চিনে রাখুন মেয়েটাকে। অন্তিম পাংগাল। আমাদেরই দেশের মেয়ে। এক বঞ্চিত হতভাগ্য মেয়ে। এমন এক মেয়ে যাকে আপাতত হেরে যেতে হল ফুটেজখোর এক নাটুকে ‘দেশ কি বেটি’র রাজনীতি আর তার সামনে ফেডারেশনের অসহায় আত্মসমর্পনের কাছে।
বজরং আর ভিনেশ ফোগট সাম্প্রতিক আন্দোলনের মুখ ছিল। তাই তাদের এশিয়ান গেমসে ডাইরেক্ট পাঠাচ্ছে ব্রীজভূষণ পরবর্তী ফেডারেশনের এড হক কমিটি। কেউ মিনমিন করে বলতেই পারে ওরা মেডেলিস্ট, তাই ব্যতিক্রমী নিয়মে ওদের পাঠানোর প্রভিশন আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই নিয়মেই ভিনেশের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়েটাকেও পাঠানোর কথা ফেডারেশনের(রবি দাহিয়া বা সাক্ষী মালিক বা অংশু মালিকও যাচ্ছে না ডাইরেক্টলি)। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আর সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপে মেডেল আছে ওর। সিনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এখনও পায়নি একটাও, যেমন পায়নি কমনওয়েলথ – এশিয়াড – অলিম্পিক। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে কি করবে সেটা সময়ের সাথে মিলিয়ে নেবেন। সুযোগ – এটাই একমাত্র চাওয়া মেয়েটার কারণ কাল সবাইকে জাস্ট গুঁড়িয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ট্রায়াল জিতে নিয়েছে অন্তিম। কিন্তু তবু অন্তিম সামনের এশিয়াডে রিসার্ভ, কারণ একই বিভাগে নাটুকে ভিনেশ ট্রায়ালে না নেমেই সিলেক্টেড। কুস্তি মহলের একজনও এমন নেই যে ৫৩ কেজি মহিলা বিভাগে অন্টিমকে হারানোর মত কাউকে দেখতে পেয়েছে। হ্যাঁ, অভিনেত্রী ভিনেশকে মাথায় রেখেই বলছে সবাই। কাল ট্রায়ালে বাঘা বাঘা কুস্তিগীর, যারা নিয়মিত প্র্যাকটিসে ছিল, বিদায় নিয়েছে জুনিয়র আর উঠতি তারকাদের কাছে। প্র্যাকটিস না করে এই অবৈধ সুযোগ পাবার জন্য আন্দোলন করা ভিনেশ জাস্ট উড়ে যেত সেখানে।
অবশ্য ভিনেশ উড়েই গেছে, বিদেশে। সরকারের টাকায় স্পেশাল ট্রেনিং করছে ও। ওসব অবশ্য অন্টিমদের কপালে জোটে কম। ভোট হোক বা কুস্তির ট্রায়াল – সিম্পেথির নাটক না করলে যে জেতা যায় না সেটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট। দিল্লি থেকে কলকাতা, গোটা দেশে।
অন্তিম পাংগাল মোটামুটিভাবে সোনার নীচে কিছু নিয়ে ফিরতো না। খুব খারাপ ফল হলে রূপো। এশিয়ান সার্কিটে ওর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখনও নাম পাঠায় নি গেমসের জন্য। তা ছাড়া অন্তিম উঠতি তারকা, অস্তমান সূর্য নয়।
এশিয়াডে একটা নিশ্চিত মেডেল অনিশ্চিত হয়ে গেল ভারতের জন্য। তার সাথে একটা মেয়ের ভাগ্যও। এমন একটা মেয়ে যাকে কুস্তির আখড়ায় ভারতের মেরি কম বলে ডাকা শুরু হয়ে গেছিল অলরেডি।
অন্তিম পাংগাল জাস্ট সুযোগ চেয়েছিল। ট্রায়ালে জিতেও আন্দোলন, ফেডারেশন আর কোর্টের কাছে হেরে গেল মেয়েটা। আগের মত হেরে গেল এবারেও, একেবারে নয়। হ্যাঁ, এর আগের ট্রায়ালে ফর্মে থাকা ভিনেশের সাথে ছোট্ট অন্তিম ৩-৩ ড্র করেছিল ম্যাচ। অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে লবি করে সেবারেও নিজের নাম সিলেক্ট করিয়ে নিয়েছিল ভিনেশ।
চিনে রাখুন মেয়েটাকে। অন্তিম পাংগাল। আমাদেরই দেশের মেয়ে। আজ কাঁদতে কাঁদতে কুস্তি ছাড়তে চাইছে ঠিকই। তবে একদিন বিশ্বজয় করবে ও। আপাত অনিশ্চিত ভাগ্য নিয়েই একদিন বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা ওড়াবে মেয়েটা, সেটাও খুব শিগগিরই। মিলিয়ে নেবেন।