বুধবার, ৬ই আগষ্ট, ১৯৪৭ : প্রতিদিনের মতই গান্ধীজি ভোরে ভোরেই উঠে পড়ে ছিলেন। বাইরে তখনো অন্ধকার ছিল। ‘ওহায়া’-এর শরণার্থী শিবিরের কাছেই আক্তি বাংলোতে গান্ধীজি উঠেছিলেন। এমনিতেই ‘ওহায়া’ কোনো বড় শহরতো ছিলো না, বরং একটি ছোট খাটো গ্রাম ছিল। কিন্তু ইংরেজরা সেখানেই সৈন্যঘাঁটি তৈরি করেছিল সে কারণে ‘ওহায়ার’ একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল। প্রশাসনিক ভাষায় বললে তা হয় ‘ওহায়া ক্যান্টনমেন্ট’। এই ক্যান্টনমেন্টে অর্থাৎ ওহায়ার সেই শরনার্থী শিবিরে’র এলাকায় এক বাংলোতে গান্ধীজি উঠেছিলেন সেদিন। ওহায়ার শরণার্থী শিবির নিকটেই ছিল তাই সেই শিবির থেকে নির্গত দুর্গন্ধ অত্যন্ত তীব্র বলে অনুভব হচ্ছিল। এই দুর্গন্ধ যুক্ত প্রেক্ষাপটে গান্ধীজি নিজের প্রার্থনা সমাপ্ত করলেন।
আজ গান্ধীজির কনভয় নিয়ে লাহোর যাওয়ার কথা আছে, ক্যাম্প থেকে তা প্রায় আড়াইশো মাইল দুরত্ব। সম্ভাবনা আছে যে তা প্রায় সাত আট ঘন্টা সময়ই লাগবে। এইজন্য ওহায়া থেকে তাড়াতাড়ি বেরোনোর পরিকল্পনা ছিল। নির্ধারিত কার্যক্রমের কথা খেয়াল রেখে, সূর্যোদয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গান্ধীজি ওহায়া ক্যাম্প পরিত্যাগ করেন এবং রাওয়ালপিণ্ডির রাস্তাদিয়ে লাহোরের দিকে যাত্রা শুরু করলেন।
লাহোর- রাভীনদীর তটে অবস্থিত এই শহর, শিখ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক শহর। প্রচীন ইতিহাসে ‘লাভপুর’ বা ‘লাবণীপুর’ বলে পরিচিত, এই শহরে প্রায় চল্লিশ শতাংশের বেশি হিন্দু-শিখ জনগোষ্ঠী মানুষদের বসবাস। মার্চ মাসে মুসলিমলিগের দ্বারা লেলিয়ে দেওয়া দাঙ্গার পরে বড় সংখ্যক হিন্দু-শিখ জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে।
লাহোর আর্যসমাজীদের গড় বলেই পরিচিত। অনেক কট্টর আর্যসমাজী লাহোরেই বড় হয়েছেন। তারা সংস্কৃত ভাষার চর্চা করতেন, তারা ঐ ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। লাহোরে সেই সময় অনেক সংস্কৃত পাঠশালা ছিল। সংস্কৃতের পুরোধা তথা ভারত বিদ্যার পুরোধা প্রকাশক মতিলাল বনারসীদাস ওখানকার লোক ছিলেন। বাস্তবিকই এখন সেখানে নিরন্তর ঘটে চলা দাঙ্গার কঠিন বাস্তবতা থেকে তিনি নিজেদের ঝোলা কম্বল বেঁধে নিয়ে ভারতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
এ কথার স্পষ্ট সংকেত পাওয়া গেছে যে লাহোর পাকিস্তানে চলে যাবে। এ কারনে মহারাজা রণজিৎ সিংহের রাজধানী ও তার সমাধির শহর লাহোর ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া, লাহোরের শিখদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছিল। শিতলামাতা মন্দির, ভৈরব মন্দির, ডাবর রোড স্থিত শিতলা মন্দির, দুধবালী মাতা মন্দির, ডেরা সাহিব, ভাভারিয়া স্থিত শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর পন্থের জৈন মন্দির, আর্যসমাজ এর মত অনেক মন্দিরের আজ কি হবে, এই চিন্তা প্রত্যেক হিন্দু-শিখদের দুঃখিত হৃদয়কে বিদির্ণ করছিল। প্রভূরামচন্দ্রের পুত্র লব যিনি এই শহরের প্রবর্তন করেন, তার মন্দিরও লাহোরের কেল্লার ভিতরে আছে। সেখানকার মন্দিরের পূজারিরও এ বিষয়ে গভীর দুশ্চিন্তা ছিল যে – এই মন্দির ও আমাদের ভবিষ্যতের কি হবে ?
