আমেরিকা প্রীতির খেসারত! দুই দশকে প্রথমবার পিছিয়ে গেল ভারত-রাশিয়া বৈঠক

নেহেরুর আমল থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল ভারতের (India)। দিল্লিতে সরকার বদলালেও মস্কোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও পরীক্ষিত সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। কিন্তু মোদি জমানায় দিল্লিতে ক্রমেই বাড়ছে আমেরিকা প্রীতি। এহএহন পরিস্থিতিতে দুই দশকে প্রথমবার পিছিয়ে গেল ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী-সহ অনেকেরই অভিযোগ রাশিয়া (Russia) সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে কেন্দ্র সরকার।

বার্ষিক সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ায় মোদি সরকারকে একহাত নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী একটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেছেন, “রাশিয়া ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। আমাদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে তা অদূরদর্শিতার কাজ হবে, যা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।” ভারতের বিদেশমন্ত্রক অবশ্য সাফ জানিয়েছে করোনা মহামারীর জন্যই যৌথভাবে বার্ষিক সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি ও মস্কো। এর নেপথ্যে কোনও কূটনৈতিক মন কষাকষি নেই। রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ অক্ষয় দিয়ে বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রক সাফ বলেছে, “এ ব্যাপারে যে সব কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানো দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক।” এই বিষয়ে ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতও কেন্দ্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জানিয়েছেন। করোনা মহামারীর জন্যই বৈঠক পিছিয়ে দিয়েছে দুই দেশ। ভবিষ্যতে ফের এই সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করতে আলোচনা চালানো হবে।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবর মাসে QUAD মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নয়াদিল্লির কোয়াড নির্ভরতা নিয়ে প্রকাশ্যেই বিরোধিতা জানিয়েছিল মস্কো। ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মিলে তৈরি হয়েছে এই গোষ্ঠী। এই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আগ্রাসন। এশিয়ায় চিনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করতে চায় আমেরিকা। এদিকে ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্কও খুব ভাল পরিস্থিতিতে নেই। গত মে মাস থেকে লাদাখে সীমান্তের উত্তেজনায় আরও অবনতি হয়েছে সেই সম্পর্কে। এই পরিস্থিতিতে চিনের সঙ্গে লড়তে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চায় আমেরিকা। দু’দেশের সম্পর্কও খুব ভাল জায়গায় রয়েছে। ওই বৈঠকের পরই রাশিয়াকে আশ্বস্ত করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেও ভারত যে রাশিয়া বিরোধী কোনও গোষ্ঠীতে যাবে না, সেই প্রচ্ছন্ন বার্তাই দিয়েছিলেন নমো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.