-তুই এইসব রাজনীতির ব্যাপারে জড়াচ্ছিস কেন বল তো? কতো ভালো লিখতিস তুই। তোর কবিতা পড়লে আমার কেমন শিরশিরানি হয় এখনও। সেই তুই কিনা এইসব রাজনৈতিক কচকচির মধ্যে ঢুকে গেলি?
-জানিস তুই যখন এই নীল রঙের স্লীভ লেস টপটা পরে মাথার চুলটা পেছন দিক করে আলগোছে বেঁধে রাখিস, তখন আমার তোকে কেমন পরী পরী লাগে। মনে হয় এক্ষুনি ছুট্টে গিয়ে তোকে একটা চুমু খাই।
-আবার বাজে কথা। যতোদিন তুই সিগারেট খাবি আমি তোকে চুমু খেতে দেবনা। কিন্তু এখন কথা পাল্টাবিনা। আমার কথার উত্তর দে। তোর কি দরকার এসব রাজনীতির মধ্যে ঢোকার?
-দরকার তেমন কিছু নেই। এই খালি যাতে তুই এই নীল স্লিভলেসটা আরও অনেক অনেক দিন পরতে পারিস সেই জন্যই আমার রাজনীতি করা।
-মাথাটা কি গেছে তোর?
-উহু। আসলে কি জানিস আজ যদি ওদের বাড়তে দিই তাহলে কাল ওরা তোকে বোরখায় ঢেকে দেবে। তখন আর তোর এই রূপটা আমি দেখতে পাবনা। আমার পরী তখন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে।
-বোরখায় ঢেকে দেবে মানে? ইয়ার্কি নাকি? আমি কেন বোরখা পরতে যাব!
-জানিস আমার পরিচিত একটি মেয়ে আছে। ওপারে বাড়ি। গ্রামে থাকে। বাবা চাষাবাদ করে কিছু। বড় এক দাদা ব্যবসা পত্তর করে। আর তিন বোন আছে ছোট। মেয়েটার খুব পছন্দের পোষাক হোল কুর্তী আর জিন্স। কিন্তু মেয়েটা সেটা পরতে পারেনা। কারন ও যদি বোরখা ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোয় তাহলে ওর গ্রামের মৌলবী আর মুরুব্বিরা এসে ওর বাবাকে যা নয় তাই অপমান করে। তাই বাধ্য হয়ে ওকে বোরখা পরেই বেরোতে হয় সবসময়।
-সত্যি বলছিস?
-আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি কর একটু যা বোঝার নিজেই বুঝে যাবি।
-তাই?
-হ্যাঁ তাই।
-কিন্তু তাও ওখানে যা হচ্ছে হতে দে। তুই এতো কিছু বলিসনা। ওদের নজরে পড়ে যাবি।
-আজকে মনটা খুব অশান্ত হয়ে রয়েছে। ঐ যে তুই একটা লালনের গান গাসনা তোদের ব্যান্ডের প্রোগ্রামে। ঐ যে “চাঁদ ধরা ফাঁদ জান না রে মন”। ওটা একবার গাইবি। খালি আমার জন্য। জানিনা তো আর কতোদিন শুনতে পাব।
-কেন সত্যিই কি জেলে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিস নাকি?
-না না জেলে গেলেও বেরিয়ে আসব। এসে তোর গান শুনব। কিন্তু ভয় হয় কাল যদি ঐ হানাদাররা এপারেও এসে পরে। তখন তো আর তুই ঐ গান গাইতে পারবিনা। তাই। ওখানে তো ইতিমধ্যেই এই গান গাওয়া অপরাধ। জানিনা এখানেও আর কয়দিন শুনতে পাব। তাই একবার গা ঐ গানটা। আমি তোর কোলে মাথা রেখে শুয়ে একটু শুনি।
-বন্ধ! বন্ধ কেন?
-কারন ওটা হারাম। পবিত্র কিতাবে বলেছে ওটা হারাম। তাই অপরাধ।
-ধ্যাত তুই ঢপ দিচ্ছিস!
-না সত্যিই। ওখানে ইতিমধ্যেই এই গান গাওয়া অপরাধ। আজ যারা আব্বাস সিদ্দিকীর হাত ধরেছিল আমাদের আটকাতে। তারা যদি সত্যিই আমাদের নির্মূল করে দিতে পারে তাহলে তো এখানেও তাই হবে।
-ভুল বলিসনি।
-আসলে কি জানিস আমি রাজনীতির কিছুই বুঝিনা। আমি খালি এইটুকু বুঝি এই যে তুই। যাকে আমার স্লিভলেস টপে দেখতে ভালো লাগে। যে পাড়ার প্যাণ্ডেলে সিদুর খেলতে পারে। ভাসানের ঢাকের তালে নেচে উঠতে পারে। যে কিনা অনায়াসে আমার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিতে পারে, সেই তুই যাতে এরকমই থেকে যেতে পারিস, তার জন্যই আমার সব প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আয়োজন। ওরা যে বড্ড সর্বগ্রাসী। ওরা যে অন্য কাউকে বাঁচতে দিতে চায়না। এমনকি দশ বছরের মেয়েও ওদের হাত থেকে ছাড় পায়না। তাই তাই আমার এই প্রতিবাদ, প্রতিরোধের চেষ্টা। আমি যে চাইনা আমার দেশও ওরকম অন্ধকারে ঢেকে যাক। আমি তো চাই আমার দেশে দুর্গা পুজোর ভাসানে তুই নাচবি। আমি তো চাই আমি তোর জন্য কবিতা লিখব। আমি তো চাই আমার জন্য তুই লালনের গান গাইবি। আমি তো চাই চিরকাল আমরা এরকমই স্বাধীন থাকব। আমার অখন্ড ভারত না হলেও চলবে।কিন্তু এই ভারতে যদি তোর নিজের মতো বাঁচার স্বাধীনতা না থাকে সে আমার চলবেনা।
#SaveBangladeshiHindu
দীপ্তাস্য যশের কলমেঃ