এমন ঐতিহাসিক শহর লাহোরে গান্ধীজি কংগ্রেসের কার্যকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্ত্তা বলবেন। কংগ্রেসের কার্যকর্তা বলতে যা অন্য বোঝায় তা এক কথায় হিন্দু-শিখই ছিল। কেননা লাহোরের মুসলমান কার্যকর্তারা আগেভাগেই মুসলিমলিগের হয়ে কাজ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান হয়ে যাওয়া যখন নিশ্চিত, সেখানে তো আর কংগ্রেসের অস্বিত্ব থাকবে না, তখন খামোখা কংগ্রেসের বোঝা নিজের ঘাড়ে বয়ে নিয়ে বেড়াবে কেন? এটা নিশ্চিত বুঝেই কংগ্রেসের মুসলিম কার্যকর্তারা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য এই পড়ে থাকা বেঁচে বর্তে যাওয়া হিন্দু-শিখ কংগ্রেস কার্যকর্তাদের কাছে গান্ধীজির এই আগমন ও সাক্ষাতকার বেশ আশাজনক মনে হচ্ছিল।
যে সময় গান্ধীজি ওহায়া থেকে লাহোর এর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন, প্রায় ঐ একই সময়ে রাষ্ট্রীয় স্বংয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক গুরুজী ও করাচী থেকে সিন্ধপ্রান্তের অন্য এক বড় শহর হায়দ্রাবাদ যাওয়ার জন্য প্রস্থান করেছিলেন। গান্ধীজির মতই তিনিও অতিপ্রত্যুষে ভোর চারটেয় উঠে পড়েছিলেন। সেটাই তার নিয়মিত দিনচর্যা ছিল। সকাল ছটায় সূর্যোদয় হতেই তিনি প্রভাতশাখায় প্রার্থনা করেছিলেন, এবং শাখা শেষ হওয়ার পরে একটি ছোট বৈঠক নিয়েছিলেন। সিন্ধপ্রান্তের সমস্ত সংঘচালক, কার্যবাহ এবং প্রচারকগণ ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই গতকালের করাচির কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে “পাকিস্থানের হিন্দু-শিখদের কিভাবে সুরক্ষিত হিন্দুস্থানে পৌঁছে দেওয়া যায়”, সে বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করছিলেন।
গুরুজী নিজেদের কার্যকর্তাদের দুঃখকষ্ট শুনছিলেন।তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছিলেন। পাসেই বসেছিলেন ডাক্তার আবাজী থত্তে খুব যত্ন সহকারে গুছিয়ে নানান কথার নোট তৈরি করছিলেন। গতকাল সংঘের সার্বজনীন বৌদ্ধিকে গুরুজী যে কথা বলেছিলেন তা পুনরায় একবার বরিষ্ঠ কার্যকর্তাদের বোঝালেন- “হিন্দুদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়তি সংঘের উপরে অর্পণ করেছেন।” গুরুজী সংঘের কার্যকর্তাদের সাহস ও হিম্মত বাড়ালেন এবং বললেন- “সংগঠন ক্ষমতার দ্বারা আমরা বহু অসাধ্য কাজকেও সরলভাবে সম্পূর্ণ করতে পারি।”
বৈঠকের পরে সকল কার্যকরতাদের সঙ্গে গুরুজী স্বল্পাহার গ্রহণ করেন এবং প্রায় সকাল নটার দিকে হায়দ্রাবাদের উদ্দেশ্যে গমন করলেন। করাচির কিছু স্বয়ংসেবকের কাছে গাড়ি ছিল। তাদেরই একটিতে গুরুজী, আব্বাজী, প্রান্তপ্রচারক রাজপালজী পুরী এবং সুরক্ষার দিকে লক্ষ্যরেখে অন্য একজন স্বয়ংসেবক গাড়িতে বসেছিলেন। গাড়ির চালকও অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল, বাইরে থেকে দেখে এমনটা বোঝা যাচ্ছিল না। এমনি আরো একটি গাড়ি গুরুজীর গাড়ির পিছনে পিছনে চলছিল। তাতে কয়েক জন বরিষ্ঠ কার্যকর্তা ছিলেন। যারা অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত ছিলেন। বিপদের আশঙ্কা করেই কয়েকজন স্বয়ংসেবক গুরুজীর গাড়ির আগে ও পিছনে মোটর সাইকেলে করে চলছিলেন। দাঙ্গার সেই অস্থির বাতাবরনেও ওখানকার স্বয়ংসেবকরা কোন সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের মত করেই গুরুজী গোলওয়ালকরকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
