আর পাঁচটা তরুণীর মতো চাকরি বা ঘরকন্না করার কথা ভাবত না জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা। জঙ্গিদের জালে পা দিয়ে ফিদায়েঁ জঙ্গি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখত ১৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশী তরুণী।
বাবা-মাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় জেহাদের জন্য জীবন দিতেও রাজি সে। বিয়েতে খুব একটা মত নেয় তার, বিয়ে যদি অগত্যা করতেই হয় তাহলে চাই একই মতাদর্শের ছেলে না।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিরা কীভাবে যুবপ্রজন্মের মগজধোলাই করছে তারই প্রমাণ নাবিলা।
আর সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আল-কায়েদার শাখা সংগঠন আনসার আল ইসলামে যোগ দেয় সে। কীভাবে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য হয়ে উঠল সে তার কথাই এবার তদন্তকারী অধিকারীদের শোনাল নাবিলা।
সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সদ্য গ্রেপ্তার ওই জঙ্গি আদালতে ১৬৪ ধারায় ভয়ংকর জঙ্গি হওয়ার জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার মহানগর হাকিম শাহিনুর ইসলাম তার খাস কামরায় নাবিলার জবানবন্দি নেন বলে পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মহম্মদ জাফর হোসেন জানিয়েছেন। তিনি জানান , নাবিলাই আনসার আল ইসলামের প্রথম নারী সদস্য।
সন্ত্রাস দমন শাখার প্রধান বলেন, “এই জঙ্গি সংগঠনটিতে এর আগে কোনও মহিলা সদস্য ছিল বলে জানা যায়নি। এই প্রথম এই সংগঠনের কোনও নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
কীভাবে ওই তরুণী জঙ্গি হয়ে উঠল, সেই বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের আরও নারী সদস্য গ্রেপ্তার হলেও তারা নাবিলার মতো প্রশিক্ষিত ছিল না। আনসার আল ইসলামের হয়ে মিডিয়া শাখা অর্থাৎ জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব পালন করত নাবিলা। সামরিক শাখার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সে দেশ ও দেশের বাইরে যে কোনও সময় ‘জেহাদ’ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
গত ২৬ আগস্ট ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে সাইবার জেহাদ চালাতো সে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়ার মাধ্যমে।
তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নাবিলা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ‘Chirpwire’ নামের অনলাইন প্লাটফর্মে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট খোলে।
মামলার নথিপত্রে বলা হয়েছে, নাবিলা নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিশিয়াল ও আন-অফিশিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে আইডি ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলায় কৌশলগত বিষয়ে ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করত সে। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে তার বিয়ের কথাবার্তা চললে সে ছেলে পক্ষকে জানায়, জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সে সামনের সারিতে থাকবে।