রাজনীতির ঘুড়ির প্যাঁচে তিনি তুখোড়। কখন ঢিল ছাড়তে হয়, আর কখন টানামানি করতে হয়, ভালো করেই জানেন। আর তাই তাঁর উপরেই সবথেকে বেশি ভরসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে যে বাস্তবের ঘুড়ির প্যাঁচও তাঁর আয়ত্তে, সেটাই দেখালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
মঙ্গলবার গুজরাতের আহমেদাবাদের উত্তরায়নে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। প্রত্যেক বছরই এই বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেখানে একটি আবাসনের ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা গেল তাঁকে। শাহকে ঘিরে ছিলেন অনেক মানুষ। তাঁদের মধ্যে উৎসাহের খামতি ছিল না। আশেপাশের আবাসনগুলির ছাদেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। গিজগিজ করছিল ভিড়। সবাই হাতে মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি তোলার জন্য।
ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যেই স্লোগান উঠল ‘দেখো দেখো কৌন আয়া, হিন্দুস্থান কা শের আয়া’, কিংবা ‘অমিত শাহ আপ আগে বড়িয়ে, হাম আপকে সাথ হ্যায়’। এমনকি নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনেও স্লোগান শোনা গেল সেখানে। উপস্থিত জনগণ আওয়াজ তুললেন, ‘ইউ সাপোর্ট সিএএ’। অবশ্য অমিত শাহকে এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। তিনি ঘুড়ি ওড়ানোর মেজাজেই ছিলেন।
রাজনীতির খেলার সঙ্গে ঘুড়ির লড়াইয়ের কিন্তু বেজায় মিল। কোথায় ঢিল ছাড়তে ছাড়তে বিপক্ষের ঘুড়ির ঘাড়ে ফেলে তা কাটতে হবে, আর কোথায় টানামানি দরকার, সেটা ঠিকঠাক না জানলে সবটাই পণ্ডশ্রম। রাজনীতির ময়দানের পুরনো খেলোয়াড় অমিত শাহ মোদীর ডানহাত। ২০১৪ থেকে ২০১৯, শাহের ঘাড়েই ভোট বৈতরণী পার হয়েছেন মোদী। তাই এবার দলের সভাপতির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছেন অমিত।
তবে সামনে এখনও বিশাল দায়িত্ব অমিত শাহের কাঁধে। লোকসভা ভোটে দাপট দেখালেও একের পর এক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হারতে হচ্ছে বিজেপিকে। একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের। সেইসঙ্গে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের জোড়া ফলায় বারবার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে দেশে ফের বিজেপির জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও তাঁর হাতেই রয়েছে। সেই লড়াইয়ে যে মারপ্যাঁচ দেখা যাবে, তারই ‘মক শো’ হয়তো এ দিন দেখা গেল বাস্তবের আকাশে।