করাচি থেকে হায়দ্রাবাদের দুরত্ব প্রায় চুরানব্বই মাইল, কিন্তু রাস্তা খুব ভালো। এই কারণে সবার বিশ্বাস ছিল দুপুরের ভোজনের আগেই গুরুজী হায়দ্রাবাদে পৌঁছে যাবেন। রাস্তাতেই সিন্ধের প্রান্তপ্রচারক রাজপালজী ওখানকার ভয়াবহ পরিস্থতি সম্পর্কে গুরুজীকে অবগত করিয়েছিলেন।
১৭ ইযাঁর্ক রোড-… নেহেরুজীর আবাস স্থলের কার্যালয়। নেহেরুজীর সামনে গতকাল ৫ই আগষ্টে লেখা লর্ডমাউন্ট ব্যটনের পত্র রাখা ছিল। তার উত্তর ওনাকে এখন দিতে হবে। মাউনন্টব্যটন এক বড়ই বিচিত্র দাবি রেখে ছিলেন। অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর নেহেরুজী এই পত্রের উত্তর নিজের সচিবকে ডিক্টেট আরম্ভ করলেন।
প্রিয় মাউন্ট ব্যাটন,- আপনার পাঁচই আগষ্টের পত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ঐ পত্রে আপনি সেই সমস্ত দিনের কথা উল্লেখ করেছেন যে সমস্ত দিন গুলিতে ভারতের শাসকীয় ভবন গুলিতে ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলন করা উচিত। আমার মতে এর অর্থ এটাই যে – ঐ দিনগুলিতে আমাদের রাষ্ট্রীয় ধ্বজের সঙ্গে ইউনিয়ন জ্যকও উত্তোলিত করা উচিত। আপনার তালিকায় আমার কেবল একটাই আপত্তি আছে। তা হল ১৫ই আগষ্ট, অর্থাৎ আমাদের স্বতন্ত্রতা দিবস। আমার মনে হচ্ছে ঐ দিনটিতে ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলন করা ঠিক হবে না। যাই হোক লণ্ডনোস্থিত ইণ্ডিয়ান হাউসের উপরে ঐদিন আপনারা ইউনিয়ন জ্যাক ওড়ান তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
তবে অন্য যে দিন গুলির পরামর্শ আপনি দিয়েছেন যেমন – ১লা জানুয়ারী- সৈনিক দিবস, ১লা এপ্রিল – বায়ুসেনা দিবস, ২৫শে এপ্রিল – অনজ্যাক দিবস, ২৪শে মে রাষ্ট্রমণ্ডল দিবস, ১২ই জুন -ব্রিটেনের রাজার জন্মদিন, ১৪ই জুন – সংযুক্ত রাষ্ট্রের ধ্বজ দিবস, ৪ঠা আগস্ট – ব্রিটিশ মহারাণির জন্মদিন, ৭ই নভেম্বর নৌসেনা দিবস, ১১ই নভেম্বর – বিশ্বযুদ্ধে স্বর্গত সৈনিকদের স্মরণ দিবস। এই সকল দিনে ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোলনে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই সকল প্রসঙ্গে সরকারি ভবনে ইউনিয়ন জ্যাক উত্তোল করা হবে
ড. বাবাসাহেব আম্বেডকর আজ মুম্বাই তে আছেন। স্বাধীন ভারতের মন্ত্রীসভা ঘোষিত হয়েছে আজ মাত্র দুদিন হল। এমনিতেই এটা স্পষ্ট ছিল যে উনি আইন মন্ত্রীর পদ পাচ্ছেন। একারনে মুম্বইতে ওনার নিবাসে দেখা করতে আসা বিশেষ করে সিডিউল কাস্ট ফেডারেশনের কার্যকর্তা গণের লম্বা লাইন সেখানে ছিল। স্বাভাবিকই ছিল, কারণ তাদের প্রিয় নেতার ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রীর পদপ্রাপ্তি হয়েছে।
