ্র কানপুরের মানুষকে একটি বার্তা পাঠিয়ে মুরলী মনোহর বলেন, দল তাঁকে বলেছে, এ বার তিনি কানপুর বা দেশের অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারবেন না। আডবাণীও জানিয়ে দেন, তাঁর কেন্দ্রে এ বার বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন অমিত শাহ। এই সিদ্ধান্তের পরেই বিরোধী দলগুলি আক্রমণ করে বিজেপিকে। সদ্য বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া শত্রুঘ্ন সিন্হা অভিযোগ করেন, “বিজেপিতে এখন তানাশাহি চলছে। এই দল এখন ওয়ান ম্যান পার্টি ও টু ম্যান শো।” বৃহস্পতিবার একটি ব্লগ লিখে আডবাণী বলেন, “রাজনীতিতে যাঁরা আমাদের বিরোধী, আমরা তাঁদের কখনও শত্রু হিসাবে দেখিনি, দেখেছি প্রতিপক্ষ হিসাবে। বিজেপি-র শুরু থেকে সেই দর্শনেই বিশ্বাস করেছে। এমনকী যাঁরা আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করে না তাঁদেরও কখনও দেশবিরোধী বলে মনে করেনি।” এরপরেই এক সভা থেকে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, নিজের গুরু আডবাণীজিকে মঞ্চ থেকে জুতো মেরে নামিয়েছেন তাঁর শিষ্য নরেন্দ্র মোদী। এটাই বিজেপির সংস্কৃতি। এই পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেই দলের দুই বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে দেখা করলেন বিজেপি সভাপতি, এমনটাই মন্তব্য পর্যবেক্ষকদের একাংশের। এই সাক্ষাতের পর সত্যিই ড্যামেজ কন্ট্রোল হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।