কোচবিহার আর আলিপুরদুয়ারের ভোট নিয়ে দার্জিলিং-এর সভায় নীরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কালিম্পঙের সভা থেকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবি করলেন, দুটিতেই জিতবে বিজেপি।
প্রথম দফার ভোটের সকালে কোচবিহারের ভাইকে ফোন করেছিলেন দিদি। তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান, কেমন ভোট হচ্ছে? অন্যবার যেমন দিদিকে সক্কাল সক্কাল মার্জিন বলে দিতেন রবি, এ বার উল্টে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ শুনিয়ে দেন। বিএসএফ ওমুক করছে, কমিশন তুসুক শুনছে না বলে সে অনেক কথা। তার ঘন্টা দেড়েক পরেই দার্জিলিং-এর চকবাজারে জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখান থেকে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের ভোটে ভাল-মন্দ কী হচ্ছে তা নিয়ে একটা বাক্যও বললেন না মমতা। পাশাপাশি দার্জিলিং-এর একটু নীচে বিজেপি-র জনসভা থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “বাংলায় ২৩টি আসন জিতছি। আজকে যে দুটিতে ভোট হচ্ছে, সেই আলিপুরদুয়ার আর কোচবিহারেও জিতবে বিজেপি।”
ভোটের আগের দিন অর্থাৎ বুধবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলায় বিজেপি কত আসন পাবে তার সংখ্যার উল্লেখ করেননি। বলেছিলেন, “আমি সংখ্যার মধ্যে যাচ্ছি না।” তবে বাংলায় যে এ বার ভাল ফল হবে, সে ব্যাপারে যে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই, তাও স্পষ্ট করেছিলেন মোদী। কিন্তু অমিত শাহ এসে ফের এ দিন পুরনো সেই ২৩-এর কথাই আরও একবার বলেন। এ দিনও মমতার বিরুদ্ধে চোখাচোখা শব্দে আক্রমণ শানান তিনি। বলেন, “গোর্খা জনগণকে ভয় দেখাচ্ছেন মমতা। এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন।” পাহাড়ের জনতার উদ্দেশে বিজেপি সভাপতি বলেন, “গোর্খারা আমার থেকেও বড় হিন্দুস্তানি। তাঁদের কেউ এ দেশ থেকে হঠাতে পারবে না।”
পাহাড় ঘেরা মাঠে এ দিন অমিত শাহের সভার মেজাজই ছিল আলাদা। তিনি যখন জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রাখছেন, কৌন বনেগা দেশ কি প্রধানমন্ত্রী? পাহাড় কাঁপিয়ে জনতার চিৎকার মোদী… মোদী…মোদী। দার্জিলিং কেন্দ্র চোদ্দর ভোটেই নিজেদের দখলে নিয়েছিল বিজেপি। সাংসদ হয়েছিলেন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। কিন্তু এ বার তাঁকে সেখানে প্রার্থী করেনি গেরুয়া শিবির। আলুওয়ালিয়াকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে এনে পাহাড়ে এ বার বিজেপি-র প্রার্থী রাজু বিস্ত। শিলিগুড়ির সমাবেশ থেকে মোদী বলেছিলেন, বিস্তকে তিনি বিশ বছর ধরে চেনেন।
চকবাজারের সভা থেকে মমতাও আক্রমণ করেন বিজেপি-কে। রোজ যে ভাবে করছেন। ঝাঁঝে কোনও তারতম্য নেই। আবার নতুন কোনও ইস্যুও নেই। তবে টার্গেট যে বিজেপি তা, স্পষ্ট করে দিচ্ছেন প্রতিটা বাক্যে। তাঁর সরকার আসার পর পাহাড়ে কী কী উন্নয়ন হয়েছে তা উল্লেখ করে এ দিন মমতা দার্জিলিং-এর মানুষের কাছে পাহাড়ের ভূমিপুত্র অমর সিং রাইকে জয়ী করার আবেদন জানান। আগামীকাল কার্শিয়াং-এ জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে দুই আসনের ভোট নিয়ে মমতার নীরবতা আর অমিত শাহের আত্মবিশ্বাসী বক্তৃতাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে সবটাই বোঝা যাবে ২৩ মে দুপুরের পর।