এই সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যেও বাবা সাহবের একটু একান্ততার প্রয়োজন ছিল। এই মুমুর্তে তার মাথায় অনেক বিষয়েই চিন্তন-মন্থন চলছিল। বিশেষ করে পশ্চিমভারতে চলতে থাকা ভীষণ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার খবর ওনাকে বিনিদ্র করে রেখেছিল। এ সম্বন্ধে ওনার চিন্তাভাবনা একদম স্পষ্ট ছিল। বাবাসাহেবও বিভাজনের পক্ষে ছিলেন, কেননা ওনার স্পষ্ট মতামত ছিল এই যে – হিন্দু ও মুসলমানের একত্র অবস্থান সম্ভব নয়। যাই হোক বিভাজনের সময় ওনার শর্তছিল –“জনসংখ্যার অদল বদল করা।” ওনার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল যে- বিভাজন যেহেতু ধর্মের আধারে হচ্ছে, সেই হেতু প্রস্তাবিত পাকিস্তানের সব হিন্দু ভারতে এবং ভারতের সমস্ত মুসলমানদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।জনসংখ্যার এই অদল বদলের দ্বারাই ভারতের ভবিষ্যত শান্তিপূর্ণ হবে।
কংগ্রেসের অন্য অনেক নেতার কারনে বিশেষ করে গান্ধীজি ও নেহেরুর কারনে এই প্রস্তাবটি স্বীকৃত হয়নি। এজন্য তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন। ওনার প্রায়ই এমন মনে হত যে – যদি পরিকল্পনাপূর্বক হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যার বিনিময় হয়ে যেত, তবে লক্ষাধিক নির্দোষ প্রাণ রক্ষা করা সম্ভাব হত। গান্ধীজির- “ভারতে হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই এর মত থাকবে।”- এমন বক্তব্যে উনি খুব ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতেন।
কার্যকর্তাদের প্রচণ্ড ভীড় থেকে কোনরকমে বাইরে এসে বাবাসাহেব নিজের “অধ্যয়ন কক্ষ” তে বসে ছিলেন। তিনি এই সমস্ত চিন্তনে মগ্ন ছিলেন যে এবার ওনাকে নিজের মন্ত্রকে কি কি কাজ করতে হবে। তার মধ্যেই ওনার মনে পড়ল আজ হিরসীমা দিবস। আজকের দিনেই জাপানের হিরোসীমার উপরে আমেরিকা পারমানবিক বোমা ফেলেছিল, সেই ঘটনাও দুই বছর হয়ে গেল আজ। জাপানের নির্দোষ নাগরকদের হত্যার শ্মরণে বাবাসাহেবের মন খিন্ন হয়ে উঠল।
আজ সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের উকিলদের এক সংস্থা বাবাসাহেবের এক সার্বজনীন অভিনন্দনের আয়োজন করেছেন। ঐ সভায় কি বলা উচিত তাই গভীর চিন্তন করে চলেছেন।
আজ সূর্যোদয় ৬ টা বেজে ১৭ মিনিটে হয়েছে। কিন্তু তার একটু পূর্বেই গান্ধীজি লাহোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছালেন রাওয়ালপিণ্ডি, সেখানে কিছুক্ষণ থামলেন। ওখানকার কার্যকর্তারা খানিকটা জোর করেই ওনাকে আটকে ছিলেন। কনভয়ের সকলের জন্য সরবত এবং বাদামআদি শুকনো ফলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গান্ধীজী কেবল লেবুর জলই গ্রহণ করেছিলেন।
দুপুর প্রায় দেড়টার সময় গান্ধীজীর কনভয় লাহোর পৌঁছায়, যেখানে ভোজনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস কার্যকর্তাদের সঙ্গে গান্ধীজির কথাবার্তা হওয়া পূর্ব নির্ধারিত ছিল।
