জয় বাংলার সমস্ত পত্রিকা বয়কট করা প্রয়োজন। গনতন্ত্রের স্বার্থেই

বাংলায় প্রতিদিন কত ঘটনা ঘটে যায় ক’জন খবর রাখি বলুন তো বুক ঠুকে দেখি।
গত দিন ১২ আগে মমতা ব্যানার্জি নিজের একাউন্ট থেকে চেক সই করে পাঁচ লাখ টাকা ফাইন দিয়েছেন শেষ পর্যন্ত গজরাতে গজরাতে। বার কাউন্সিলের একাউন্টে। জাস্টিস কৌশিক চন্দের নির্দেশ মত। জানেন আপনি খবরটা ? জানি আমি খবরটা ? জরিমানা হয়েছে জানি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে যাব বলে পিছটান দিয়ে লক্ষী মেয়ের মত টাকাটা জমা দিতে হয়েছে তড়পাতে তড়পাতে, ক’জন জানি বলুন ?
বাংলা সংবাদপত্রে, তাও দুটিতে মাত্র তিন লাইনে ভেতরের পাতায় খুব ছোট করে, যাতে চট করে লোকের চোখে না পড়ে সেইভাবে বেরিয়েছে খবরটা। আমি যেহেতু খবর তল্লাশি করি চোখে পড়েছে। নির্ঘাত আপনি পাননি। খবরটা প্রথম পাতার খবর। বাংলা সংবাদ মাধ্যম চাপল। প্রাণপাত করে।
বিনিময়ে কি পেল ? একটা উদাহরণ দিই। আনন্দবাজার ১৫ আগস্ট তৃতীয় পাতায় ২০০ সেন্টিমিটার হাফ পেজ, পঞ্চম পৃষ্ঠায় দুটো ১০০ সেন্টিমিটার করে দুটো কোয়ার্টার পেজ, এগারোর পৃষ্ঠায় আরও একটি কোয়ার্টার পেজ, ১২-র পৃষ্ঠায় ১৩ টি ছোট বিজ্ঞাপন, নবান্ন থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮০ সেন্টিমিটারের বিজ্ঞাপন প্রাপ্তি । বাজারি মূল্য যার ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা হওয়া উচিত । একদিনে সরকারের ভাঁড়ার থেকে একটি সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়ে গেল এত সরকারি টাকা। এবার বাকি বাংলা খবরের কাগজে, টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া নগদের হিসেবটা করুন। কত কোটিতে শেষ হবে বলুন ? আপনি নিজেই অঙ্ক করুন, পেয়ে যাবেন।
আর ঠিক সেই সময়ের আরেকটা খবর আপনাদের দিই। রাজ্যের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী শিক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস ২০১৯ – ২০-র রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে সরকারি স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ২০২১-এ এখন ২ লক্ষ সত্তর হাজার ০৮২ জন। সঙ্গে এসএসকে, এমএসকে শিক্ষক প্রায় ৭৫ হাজার। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার মত । ২০১১-এ যখন বামেরা চলে যায় এই শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ১৪ হাজার, ৭২৪ জন। অর্থাৎ ২০১৯-২০ তে শিক্ষক পদে শূণ্যতা হল ৬৯ হাজার। ২০২১ এ প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষক অবসর নেওয়ায় শূন্য পদ গিয়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার। যেখানে বাংলার শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের সহজেই জায়গা হত যদি সরকার রিক্রুট করতো। করেনি সরকার তা। কারণ সরকারের টাকা নেই।
এখন এই প্রশ্ন গুলো যাঁরা, যে সংবাদ মাধ্যম খোঁচাতে পারতো তাদেরই তো মুখ বন্ধ করে দিয়েছে নবান্ন ঢালাও বিজ্ঞাপন দিয়ে। শিক্ষকদের মাইনে দেওয়া যেত যে টাকা দিয়ে সেই টাকা দিয়ে এখন খবরের কাগজের হেডিং কেনা হয়, সংবাদ শিরোনাম হয় । অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কিম্বা অমর্ত্য সেনের চোখে এসব পড়েনা ? তাঁরা সব জেনেও চুপ। কেন আপনি বিচার করুন।
এর ফলে শেষে দুর্গতি কিন্তু বাড়ছে শিক্ষিত সমাজের। তাঁদের হয়ে বলার মাধ্যমগুলো ক্রমশঃ সংকুচিত হয়েছে। মমতা খুব বুদ্ধি করেই এটা করেছেন। প্রতি বছর যে ১২ লক্ষ ছেলে মেয়ে মাধ্যমিক দেয়, ৯ লক্ষ ছেলে মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক দেয় তাঁদের জীবনটা কেউ ভেবে দেখেছেন ? কিসের ভরসায় তাঁরা বাংলায় থেকে উচ্চ শিক্ষায় যাবেন ? শুধু একটা “সিভিক” হওয়ার জীবন পাওয়ার জন্য ? শুধু একটা মলে সেলস ম্যান হওয়ার জন্য ? শুধু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে zomato র লাল টি-শার্ট পড়ে বাইক নিয়ে দৌড়ে বেড়ানোর জন্য ? শুধু একটা contractual ডোমের চাকরি পাওয়ার জন্য ?
কে বলবে এঁদের কথা, কেউ ভেবেছেন ? একবারও ? সাহস থাকলে উত্তর দিন ফোর্থ পিলারের ফোড়েরা ।
আজও দুপুরে কলকাতা দেখেছে, বিকাশ ভবনের সামনে থেকে শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের হতভাগ্য শিক্ষিত শিক্ষিকাদের মারতে মারতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলেছে । সাহস হবে আনন্দবাজার, বর্তমান কিম্বা এই সময়ে’র শিক্ষিকাদের মার খাওয়ার এই নির্মম খবর, এই নির্লজ্জ ছবি প্রথম পাতায় ছাপার ?
শাসকের ঘুম ভাঙ্গালে তাদের বিজ্ঞাপন চলে যাবে, তাই না ? মানুষের স্বার্থ থেকে তাদের মুনাফাটাই অনেক বড় ? তাই না ? উত্তর দিন পারলে সংবাদ মাধ্যমের কর্তারা, সততা বলে মজ্জায় অবশিষ্ট কিছু থাকলে ।।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)
জয় বাংলার সমস্ত পত্রিকা বয়কট করা প্রয়োজন। গনতন্ত্রের স্বার্থেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.