কমিউনিস্টদের পাকিস্তান প্রেমের সাক্ষী আবারও ভারত

সংঘর্ষবিরতি চুক্তি না মেনে গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তান, দুই সেনা জওয়ান-সহ এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। ভারত প্রত্যাঘাত করায় নিদেনপক্ষে জনা ২০ পাক সেনা ও জঙ্গি মারা যায়। কেউ অসভ্যতা করলে সর্বংসহা ভারতবর্ষ যাবতীয় দৌরাত্ম্য হাসিমুখে সহ্য করবে, সহিষ্ণুতার সেই দিনগুলি আজ ফুরিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের ব্যাপারে ভারতের জিরো টলারেন্স, বর্তমান জমানায় সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নেহরুর করস্পর্শে ভারতে যা হয় এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ভারতীয় রাজনীতিতে যারা বিপন্ন প্রজাতি থেকে অবলুপ্ত প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে, সেই হরেক কিসিমের কমিউনিস্টরা, যাদের বর্তমান অস্তিত্ব কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতেই তারা ওই ঘটনার পর হল্লা জুড়ে বলল—ভোট এলেই নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধায় মোদী-শাহের সরকার, যাতে ভোটে ফায়দা লুটতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়াতেই অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ আছড়ে পড়েছে, কমিউনিস্টদের এমন হাবভাব যে ভারত পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত না করলে যেন মহারাষ্ট্র-হরিয়ানার ভোটে লাল-ঝড় উঠতো।
বিষয়টা এতটা লঘু ইয়ার্কিরও নয়। হরিয়ানা-মহারাষ্ট্রে ভোটের দিন অতি বাম নিয়ন্ত্রিত জইশ সমর্থক একটি বাংলা সংবাদপত্রে অর্থনীতি নাকি দেশপ্রেম, জনগণ কাকে বেছে নেবে এমনতরো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া। হয়েছিল। এদের পশ্চিমবঙ্গেই কেউ পুঁছলো না, তখন কোথায় মহারাষ্ট্র, আর কোথায়ই বা হরিয়ানা! আপনাদের মনে থাকতে পারে, মহারাষ্ট্রে কৃষক আন্দোলনের নামে মানুষকে খেপিয়ে তুলে সেই ‘লাল ঝড় তোলার একটা চেষ্টা হয়েছিল অনেক দিন আগে, যার প্রতীক ছিল ক্ষতবিক্ষত ফাটা পায়ের ছবি। যদিও বিগত লোকসভা নির্বাচনে সেই বিক্ষত পদাঘাতেই মহারাষ্ট্রে অপাংক্তেয় বামপন্থীদের রাজনৈতিক সংরক্ষক কংগ্রেস ধরাশায়ী হয়েছিল, জনগণের রায়ের সুবাদে। আসলে সমস্যার জায়গাটা আমাদের বোঝা দরকার।
সারা বিশ্ব এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। ভারত তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। ১৩০ কোটি মানুষের বাস, অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের জায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছে একদল ‘ভারতবাসীর জন্য। ফলে অর্থনীতি একটু টালমাটাল হবেই। সীমান্তে জালনোটের কারবারের সুবাদে এতকাল সমান্তরাল অর্থনীতি চলেছে। ফলে নোট-বাতিলের মতো সাহসী পদক্ষেপ খুব দরকার ছিল। তবে ভারতের অর্থনীতির মূল সমস্যার বিশিষ্ট অর্থনীতিজ্ঞ মনমোহন সিংহ সরকারের আমলেই সুচনা হয়েছিল। এই সমস্যাটি হলো দুর্নীতি। ব্যাঙ্কের ঋণ খেলাপিরা মনমোহনসোনিয়া সরকারের আমলেই ব্যাঙ্ক প্রতারণার ফঁদ পেতে ধার নিয়েছিলেন। খোদ অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম দুর্নীতির দায়ে জেলে। কংগ্রেস। আমলের আর্থিক দুর্নীতির বোঝাও তাই নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বইতে হচ্ছে। তবু তারই মাঝে ভারতীয় অর্থনীতি যতটা পারা যায় সামনের দিকে এগোচ্ছে।
তাই অর্থনীতি ভারতবর্ষের সমস্যা নয়। পেটে ভাত না থাকলে কেউ ভোট দেবে না। কমিউনিস্টরা যতই জোরেই চেঁচাক যে ভাতের সমস্যা ঘোচাতে যুদ্ধ বাধিয়ে ভোটে জিতছে বিজেপি, তাতে ঘোড়ার হাসিও বন্ধ হয়ে যাবে। এইবারে মূল সমস্যার দিকে আলোকপাত করা যাক। পাকিস্তানের দাবির উগ্র সমর্থক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সেই পাক-প্রেম স্বাধীনতার পরেও অব্যাহত আছে। নিছক রাজনৈতিক কারণে আজকের সিপিআই (এম) মোদীর কট্টর বিরোধী এমনটা নয় কিন্তু। চীনের দালালি করে এই পার্টিটার জন্ম। ভারতবর্ষের মাটিতে বসে, দেশেরই সর্বনাশ করতে এদেরই এক অংশ থেকে সিপিআই (এম এল)-এর জন্ম, মনীষীদের মূর্তি ভাঙার নক্কারজনক কলুষিতা যাদের হাতেই সুচিত হয়েছিল এবং আজও সেই ট্র্যাডিশান তারা রক্ষা করে যাচ্ছেন। ফলে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে এই দেশদ্রোহীদের গাত্রদাহ হয় সবচেয়ে বেশি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। এরা ‘অর্থনীতিবিদের। ভেক ধরেছে আর সেই মুখোশের আড়ালে দেশদ্রোহিতায় শান দিচ্ছে, দ্বেষের প্রচার করছে।
আমরা সবাই জানি গরিবি হলো বিশ্বের কমিউনিস্টদের মূল পুঁজি। আর ভারতীয় কমিউনিস্টদের মুকুটে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন পালক— অন্ধ ভারত-বিদ্বেষ। আর পাকিস্তান-প্রেম। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি থেকে সাম্প্রতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কমিউনিস্টরা পাক-আনুগত্য সদা-সর্বদা বজায় রেখেছে।তাই নেহরুর ভারতের অবলুপ্তিতে, কাশ্মীর সমস্যা দীর্ণ ভারতের অবলুপ্তিতে এদের এত ক্ষোভ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভারত, পরম পূজনীয় দুই মহামানব রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ডাক্তারজী ও শ্রীগুরুজীর ভারত, দীনদয়াল-অটলজীর ভারতে দেশদ্রোহী কমিউনিস্টদের স্থান নেই।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.