যে সমস্ত কংগ্রেস পদাধিকারীদের বাড়িতে গান্ধীজির ভোজন হওয়ার কথা ছিল, তাদের বাড়ি হিন্দু বহুল এলাকাতেই ছিল। বাস্তবিক সেখানেও গান্ধীজি যে দৃশ্য দেখেছিলেন, তা মনকে উদ্বিঘ্ন করার মতই ছিল। তিনি রাস্তাতে বেশ কয়েকটি দগ্ধ ঘরবাড়ি ও দোকান দেখেছিলেন। হনুমান মন্দিরের দরজাটা কেউ উপড়ে ফেলে দিয়েছে। একবারে দেখেই সেই মহল্লাটাকে ভুতুড়ে এলাকা বলে মনে হচ্ছিল।
গান্ধীজী খুবই অল্প আহার গ্রহণ করতেন। কেবল ছাগলের সামান্য দুধ, শুকনো ফল এবং আঙুর অথবা অন্য কোনো ফল, ব্যাস এই এতটাই ছিল ওনার আহার। এই সমস্ত বস্তুর ব্যবস্থা আগে থেকেই করা হয়েগিয়েছিল। গান্ধীজির সাথে আগত কনভয়ের লোকজনদেরও ভোজনের ব্যবস্থাও ঐ পদাধিকারীর আস্তানায় ছিল। ভোজন ইত্যাদি সম্পন্ন হতেই প্রায় আড়াইটা বেজে গেল। গান্ধীজি কংগ্রেস কার্যকর্তাদের বৈঠকে পৌঁছালেন।
সবসময় যেমনটা হয়ে থাকে তেমনি প্রার্থনার পরেই গান্ধীজির সভা শুরু হল। গান্ধীজি স্মিতহাস্য মুখে কার্যকর্তাদের নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করতে আগ্রহ করলেন… অমনি যেন কোনো বাঁধ ভঙে পড়ল, তেমনি ভাবে সকলে উত্সাহিত হয়ে বলতে থাকলেন। কেবল হিন্দু-শিখ কার্যকর্তাই বেঁচে ছিল, তারা নিজেদের কার্যকর্তাদের উপরে বেশ ক্ষিপ্ত ছিলেন, ওনাদের অন্তিম সময় পর্যন্ত এটাই আশা ছিল যে যখন গান্ধীজি বলেছেন যে “দেশের বিভাজন হবে না, আর যদি হয় তবে তা আমার শরীর কে দুই টুকরো করে তবেই হবে” তাই চিন্তার কোন কারন নেই। এই বক্তব্যের আধারে লাহোরের সকল কংগ্রেস কার্যকর্তা আশ্বস্ত ছিলেন যে কিছুই হবে না।
কিন্তু এমনটা হল না, ৩রা জুনই যেন সবটাই বদলে গেল। ঐদিনই বিভাজনের ঘোষণা হয়েছিল, আর তাও কংগ্রেসের সম্মতিতে- ‘এখন আট থেকে পনের দিনের মধ্যে যতটা সম্ভব জিনিশপত্র গুছিয়ে নিতে পারি ততটা নিয়েই আমাদের নির্বাসিতের মত আমাদের ভারতে চলে যেতে হবে। সম্পূর্ণ জীবনটা যেন উল্টে পাল্টে গেল, অস্ত-ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল… অথচ আমরা সকলেই কংগ্রেসের কার্যকর্তা।’
সমস্ত কার্যকর্তা গান্ধীজির উপর নিজেদের প্রশ্নের বর্ষণ করছিলেন। গান্ধীজিও শান্ত ভাবে এই সবকিছু শুনছিলেন। নিজে চুপচাপ বসে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব কংগ্রেস কমিটির অধ্যক্ষ কার্যকর্তাদের শান্ত করলেন এবং তাদের বললেন “গান্ধীজি কি বলেন তা অন্তত শুনে নিন…”
লাহোর শহরের সাত -আটশ কার্যকর্তা একদম শান্ত হয়ে গেলেন। এখন তারা বড় আশাপূর্ণ চোখে এটাই জানার জন্য একদম শান্ত হয়ে গেলেন যে অন্তিমে গান্ধীজির মুখ থেকে কোন শব্দ নির্গত হয় যা তাদের ক্ষতে মলমের প্রলেপ দেবে।
ইতিমধ্যেই সিন্ধ প্রদেশের হায়দ্রাবাদে গুরুজীর ভোজন সমাপ্ত হয়েছে। এখন তিনি সেখানকার স্থানীয় কার্যকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলছেন। আবাজী তাকে থামালেন ও বিশ্রামের জন্য বললেন, একটু ঘুমিয়ে নিন। কিন্তু সিন্ধ প্রান্তের সেই বিষাক্ত বাতাবরণ দেখতে দেখতে গুরুজীর নিদ্রাতো অতিদুর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করাও সম্ভব ছিল না।
