‘
যাদের ডাকটিকিট জমানোর শখ, তারা দেখে এসেছেন, একক ব্যক্তি হিসাবে মহাত্মা গান্ধীর ছবি বা প্রতীক দেওয়া ডাকটিকিটের সংখ্যাই সবচাইতে বেশি। তাঁকে নিয়ে ডাক সামগ্রী বা ফিলাটেলিক আইটেমের সংখ্যা যেমন পোস্টকার্ড, ইনল্যাণ্ড লেটার প্রভৃতি অজস্র। এবং প্রতিবার অধিক সংখ্যায় তা ছাপানো হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অটলবিহারী বাজপেয়ী জামানায় এবং পরবর্তীকালে নরেন্দ্র মোদির জামানায় মহাত্মা গান্ধী ছাড়াও বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্ব ডাকটিকিটে গুরুত্ব পাচ্ছেন যাদের ‘Creators of India’ আখ্যা দেওয়া যায়, স্বাধীন ভারতবর্ষ গঠনে বা তার পূর্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, উপযুক্ত মর্যাদায় উপস্থাপিত। অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও গুরুত্ব দেবার মধ্যে সংগ্রামের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে তুলেছেন বাজপেয়ী ও নরেন্দ্র মোদি সরকার। অথচ মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে শ্রদ্ধা প্রদর্শনে এবং কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় নি। এভাবেই ভারতীয় ডাকবিভাগসহ ভারত সরকারের সমস্ত ক্ষেত্রে সম্মানিত হয়েছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে একাধিক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় বিজেপির শাসনে। অথচ সর্দার ছিলেন একজন কংগ্রেসী নেতা। কংগ্রেস সরকারের আমলে জওহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্বে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ অলংকরণ করেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন তিনি। তবুও ভারতের একতা, অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান পুরুষকে উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেনি ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার। এমনকি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মূর্তি গুজরাটে শোভা পাচ্ছে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের। তাঁর নামে নানান স্মৃতি সৌধ এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছে এই সরকার। সর্বমোট আটটি ডাকটিকিটে সর্দারের নাম বা ছবি এসেছে, সেই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে সেই সংক্রান্ত প্রথম দিনের আবরণী বা First Day Cover, ব্রোশুর ইত্যাদি। প্রস্তুত আলোচনায় থাকছে বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে ছাপানো ভারতীয় ডাকটিকিট।
১৯৬৫ সালের ৩১ শে অক্টোবর একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্যাটেলের নামে প্রকাশিত হয়। দাম ১৫ পয়সা। প্যাটেলের জন্ম শতবর্ষে ৩১ শে অক্টোবর, ১৯৭৫ সালে ভারতীয় ডাকবিভাগ ২৫ পয়সা মূল্যের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। স্ট্যাম্পের রং স্লেট গ্রীন কালার। টিকিটে তাঁর জীবনকাল উল্লেখ করা আছে (১৮৭৫-১৯৫০)।
বিজেপির শাসনামলে যে সমস্ত ডাকটিকিট প্যাটেলের নামে প্রকাশিত হয়েছিল, এবার তার বিবরণ দিচ্ছি। ১৯৯৭ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর প্যালেটের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারক ডাকটিকিট ছাপানো হয়, দাম ২ টাকা। ২০০০ সালে ২ টাকা দামের একটি ডেফিনিটিভ বা সবসময়ের জন্য ব্যবহার্য ডাকটিকিট ছাপানো হয় ৩১ শে অক্টোবর, তাঁর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে। ২০১৬ সালের ১৯ শে মে ‘Creators of India’ সিরিজের অঙ্গ হিসাবে ধূসর-বাদামী রঙের একটি ডাকটিকিট ছাপানো হয়, দাম পাঁচ টাকা। এই বছরই (২০১৬) ৩১ শে অক্টোবর ‘ভারতীয় একতা কে সূত্রধর কো নমন’ (Salute to the unifier of India) এই বাক্যবন্ধ সহ ১০ টাকা মূল্যের একটি বহুবর্ণ রঞ্জিত স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশানাল পুলিশ অ্যাকাডেমি, হায়দ্রাবাদের পক্ষেও দুটি ডাকটিকিট ছাপানো হয় (একটি ২০ টাকা মূল্যের, একটি ৫ টাকা মূল্যের)। বহুবর্ণে রঞ্জিত ২০ টাকা মূল্যের ডাকটিকিটে সর্দারের স্ট্যাচুর দেখতে পাওয়া যায়, তার পিছনে প্রতিষ্ঠানের ছবি। এই সমস্ত ফিলাটেলিক আইটেমের সঙ্গে প্রকাশিত সুদৃশ্য ও অনবদ্য আবরণী বা খাম এবং তথ্যের ফোল্ডার ডাকটিকিট সংগ্রহকারীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
ফুল যেমন আপন সৌরভকে বাতাসের মাধ্যমে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তেমনি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে ভারতবাসীর মধ্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি প্রায় পাঁচশোটি দেশীয় রাজ্যকে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে জুড়ে নিয়ে একতাবদ্ধ দেশ গঠনে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস সরকার তাঁর এই কৃতিত্বকে সঠিক মর্যাদায় উপস্থাপন করেন নি। আপামর ভারতবাসী যখন সর্দারকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখতে চেয়েছিল তখন অভিযোগ, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেই কুর্সিতে বসেন নেহেরু। ভারত মায়ের এই সন্তানকে কিন্তু বিজেপি সরকার অসীম শ্রদ্ধায় মর্যাদার আসন দিয়েছেন। ডাকটিকিট প্রকাশ করেই থেমে থাকেনি বিজেপি। বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতা সম্পন্ন মূর্তি বানিয়ে তাঁর মহৎ কার্যকে বিশ্বাসের দরবারে তুলে ধরেছে এই সরকার।
ভারতের লৌহমানব’-কে জন্মদিনে শ্রদ্ধা —
(৩১ শে অক্টোবর, ১৮৭৫ — ১৫ ই ডিসেম্বর, ১৯৫০)
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে ডাকটিকিট
রজত বিশ্বাস এবং কল্যাণ চক্রবর্তী।