দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে ১৯৯৪-৯৫ সাল থেকে ভারত একপেশে ভাবে পাকিস্তানকে মোস্ট ফেভার্ড নেশন্ (এম এফ এন) এর মর্যাদা দিয়ে এসেছে পারষ্পরিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে। পাকিস্তান কিন্তু কখনোই ভারতকে সেই মর্যাদা দেয়নি বরং সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় মদত দিয়ে এসেছে। ১৯৯৯ এর কার্গিল যুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতে ঐ বছর ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ান এয়ারলইন্স এর আইসি-৮১৪ বিমান আপহরন করে কান্দাহারে নিয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও ২০০১ এর ডিসেম্বরে সংসদে হামলা ,২০০৬ এ মুম্বাই রেল বিষ্ফোরন কিংবা কুখ্যাত ২৬/১১এর মতো হামালা বা তার পরের অরো অনেক জঙ্গি আক্রমন সহ্য করতে হয়েছে ভারতকে। এই সমস্ত আক্রমনের নেপথ্যে থাকা লস্কর-ই-তৈবা , হিজবুল মুজাহিদিন বা জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠন গুলির নাম উঠে এসেছে। আর এটাও দিনের আলোর মতো সবার জানা এই সব জঙ্গি বাহিনীকে সীমান্তের ওপারে পাকিস্তান অর্থনৈতিক বা পরিকাঠামোগত ভাবে মদত দিয়ে এসেছে। পুলওয়ামার ঘটনা আরো একবার সেটা মনে করিয়ে দিল।
এক শ্রেনীর সরকারি আমলা ও কিছু ব্যবসায়ীর কায়েমি স্বার্থের কারনে এত দিন না সরলেও , অবশেষে পুলওয়ামা অত্মঘাতী হামলার পরের দিন ১৫ই ফেব্রুয়ারী ভারত একক ভাবে দেওয়া মোস্ট ফেভার্ড নেশন্ এর মর্যাদা পাকিস্তানের থেকে প্রত্যাহার করে নিল।
এর আগে ২০১৮ সালে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মনম স্বামীর কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে এম এফ এন নিয়ে লেখা চিঠির উত্তরে ঐ দপ্তরের রাষ্ট্র মন্ত্রী সি আর চৌধুরী লিখেছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে কেবলমাত্র ১৩৮টি ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ওয়াঘা বা আটারি সীমান্ত পেরোনোর ছাড়পত্র পাওয়া গেলেও ১২০৯ টি পণ্য কে সে দেশে পাঠানোর অনুমতি পাওয়া যায়নি। পারষ্পরিক বানিজ্যে আমরা উদবৃত্তের সঙ্গে এগিয়ে আছি। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে পাকিস্তানের ৪৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানীর তুলনায় ভারত সে দেশে ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানী করেছে।
মন্ত্রক থেকে আরো বলা হয় ভারতের বানিজ্য উদবৃত্তের কথা মাথায় রেখে এবং ভারতের রপ্তানীর উপর পাকিস্তান নতুন করে বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারে ভেবেই এম এফ এন বা মোস্ট ফেভার্ড নেশনের মর্যাদা সরিয়ে আঘাত করার মতো পদক্ষেপ ভারত নেয়নি।
এই মর্যাদা তুলে নেবার জন্য ২০১৬ সালে পাঠানকোট হামলার পরও সুব্রহ্মনম স্বামী সরব হয়েছিলেন। তিনি তাঁর চিঠিতে সরকারকে লিখেছিলেন পাকিস্তান থেকে সিমেন্ট আমদানী করা একটি সন্দেহ জনক বিষয় । কারন সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন অফিসার বা কর্মীরা সেখানকার সিমেন্ট শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যুক্ত রয়েছে। এটা আমাদের দেশের সিমেন্ট শিল্পকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা। উল্লেক্ষ ২০০৭ সালে ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সময় থেকে পাকিস্তান থেকে সিমেন্ট আমদানীতে প্রচুর পরিমানে শুল্ক কমানো হয়েছিল।
অবশেষে মোদি সরকার এম এফ এন বা মোস্ট ফেভার্ড নেশনের মর্যাদা সরিয়ে পাকিস্তানের পাশাপাশি, স্বার্থান্বেশী ব্যবসায়ী যারা দেশের নিরাপত্তার চেয়ে নিজের ব্যক্তি স্বার্থকে প্রধান মনে করে তাদের আঘাত হানতে পেরেছে।