হায়দ্রাবাদের স্বয়ংসেবকরা গতবছর নেহেরুর ভ্রমণ কাহিনী শোনাচ্ছিলেন গুরুজীকে।
নেহেরুজী গতবর্ষে ১৯৪৬-এ হায়দ্রাবাদে একটি সাধারণ সভার আয়োজনের চিন্তা করছিলেন। ঐ সময়ে বিভাজন ইত্যাদির কোনো প্রসঙ্গই ছিল না। সিন্ধু প্রদেশের মুসলমানদের সংখ্যা গ্রামেই অধিক ছিল। করাচিকে বাদ দিয়ে প্রায় সকল শহরই হিন্দু বহুল ছিল। লঙ্কানা এবং শিকারপুরে ৬৩% হিন্দু জনসংখ্যা ছিল। যখন হায়দ্রাবাদের প্রায় এক লাখ হিন্দু ছিল, অর্থাৎ ৭০% থেকেও অধিক হিন্দুর জনসংখ্যা ছিল। এতৎ সত্বেও মুসলিম লীগের পক্ষথেকে দেশবিভাজনের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চলছিল বেশ জোর কদমে এবং এই আন্দোলন পুরোপুরি হিংসক আন্দোলনই চলছিল। এজন্য কেবল ৩০% হওয়া সত্বেও মুসলমানরা শহরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে নেয়। সমস্ত সার্বজনিক স্থানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বড় বড় ব্যানার লাগানো হয়ে ছিল। সিন্ধ প্রদেশের মন্ত্রীসভার সদস্য এবং মুসলিমলিগের মন্ত্রী খুর্রম তো খোলাখুলি নিজ ব্যক্তব্যে হিন্দু কণ্যাদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ধমকি দিচ্ছিলেন।
এই দাঙ্গাকারী মুসলমানদের গুণ্ডাগিরি প্রতিরোধ করার মত কেবল একটি সংগঠনই মোক্ষম প্রতিপন্ন হচ্ছিল এবং তা ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। হায়দ্রাবাদে সংঘের শাখা বেশ ভালো সংখ্যায় ছিল। প্রান্তপ্রচারক রাজপাল পুরী এই সকল ক্ষেত্রে নিয়মিত সাংগঠনিক ভ্রমণে আসতেন।
হায়দ্রাবাদে আয়োজ্যমান ১৯৪৬ শালে নেহেরুর সাধারণ সভা মুসলিম গুণ্ডারা বরবাদ করা, এমন কি নেহেরুকেও হত্যারও পরিকল্পনা হয়েছিল। এই খবর যখন কংগ্রেস কার্যকর্তারা পেলেন, তখন তাদের বোধগম্যই হচ্ছিলনা, যে তাদের কি করা উচিত হবে। এই সময় সিন্ধের বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা চিমন দাস ও লালা কৃষ্ণচন্দ্রেরা সংঘের প্রান্ত প্রচারক রাজপাল পুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নেহেরুর সুরক্ষার জন্য স্বয়ংসেবকদের সহায়তা চান। রাজপালজী সহয়াতার অঙ্গিকার করেন, এবং মুসলিম লীগের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন।
এর পরেই হৈদরাবাদে নেহেরুর এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংঘের স্বয়ংসেবকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা একদম চৌখশ ছিল। তাদের করনে এই সাধারণ সাভায় কোনো গড়বড় হয়নি। এমন কি কোনো বিঘ্নও ঘটেনি। তথ্যসূত্র- _( ‘Hindus in Partition – During and After’, www.revitalization.blogspot.in – V. Sundaram, Retd IAS Officer)
