বেশ কিছুদিন আগে গনশক্তির প্রথম পাতাজোড়া ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি আর কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার৷ সে সময় বামেদের একটি বড় অংশ বুঝতে পারছিল না তারা গণশক্তির এ হেন কাজের প্রশংসা করবে নাকি বিরোধিতা! যাই হোক এই ধাক্কাটা হজম করার আগেই মিডিয়াতে বামেদের শেষ ভরসাস্থলও কেড়ে নিল আদানী গ্রুপ৷ NDTV-র এক বড় অংশ কিনে নিল দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী সংস্থা৷ যদিও বামপন্থীদের চোখে বুর্জোয়া বলতে যা বোঝায় তার প্রতিটি চরিত্রই আগে থেকে বর্তমান NDTV-তে৷ গণশক্তি হোক কিংবা NDTV, কর্মীদের ভালো মাইনে, মেডিক্লেম, PF দিতে গেলে যে কোনও সংস্থাকে বুর্জোয়াই হতে হবে৷ মিডিয়া সেক্টরের বড় অংশের আয় আসে বুর্জোয়া কোম্পানিগুলির বিজ্ঞাপন থেকেই৷ অবশ্য বদল তো অনেক কিছুতেই এসেছে!
১৯৭২ সালে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী হন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। রায়বাবুর কাছে তখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দুটি
১- রাজ্যে তখন বামপন্থী আন্দোলন পাখনা মেলছে।
২- অতিবাম নকশাল আন্দোলন খুনোখুনির রাস্তায় নেমে পড়ছে ততদিনে।
সিদ্ধার্থবাবুর কংগ্রেস এক ঢিলে দুই পাখি মারার এক সুবর্ণ সুযোগ পেল। নকশালদের খুনোখুনির রাজনীতিকে কঠোর হাতে দমন তো করলেনই পাশাপাশি তাঁর অনুপ্রেরণাতে সারা বাংলা জুড়ে সাধারণ বামপন্থী বাড়িগুলোতে রাজনৈতিক অত্যাচার চালাল কংগ্রেস। ইনক্লাব বলতে বলতে কত বাম যুব, শ্রমিক নেতা সেই যে বাইরে বেরিয়ে গেছে আজও ফেরেনি৷ এমনও বামপন্থী বাড়ি দেখেছি যে বাড়ির একমাত্র সন্তান তার বাবার কথা শুনেছে শুধুমাত্র মা, ঠাকুমার গল্পে। কেন্দ্রের জরুরি অবস্থার সময় তো এই রাজনৈতিক খুন অন্য মাত্রা পেয়েছিল। ১৯৭৭ এ ক্ষমতায় আসার আগে সিপিএম ও বামপন্থী দলগুলোর প্রতিশ্রুতির তালিকায় প্রথমের দিকে ছিলে এই ‘রাজনৈতিক খুনোখুনির’ তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করা৷ কিন্তু নিজের লম্বা মুখ্যমন্ত্রীত্বে ‘রায়বাবু’র গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেননি জ্যোতি বসু। দেবেনই বা কী করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় নামের লোকটি না থাকলে জ্যোতি বসু এরকম ‘হোলিয়ার দ্যান দাও’ ফিগার হতেন কিনা সন্দেহ আছে! আজীবন দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল গভীর৷
সে যতই বাংলার বামপন্থী পরিবারের বৃদ্ধ মা কিংবা স্ত্রী এবং বাজারে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বামপন্থী যুবকটির অতৃপ্ত আত্মা আজও বিচার চেয়ে বসে থাকুক না কেন।
এরপর তো ব্রিগেডে-ব্রিগেডে একই মঞ্চে একই সঙ্গে বক্তব্য রাখলেন বাম-কংগ্রেস নেতারা৷ এখনও কংগ্রেসের কাছের জোটসঙ্গী বামেরাই!
নিজের মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময়ে অজস্র ভুল, অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষক হলেও কয়েকটা কাজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য করতে চেয়েছিলেন৷ কিছু কথা সাহস করে বুদ্ধদেব বলতে পেরেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বেড়ে চলা জঙ্গী কার্যকলাপের আঁচ অনুভব করে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে গলা তুলে বুদ্ধদেব বলতে পেরেছিলেন, ‘মাদ্রাসাগুলো জঙ্গি তৈরির আঁতুড়ঘরে পরিনত হয়েছে।’ যদিও তারপর দলের অভ্যন্তরেই তাঁর কি অবস্থা হয়েছিল তা আমরা দেখেছি।
একুশের ভোটের আগেই ফেসবুকে একটি ভাইরাল ভিডিওতে শুনেছিলাম, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) এর প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন
- এই সিপিএমের বুদ্ধদেব, একদিন বলেছিল মাদ্রাসা জঙ্গি তৈরির কারখানা। আজ বুদ্ধদেবের সে সাহস আছে? আজকে ওরা আমাদের ভোটের জন্য আমাদের সঙ্গে আসতে চায়! ঈশ্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ‘অসুস্থতা’ দিয়ে রক্ষা করেছেন৷ নাহলে হয়ত ব্রিগেড মঞ্চ থেকে স্বদর্পে এই কথাগুলো বলত আব্বাস। আর তার ঠিক পাশের চেয়ারে মাথা নীচু করে বসে এই কথাগুলো শুনতে হত বয়সের ভারে ভেঙে পড়া রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।
ব্রিগেড মঞ্চে সিপিএম নেতাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখেছেন আব্বাস সিদ্দিকি। জোটও হয়েছে আইএসএফ-র সঙ্গে। টিভি ডিবেট থেকে সভা বামপন্থী বক্তারা বাম-ISF জোটকে জাস্টিফাই করে গিয়েছেন বারবার৷ ভোটের আগে ও পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই বাম নেতারা বলেছে,
- আমাদের আমাদের মতো থাকতে দাও।
আজ NDTV-র অংশীদারিত্ব কিনে নিয়ে ঠিক এই গানটারই পরের লাইনটা বোধহয় বলল আদানী গ্রুপ
- আমরা নিজেদেরকে নিজেদের মতো গুছিয়ে নিচ্ছি, সঠিক পরিকল্পনামাফিকই।
শে খ র ভা র তী য়।।