দুশো জীবন বাঁচিয়ে বাহানাগার সুপারম্যান ৭৭ বছরেরওঙ্কারনাথ

খেলনার মতো উল্টে গেল ট্রেনটা, কানে বাজ পড়ার শব্দ’

চোখের পাতা এক করেননি টানা তিনদিন। চশমা সরালে দেখা যাচ্ছে, না ঘুমিয়ে দুটো চোখই টকটকে লাল। তাঁর উঠোনের কাছে ছিটকে এসে পড়েছিল দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরার খণ্ডাংশ। তিনি লাইভ দেখেছেন ট্রেন উল্টে যাওয়ার দৃ। ভাঙা জানালায় ঝুলতে থাকা রক্তমাখা জামা দেখে কতবার শিউরে উঠেছেন, গুনে বলতে পারলেন না। মৃত্যুপথযাত্রীদের আর্তনাদ এখনও কানে বাজে।

এখনও কিছু খেতে গেলে গা গুলিয়ে উঠছে ওঙ্কারনাথ পান্ডার। দুর্ঘটনার পর তিনদিন কেটেছে কিন্তু এখনও এক গ্রাস খাবারও মুখে তুলতে পারছেন না।
শুক্রবার সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছিলেন সত্তোরোর্ধ এই বৃদ্ধ। দুর্ঘটনার পর ইলেকট্রিক কাটার, হাতুড়ি নিয়ে দৌড়ে যান ঘটনাস্থলে। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া কামরা থেকে প্রায় দুশোরও বেশি মানুষকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। ওঙ্কারনাথের সঙ্গে উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিল তাঁর পরিবারও। ৭৭ বছরের এই মানুষটি বাহানাগারে এখন সুপারম্যানের মর্যাদা পাচ্ছেন।

তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেই রেললাইন। বাড়ির পিছনে প্রধানমন্ত্রী এসে নেমেছিলেন। সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বললেন, লুপ লাইনে দাঁড়িয়েছিল মালগাড়ি। হঠাৎ দেখলাম, করমণ্ডল ঢুকে খেলনার মতো উল্টে গেল। বাজ পড়ার মতো আওয়াজ। কানে তালা ধরে গিয়েছিল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে প্রায় ছুটে বাড়ি আসি। বাড়িতে বড় ছেলের গ্রিলের কারখানা আছে। সেখান থেকে একটি ইলেকট্রিক কাটার ও হাতুড়ি নিয়ে চলে যাই লাইনে। তবে কারেন্ট ছিল না বলে কাটার ব্যবহার করা যায়নি। হাতুড়ি দিয়ে কামরার অংশ ভেঙে ভেঙে জীবিতদের উদ্ধার করার কাজ শুরু করি।

শিশু থেকে বৃদ্ধ, যুবক, মহিলাদের বাঁচিয়ে নিজের বাড়ির উঠোনে নিয়ে আসেন ওঙ্কারনাথ। তাঁর স্ত্রী, বউমা, বড় ছেলে, নাতি-নাতিরাও উদ্ধারের কাজে হাত লাগান। বাড়িতে হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্ক। সেখান থেকে জগ, বালতি, বোতলে করে জল নিয়ে এসে শুশ্রূষার কাজ শুরু করেন। সোমবার বাড়ির সামনে সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখে জল চলে এসেছিল বৃদ্ধর। বললেন, চোখের সামনে এত মৃত্যু কখনও দেখিনি। অনেককে বাঁচিয়েছি। এলাকার সব মানুষ উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিল। না হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ত। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কয়লার ইঞ্জিন থেকে করমণ্ডলকে দেখছেন। এই ট্রেন মেন লাইন দিয়েই যায় সাধারণত। সেদিন হঠাৎ দেখলাম লুপে ঢুকে পড়ল। তখনই মনটা কেমন যেন কু ডেকেছিল। এখনও চোখ বুজলে দেখতে পাই, খেলনার মতো গড়াগড়ি খাচ্ছে ট্রেনের কামরাগুলি।

শত শত কোটি প্রণাম ও স্যালুট দাদু।

মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে।

????

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.