কেরলের ত্রিশূরের ৫৫ বছরের রশিদ. কে। তাঁর একমাত্র মেয়ে চিনের উহানে পড়াশোনা করতেন। মেয়ে বাড়িতে ফেরার আনন্দ সেবার বদলে গিয়েছিল আতঙ্কে। ২০২০ সালের ২৪শে জানুয়ারি উহান থেকে কেরলে ফিরেই শুকনো কাশিতে ভুগতে শুরু করে সে। ভর্তি করা হয় জেলা হাসপাতালে।
২৯শে জানুয়ারি, ২০২০। রিপোর্ট বেরোয় শারীরিক পরীক্ষার। দেখা যায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনি। সেই শুরু। এরপরেই বদলে যায় ভারতের সংক্রমণের ছবি। ২১ বছর বয়ে্সী ওই মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টই প্রথম পজেটিভ কেস ভারতে। রশিদ জানিয়েছিলেন, তিনি রীতিমতো উদ্বিগ্ন ছিলেন। কীভাবে চিকিৎসা হবে, কোথায় চিকিৎসা হবে, সে সব কিছুই জানতে বা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর পরিবারও অথৈ জলে ছিল। পরে প্রশাসনের সহায়তায় সমস্যার ধীরে ধীরে সমাধান মেলে।
শুরু হয় মাস্ক, পিপিই কিটের ব্যবহার। ত্রিশূর মেডিক্যাল কলেজের লিয়সঁ অফিসার ডঃ রবি মেনন গোটা ঘটনার বর্ণনা দেন। কীভাবে তাঁরা করোনা রোগী পেতে শুরু করেন, তাঁদের চিকিৎসা চালানো হয়। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ত্রিশূরে এসে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ দল। ছিল রাজ্য স্তরের চিকিৎসক দলও। ৩০শে জানুয়ারি থেকে গবেষণা শুরু হয়। বৈঠক চলে ৩০শে জানুয়ারির রাত দুটো পর্যন্ত।
ত্রিশূরের হাসপাতালে তৈরি হয় কোভিড ইউনিট। তৈরি হয় বিশেষজ্ঞ টিম। প্রথম আক্রান্ত মেয়েটিকে কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটা-ছটার সময় ভর্তি করা হয় তাঁকে। ২৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিলো ওই তরুণীকে। ১৪জন তাঁর সংস্পর্শে এসেছিল। তার মধ্য রশিদও ছিলেন। প্রত্যেকেই কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। করোনা পরীক্ষা হয়।
এরপর জল বয়ে গিয়েছে নিজের মতো। দেশ দেখেছে একের পর এক মৃত্যু। ২০২১ সালের ২৯শে জানুয়ারি পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে আতঙ্ক কাটেনি। সতর্কতা নিয়েই জীবন ফিরছে নিজের ছন্দে। কেরল ও মহারাষ্ট্রে এখনও ৪০ হাজারেরও বেশি অ্যাক্টিভ কেস রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এখনও লকডাউন নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হতে চাইছে না মহারাষ্ট্র সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতি জারি করে উদ্ধভ ঠাকরে সরকার জানিয়েছে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে রাজ্য জুড়ে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯ টা অবধি দেশে করোনা আক্রান্ত হলেন ১৮ হাজার ৮৫৫ জন। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর জেরে দেশে মোট করোনা আক্রান্তর সংখ্যা দাঁড়াল ১ কোটি ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৪৮ জন। এরমধ্যে অ্যাক্টিভ কেস রয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮৬ জন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও সুস্থ হয়ে উঠেছে ১ কোটি ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৫২ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ১০ জনের।