আমাদের কুণ্ডলিনী তন্ত্রশাস্ত্রের দু’টি ধারা আছে।
১) আগম(স্বক্রিয় প্রকৃতি ও নিষ্ক্রিয় পুরুষ),
২) নিগম(স্বক্রিয় পুরুষ ও নিষ্ক্রিয় প্রকৃতি)।
আমাদের সর্বজনবিদিত মহাকালী ও মহাকালের সমবেত বিগ্রহে মহাদেবীকে দেবাদিদেবের বক্ষে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কারণ, সেটি আগমশাস্ত্রীয় আরাধনা। তাই আমাদের কাছে এই বিগ্রহটি ব্যতিক্রমী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু না। নিগম শাস্ত্র অনুযায়ী পুরুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই প্রকৃতির বুকে পা দিয়ে পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন৷
এরকম বিগ্রহে মহাকালের উপাসনা উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু জায়গায়(শিলঙ, লামডিং, ইটানগর, শিলচর) দেখা যায়।
সতীর মৃত দেহ নিয়ে যখন মহাদেব তান্ডব করছিলেন তখন জগৎকে রক্ষা করতে ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত করেন। কিন্তু এতে মহাদেব আরো ক্রোধাম্বিত হয়। মহাদেবকে কেউই শান্ত করতে না পারায় শেষে মহাকালী মহাদেবের পথে শয়ন করে। আর মহাদেবের পা যেই মাত্র মহাকালীর ওপরে পরে তখনই মহাদেব শান্ত হন।
শিব আর সতীর কথোপকথনই তন্ত্র। তন্ত্র ভারতে প্রচলিত এক বিশেষ ধরনের উপাসনা ও সাধনপদ্ধতি। আমাদের কুণ্ডলিনী তন্ত্রশাস্ত্রের দু’টি ধারা আছে — (১) আগম, যেখানে প্রকৃতি সক্রিয় ও পুরুষ নিষ্ক্রিয়, এবং (২) নিগম, যেখানে পুরুষ সক্রিয় ও প্রকৃতি নিষ্ক্রিয়।
আমরা সাধারণত যে মা কালীর পুজো করি সেটা আগম তন্ত্র মতে বানানো বিগ্রহ। আমাদের সর্বজনবিদিত মহাকালী ও মহাকালের সমবেত বিগ্রহে মহাদেবীকে দেবাদিদেবের বক্ষে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আগম তন্ত্র মতে আরাধনায়। আগম তন্ত্রগুলিতে নারী শক্তি সক্রিয় এবং পুরুষ নিষ্ক্রিয়।
তার বিপরীত হচ্ছে নিগম যেখানে পুরুষ তথা শিব সক্রিয় এবং প্রকৃতি নিষ্ক্রিয়। এটা জাগতিক ভাবে নারী এবং পুরুষের মধ্যে এক তারতম্য বজায় রাখা বলা যায়৷ নিগম তন্ত্র অনুযায়ী পুরুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই প্রকৃতির বুকে পা দিয়ে পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন৷ নিগম তন্ত্র মতে বানানো বিগ্রহ মহাকালের সাকার রূপ।
ছবিতে মহাকালের বিগ্রহ দেখা যাচ্ছে। মহাকাল যখন কাল কে কলন করেন অর্থাৎ সময় কে গ্রহণ করেন বা সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন দেবী তাঁর পদতলে থাকেন।
এখানে মহাকাল মোক্ষ প্রদান কারী এবং তার শক্তি অর্থাৎ দেবী কালী ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।
©দুর্গেশনন্দিনী