গুরুজীর সান্নিদ্ধ্যে হায়দ্রাবাদের স্বয়ংসেবকদের এক বড়সড় একত্রিকরণ হয়। প্রায় দুই হাজার স্বয়ংসেবক উপস্থিত ছিলেন। পূর্ণগণবেশে খুব ভালো সাংঘিক(প্যারেড) কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এর পর গুরুজী তাঁর প্রেরক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তাঁর বক্তব্যের অধিকাংশই ছিল, যা তিনি করাচিতেও বলে ছিলেন। যাই হোক গুরুজী সেই একই বক্তব্যে গুরুত্ব আরোপ করে বলেছিলেন – “নিয়তি আমাদের সংগঠনের উপরে এক গুরুদায়িত্ব আর্পিত করে দিয়েছেন। পরিস্থিতির কারনে রাজা দাঁহিরের মত বীরের এই সিন্ধপ্রান্ত নামক এই ভূমি থেকে আমাদের আস্থায়ী ও তাৎকালিক ভাবে পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছি। এইকারণে হিন্দু-শিখ আত্মীয় বন্ধু ও তাদের পরিজনসহ সুরক্ষিত ভাবে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রাণের বাজি লাগাতে হবে।”
“এই বক্তব্যে আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে গুণ্ডাগিরি ও হিংসার সামনে নতমস্তক হয়ে যে দেশভাগ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ কৃত্রিম। আজ নাহলে আগামীকাল ভারত সম্পূর্ণরূপে অখণ্ড হবে। কিন্তু এই মুহুর্তে হিন্দুদের সুরক্ষার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং” নিজের বক্তব্য সমাপ্ত কারার পর গুরুজী সংগঠনের মহত্ব প্রতিপাদন করেন। “নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিতেই এমন অনেক অসাধ্য কার্য আমরা সম্পন্ন করতে পারব। এইজন্য ধৈর্য রাখুন। সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের পুরুষত্ব দেখাতে হবে…”
এই বৌদ্ধিকের পরে গুরুজী স্বয়ংসেবকদের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলেন। তিনি সবার অবস্থা গতিপ্রকৃতি জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। এমন অস্থির বিপরীত এবং হিংসাত্মক পরিবেশেও গুরুজীর মুখ থেকে নির্গত শব্দ স্বয়ংসেবকদের জন্য বহুমূল্য ও তাদেরকে ধৈর্যশীল করে তোলার জন্য যথেষ্ট সক্ষম ছিল। তাদের জন্য উৎসাহবর্ধনকারী শব্দ ছিলেন গুরুজী নিজেই!
ওদিকে লাহোরে গান্ধীজি শান্তচিত্তে নিজের ভাষণ আরম্ভ করলেন।
“আমার এটা দেখে অত্যন্ত খারাপ লাগছে যে পাঞ্জাব থেকে সকল অমুসলীম লোক পলায়ন করছে। কাল ‘ওহায়ার’ শিবিরেও আমি এটাই শুনেছি। আর আজ লাহোরেও এই একই কথা শুনছি। এরকম উচিত হচ্ছেনা। যদি আপনার এমন মনে হচ্ছে যে আপনার লাহোর শহরের এখন মৃত্যু হতে চলেছে তাই এর থেকে দুরে পালানো উচিত। বরং এই মরণোন্মুখ শহরের সাথে আপনিও মৃত্যুকে বরণ করে নিয়ে আত্মবলিদান করুন। যখন আপনি ভয়পীড়িত হয়ে পড়েন তখন আপনি মরনের আগেই মৃততে পরিনত হয়ে যান। এটা উচিত নয়। আমার কখনোই খারাপ লাগবে না, যদি আমাকে এই খবরটা দেওয়া হয় যে… পাঞ্জাবের লোক ভয়ে পরবশ হয়ে নয়, সম্পূর্ণ ধৈর্যের সাথেই মৃত্যুকে বরণ করেছেন..!”
গান্ধীজির মুখের এই বাক্য শুনে প্রায় দুই মিনিট পর্যন্ত কংগ্রেস কার্যকর্তাদের এটা বোধগম্য হচ্ছিল না যে তারা কি বলবেন- সেখানে বসে থাকা প্রত্যেক কংগ্রেস কার্যকর্তার এমন মনে হচ্ছিল যেন কেউ ফুটন্ত লোহা তাদের কানে ঢেলে দিচ্ছে! গান্ধীজি বলছেন যে -মুসলীম লিগের দ্বারা চালিয়ে যাওয়া প্রাণঘাতী হামলায় সম্ভাব্য মৃত্যুর প্রতিক্ষা ধৈর্যের সাথে করুন। .. এটা কেমন তর পরামর্শ??
