সব খবর তখনো পাইনি ।
দু দিন আগে পোস্ট করেছিলাম ডি জি বীরেন্দ্র আর ডি জি পদ মর্যাদার মৃত্যুঞ্জয় সিং কে এক্সটেনশন এর খবর নিয়ে লিখেছিলাম । পরে জানলাম আরেক আই এস অফিসারকেও এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছে । নাম নবীন প্রকাশ । তিনি পি ডব্লিউ ডি র সেক্রেটারি ছিলেন । অবসরের পর আরও দু বছরের জন্য থেকে গেলেন সরকারে । তাঁর আজ্ঞাবহ হতে পারার যোগ্যতামানে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে ।
এক এক জন এক্সটেনশন পাওয়া আধিকারিকের জন্য সরকারের খরচ কত ? আলাপনের এক্সটেনশনের সময় কেন্দ্রকে শোনানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে অন ক্যামেরায় বলেছিলেন আলাপন আড়াই লাখ মাইনে পাবেন । প্লাস যা যা পাওয়ার তা তা পাবে । খুব শ্রুতি কটু লেগেছিল । একজন মুখ্যমন্ত্রী ক্যামেরার সামনে তাঁর পরামর্শ দাতা কত পাবেন সেটা বলে দিচ্ছেন ! ভাবা যায় !
আসলে ভাবা প্র্যাক্টিস করতে হবে । যেহেতু জমানাটা নির্লজ্জতার । এবং সেই নির্লজ্জতার পেটেন্ট নেওয়া এক মহিলার জমানা এটা ।
না হলে আজ, যা যা ঘটল, লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার কথা শাসকের । হয়েছেন কি ? নিশ্চিত ভাবে নয় ।
সকাল হতেই জানা গেল সুপ্রিম কোর্ট রিজেক্ট করেছেন মমতার আবদার । কি আবদার ? ইউ পি এস সি কে এড়িয়ে নিজে পুলিশের ডি জি পি এপয়েন্ট করতে আবেদন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ । সুপ্রিম কোর্ট বড় করে একটা “না” বলে দিয়েছে রাজ্যকে ।
আরেকটু বেলা বাড়ার সঙ্গে বিশ্বভারতীতে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশকে ও বোলপুরের এস ডি পি ও কে টাইম বেঁধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত । বিকেল চারটের মধ্যে সদলবলে পুলিশ দৌড়াল উপাচার্যর বাড়ি ও শান্তিনিকেতনে । বাড়ি থেকে বসে অনুব্রত দেখল, নবান্ন থেকে মমতা বসে দেখলেন রাজ্য পুলিশ দৌড়চ্ছে তাঁর কথায় নয়, আদালতের কথায়, এবং তিনি যা চেয়েছিলেন তার বিরুদ্ধেই ।
বেলা যখন বিকেল হল আদালত আরও মারাত্মক হল । পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মমতার প্রিয় পাত্র মানিক ভট্টাচার্যকে ব্যক্তিগত স্তরে জরিমানা করল হাইকোর্ট । নির্দেশ দিল আদালত – টেট পরীক্ষায় ২০১৮ সালের ৩ রা অক্টোবর বিচারপতি সমাপ্তি চ্যাটার্জি যে রায় দিয়েছিলেন তা অমান্য করার অপরাধে ১৯ জন পরীক্ষার্থীকে প্রত্যেককে ব্যক্তিগত ভাবে মানিক ভট্টাচার্যর নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে মাথা পিছু ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে । অর্থাৎ ১৯ জনকে সব মিলিয়ে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে । এবং সবার নম্বর বাড়ার পর যাঁরা উত্তীর্ণ হবেন সবাইকে সাত দিনের মধ্যে চাকরি দিতে হবে ।
সাম্প্রতিক কালে কোন রাজ্য সরকার এভাবে আদালতের তিনটে থাপ্পড় একদিনে খেয়েছে মনে করে কেউ বলতে পারবেন ? আমার তো মনে পড়ে না । সামান্য লজ্জা বোধ থাকলে সংশোধনের দিকে হাঁটতো যে কোন সরকার ।
এঁরা হাঁটবে না ।
তাকিয়ে দেখুন, রাজ্যে শিক্ষিকারা যখন বিষ খাচ্ছেন তখন এ রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ত্রিপুরায় গিয়ে দিব্যি বসে আছেন । আজ আবার নির্লজ্জের মত ছবি দিয়ে ফেস বুক পোস্ট দিচ্ছেন ব্রাত্য সেখানকার শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ নিয়ে নাকি তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন ।
কি বলবেন ! কিছু বলবেন এঁদের এই অপরিসীম নির্লজ্জতা নিয়ে ? একটা সরকার, আর তাঁদের পরিচালকরা এতটা নির্লজ্জ হতে পারে ভাবলেও কিরকম অস্বস্তি হয় ।
রাজ্যে এভাবেই একটা চরম আত্মমর্যাদাহীন, রুচিহীন, কদর্য শাসকের আস্ফালন দেখি আমরা প্রতিনিয়ত প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে । আদালত প্রায় নিয়ম করে শাসকের সেই চেহারাটাকেই বেআব্রু করে আমাদের সামনে মেলে ধরছে । তা দেখে আমরা শিউরে উঠছি । রিএক্ট করছি । দিন গেলে ভুলেও যাচ্ছি ।
পরের দিন আরও একটা সংবাদের অপেক্ষায় থাকছি । কি এসে যাচ্ছে শাসকের ! কিচ্ছু আসছে না । দিন চলে যাচ্ছে এভাবেই । বাঙালির । সয়ে যাওয়া এবং দেখে যাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করে ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)