শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস….. ????
আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে কপিলাবস্তুর এক রাজকুমার বিশ্বজুড়ে প্রচার করেছিলেন শান্তির বাণী। অহিংসা দিয়ে জয় করতে চেয়েছিলেন গোটা দুনিয়া। অদৃষ্টের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, ওনার জন্মদিনটাকেই শক্তি প্রদর্শনের জন্য বেছে নিয়েছিল তাঁরই জন্মভূমি….. ভারত… ???????? ????????
সেদিনটা ছিলো শাক্যমুনির জন্মদিন, ক্যালেন্ডারে লাল দিয়ে লেখা #বুদ্ধ_জয়ন্তী। ১৯৭৪ সালের ১৮ই মে, সরকারি ছুটির দিন। সকাল ৮টা বাজা’র একটু পরেই Bhaba Atomic Research Centre (BARC) এর অধিকর্তা ডক্টর রাজা রামান্না জরুরী ফোন করলেন দিল্লিতে, ফোনের অপরপ্রান্তে অপেক্ষারত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। উত্তেজনা চেপে রেখে আবেগমথিত গলায় রামান্না বললেন ” Madam, Buddha has finally smiled”,
পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। স্থান রাজস্থানের ঊষর মরু অঞ্চলের পোখরান। অত্যন্ত গোপন এই কার্যক্রমের কোডনাম ছিল #Smiling_Buddha…..বুদ্ধ হেসেছে ! জন্মদিনে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যই হয়তো এই নাম। সেনা কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্মাইলিং বুদ্ধের মোট উৎপন্ন শক্তি ছিল ১২ কিলোটনের মতো।
আমাদের দেশে পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা মোটামুটি পঞ্চাশের দশকেই শুরু করেন এই কাজ। ষাটের দশকে ধাক্কা খায় এই পরিকল্পনা, প্রথমে ৬২তে চীনযুদ্ধ আর ৬৬ সালের গোড়াতেই রহস্যজনক ভাবে মারা যান ডক্টর ভাবা। গোটা কর্মসূচি চলে যায় ঠান্ডাঘরে।????
ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসার পরেই ঝিমিয়ে পড়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী নতুন উদ্যমে শুরু হয়। বহির্বিশ্বের নিকট নিজেদের নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী চালিয়ে যায় ভারত। গোপনীয়তা ধরে রাখতে ডক্টর হোমি সেথনা, রাজা রামান্না ও কৃষ্ণগোপাল আয়েঙ্গারের মতো বাছা বাছা পরমাণুবিদ এবং পদার্থবিদদের নিয়োগ করা হয়। শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম চুল্লী ‘সাইরাস’ ছিল বিশ্বের সামনে ভারতের টোটকা। ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে বিজ্ঞানী দল গোপনে একটি প্লুটোনিয়াম চুল্লী নির্মাণ করে ফেলেন ১৯৭০ সালের মধ্যে।
ঐ বছরেই ইন্দিরা গান্ধী ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার’ তথা BARC স্থাপন করেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য। প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয় বিশিষ্ট পদার্থবিদ ডকটর রাজা রামান্নাকে। প্রকল্পের গোপনীয়তা রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিন জেনারেলের তত্ত্বাবধানে মাত্র ৭৫ জন বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য কাজের জন্য আরো কিছু সেনা জওয়ান নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পটি এত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন হয় যে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাবু জগজীবন রামও পোখরান বিস্ফোরণের আগে কিছুই জানতে পারেননি!
স্মাইলিং বুদ্ধ বোমা পরীক্ষার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তীব্র। ফ্রান্স অবশ্য এই পরীক্ষার জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিগ্রাম করেছিল, যা আবার পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরীক্ষা সম্পন্ন হবার পর ভারত একে একটি শান্তিপূর্ণ গবেষণালব্ধ পরীক্ষা বলে অভিহিত করে আসছিল। একে যুদ্ধে ব্যাবহার করা হবে না, এ মর্মে একাধিক বিবৃতিও দেয়। এসব বিবৃতি পাকিস্তান অবশ্য কানে তোলেনি। তারাই ছিল এ পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সমালোচক। অন্যদিকে হেভি ওয়াটার (D2O) দ্বারা চালিত সাইরাস চুল্লীটি কানাডাই সরবরাহ করেছিল ভারতকে। তাই তারা চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ভারতের বিরুদ্ধে এবং ভারি জলের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। রাশিয়া নিরপেক্ষ দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও আমেরিকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভারতের শান্তিপূর্ণ পরীক্ষার দাবি মেনে নেয়। এর কারণ ঐ মুহূর্তে মহারাষ্ট্রর তারাপুরে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লী নির্মাণের কাজ করছিল আমেরিকা। তারা হয়তো চায়নি সেই কাজ বন্ধ হয়ে যাক!
এই পরীক্ষার মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কমিটির পাঁচটি দেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে ভারত পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় স্থান পায়। সার্বিক অবদানের জন্য ডক্টর হোমি সেথনা ও রাজা রামান্না সেবছর পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। আরো পাঁচজন বিজ্ঞানী লাভ করেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। সব মিলিয়ে পোখরান-১ ভারতের জন্য এক স্মরণীয় অধ্যায়। নিঃসন্দেহে এ অধ্যায়টিই ভারতকে আজকের শক্তিশালী অবস্থানে আসতে সহায়তা করেছে । জয়হিন্দ ????️
‘অহিংসা পরমো ধর্মহ, ধর্মহিংসা তথৈব চ” – অর্থাৎ হিংসা না করা মানুষের প্রকৃত ধর্ম কিন্তু নিজ ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয় নেওয়া তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কলমে ✍???? স্বপন সেন ????