লাহোর আসার সময় এক কার্যকর্তা গান্ধীজীকে বললেন যে – “ভারতের জাতীয় পতাকা প্রায় তৈরি হয়ে গেছে, কেবল মাঝ খানের চরখাকে সরিয়ে সেই স্থানে সম্রাট অশোকের প্রতীক চিহ্ণ ‘অশোক চক্র’ কে স্থাপিত করা হয়েছে।”
এটা শুনেই গান্ধীজি খেপে গেলেন- চরখা সরিয়ে সরাসরি ‘অশোক চক্র’ ? সম্রাট অশোক তো বেশ হিংসাই করেছিলেন তাই না? এমন হিংসক রাজার প্রতিক ভারতের প্রতীক চিহ্ণে ?? না কখনোই না!… এজন্য কার্যকর্তাদের বৈঠক সমাপ্ত হতেই মহাদেবভাইকে তৎক্ষণাৎ একটি বক্তব্য তৈরি করে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়ার জন্য আদেশ দিলেন গান্ধীজি।
গান্ধীজী তার বয়ানে লেখালেন – “আমি আজই জানলাম যে ভারতের রাষ্ট্রীয় ধ্বজের অন্তিম নির্ণয় নিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদি ঐ ধ্বজের মাঝখানে চরখা না থাকে, তবে আমি ঐ ধ্বজকে প্রণাম করব না, এখন সবাই জানেন যে ভারতের রাষ্ট্রধ্বজের পরিকল্পনা আমিই করেছিলাম। আর এমতাবস্থায় যদি রাষ্ট্রধ্বজের মাঝখানে চরখা না থাকে, তবে এমন ধ্বজকে রাষ্ট্রধ্বজ রূপে আমি কল্পনাও করতে পারি না।…”
৬ই আগষ্টের সন্ধ্যায় …. মুম্বাইয়ের আকাশে হাল্কা হাল্কা মেঘ থাকলেও, বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বললেও চলে।আজ মুম্বাই এর এক সভাঘরে স্থানীয় উকিলদের সংগঠনের এক কার্যক্রম পূর্বনির্ধারিত হয়ে আছে। যেখানে স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী ড. বাবাসাহেব আম্বেডকরকে স্বাগত ও অভিনন্দিত করা হবে।
কার্যক্রম বড়ই চমৎকার ও আকর্ষকভাবেই সম্পন্ন হয়। বাবাসাহেবও পুরো মনোযোগের সাথে নিজের বক্তব্য উপস্থাপিত করেন। ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম সীমান্তে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা ও হিংসাত্মক পরিবেশের উপরেও তিনি আলোকপাত করেন। পাকিস্থান সম্পর্কে ওনার চিন্তাধারা, পুনরায় ওনার নিজস্ব মজবুত তর্কের সাথে উপস্থাপিত করলেন। জনসংখ্যার শান্তিপূর্ণ বিনিময়ের প্রয়োজনিয়তার উপরেও উনি বলেন।
সব মিলিয়ে কার্যক্রম মোটামুটি সফলই ছিল। বাবাসাহেব পাকিস্তান এবং মুসলমানদের সম্পর্কে তার ভূমিকা এবং চিন্তাভাবনা স্পষ্টভাবে বোঝালেন এবং অধিকাংশ উকিলদের কাছে তা গ্রাহ্য ও বোধগম্য হয়ে উঠেছিল।
৬ই আগষ্টের রাত্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক গুরুজী সিন্ধপ্রান্তের হায়দ্রাবাদে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ রক্ষার পরিকল্পনা করেন এবং ওনার শয়নের সময় হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের সুরক্ষিতভাবে ভারত আনায় নিমগ্ন হয়ে পরেন। এদিকে গান্ধীজি একঘন্টা আগেই লাহোর থেকে পাটনা হয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন। অৃতসর- আম্বালা- মুরাদাবাদ- বারাণসী হয়ে পাটনা পৌঁছাতেই ওনার তিরিশ ঘন্টা সময় লেগে যাবে।
যখন স্বতন্ত্র কিন্তু খণ্ডিত ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তাঁর দিল্লিস্থিত বাসভবনে শয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক সেইসময় ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লবভাই প্যটেল, সমস্ত রাজবংশ এবং রাজবাড়ির ফাইল নিয়ে ব্যাস্ত যারা ভারতে শামিল হতে ইচ্ছুক অথবা অনিচ্ছুক। তার কাছে সময় এখন খুবই কম। তাদের সকলকেই ভারতে শামিল করতে হবে এটাই এখন ওনার প্রধান লক্ষ্য।
ধীরে ধীরে ৬ই আগষ্টের রাত যেমন কালো ও ঘন অন্ধকারাছন্ন হয়ে চলেছিল, তেমনি পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা, সিন্ধু, বালুচিস্তান ইত্যাদি স্থানে থাকা হিন্দু-শিখদের বাড়িতে ভয়ের ছায়া আরো গভীর হয়ে উঠেছিল। হিন্দু ও শিখদের ঘর-বাড়ি, পরিবার, বিশেষ করে মহিলাদের উপরে হামলা প্রচণ্ড তীব্র হয়ে উঠেছিল, সীমান্তবর্তী এলাকায় হিন্দুদের বাড়িতে প্রজ্বলিত আগুনের লেলিহান শিখা দুর থেকে দেখা যাচ্ছিল।
স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আর একটি দিন শেষ হয়ে যাচ্ছিল।