রাঁচীতে শতাব্দীপ্রাচীন বাঙালী বারোয়ারি দুর্গাপূজা এবং সাংস্কৃতিক উদ্যোগ

বীণাপাণি ক্লাব ও ব্রহ্মানন্দ লাইব্রেরী[১৯২২-১৯৭২]

বীণাপাণি ক্লাব ও ব্রহ্মানন্দ লাইব্রেরী, বহু সংগ্রামের পর অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ পঞ্চাশ বছর উত্তীর্ণ হল। যাঁদের মহৎ চেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা এই দুর্লভ সম্পত্তি পেয়েছি; আজ বিরাট উদ্দীপনার সাথে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করছি, তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যেই এই প্রবন্ধ। একে ইতিহাস বলা ঠিক হবে না। ঐকান্তিক ইচ্ছা সত্বেও ইতিহাস রচনা সম্ভব হলো না—পুরণো নথিপত্রের অভাবে। শ্রুতি ও স্মৃতির সাহায্যে যতটুকু উপাদান সংগ্রহ করতে পেরেছি—তাকেই মূলধন করে এই দুরূহ কাজে হাত দিয়েছি। স্বভাবতই এতে অনেক ত্রুটি থেকে যাবার সম্ভাবনা। তবে ভরসা এই তখনকার দিনে আমাদের পূৰ্বজগণ নাম যশ নিয়ে কেউ হৈ চৈ করতেন না। অতএব অজ্ঞানতাবশে কারও নাম বাদ পড়ে গেলেও সে অপরাধ ক্ষমার্হ হবে, এ বিশ্বাস আমার আছে।


বর্তমান ক্লাবের ইতিহাসের গোড়ার দিকে, ডোরাণ্ডা পূজা মন্দিরকে অবলম্বন করে চারটি পৃথক সংস্থা—(১) ডোরাণ্ডা পূজা সমিতি (২) ব্রহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরী (৩) রামকৃষ্ণ উৎসব সমিতি ও (৪) বীণাপাণি ক্লাব নিজ নিজ ভূমিকায় “সত্যম্ শিবম্ সুন্দরমের” প্রতি আত্মনিবেদনের আকাংখাকে একটি সূত্রে গ্রথিত করে রেখেছিল। এদের সকলের কথাই ক্লাবের কথা। পরবর্তীকালে ১৯৬১ খৃষ্টাব্দে এই ৰন্ধন দৃঢ় হয়েছে ক্লাব ও গ্রন্থাগারের সংযুক্তি করণে। ডোরাণ্ডা পূজা সমিতিও ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। তবে পূজা সমিতির কাজের পরিধি ভিন্ন হওয়ায় প্রতি বছর পৃথক কাৰ্যনিৰ্বাহক সমিতি গঠন করা হয়। ক্লাবের যুব সমাজই এতে প্রধান অংশ গ্রহণ করেন।
সংযুক্তিকৃত তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, ডোরাণ্ডা পূজা সমিতির স্থাপনা হয় ১৯১২ সালে; ব্রহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয় পয়লা সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সালে এবং বীণাপাণি ক্লাবের আবির্ভাব ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে।


১৯২২ খৃষ্টাব্দে ব্ৰহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেরও কিছু ইতিহাস আছে। ১৯১২ খৃষ্টাদের পয়লা এপ্রিল, বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশ একজন লেফটেন্যান্ট গভর্ণরের অধীনে নিলে অনেকেই, কেউ বা কলকাতা থেকে আর অধিকাংশই ঢাকা থেকে নবনির্ম্মিত হিনু-ডোরাণ্ডার উপনগরীতে আসেন। বাংলার-র বাইরে প্রবাসী বাংগালীর সংগঠন শক্তি যে কত প্রবল তার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই যে, সে বছর থেকেই মহাসমারোহে দুর্গাপূজা, দোল উৎসব, রামকৃষ্ণ দেবের জন্মোৎসব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। শুধু ডোরাণ্ডায় নয়, হিনুতেও। ক্রমে সমগ্র রাঁচীর বাংগালী সমাজের প্রাণকেন্দ্রও এই উপনগরীতে সম্প্রসারিত হয়।
এই উপনগরীর নবাগত জনগণ তাদের সাংস্কৃতিক জীবনকে সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশে চালিত করার জন্য একটি গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা মনে প্রাণে অনুভব করতে লাগলেন। তখন এই উপনগরীতেই প্রদেশের সরকার, বিহার ও উড়িষ্যা এ. জি. অফিস, গভর্ণমেন্ট প্রেস, বোর্ড অব রেভেন্যু ইত্যাদি দপ্তর সাময়িকভাবে স্থাপিত হয়েছিল। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় এবং বিহার ও উড়িষ্যার তদানীন্তন শাসনকর্ত্তা স্যার এডওয়ার্ড গেইট-এর ৫০০ শত টাকা আর্থিক দানে ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে ডোরাণ্ডা পূজা মণ্ডপের সংলগ্ন একটি ছোট্ট কোঠায় একটি গ্রন্থাগার গড়ে উঠল এবং কয়েক বছরের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানের রূপ নিল। নাম হল, “গেইট পাব্‌লিক্ লাইব্রেরী”।


১৯১৯ খৃষ্টাব্দে প্রাদেশিক সরকারের প্রধান কাৰ্যালয়টি পাটনায় স্থানান্তরিত হয়। তখন, যেহেতু প্রাদেশিক লেফটেন্যান্ট গভর্ণরের নামে এই গ্রন্থাগার; কাজেই গ্রন্থাগারটি পাটনায় নিয়ে যাবার দাবী প্রাদেশিক সংস্থার সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে সোচ্চার হয়ে উঠল এবং অন্যান্য সকলের, বিশেষ করে গ্রন্থাগারের অন্যতম বিশিষ্ট কৰ্ম্মী ৺পরেশনাথ দাশগুপ্ত মহাশয়ের ঐকান্তিক বিরোধিতা সত্ত্বেও সামান্য কয়েকটি আসবাব পত্র ব্যতীত আর কিছুই ধরে রাখা সম্ভব হলো না। আজও পাটনার গর্দানিবাগ অঞ্চলে “গেইট পাবলিক লাইব্রেরী” প্রাদেশিক সরকারের সাংস্কৃতিক জীবনের কর্ণধার রূপে সগৌরবে বিদ্যমান। ডোরাণ্ডার এই গ্রন্থাগার সংগঠনে যাঁরা ব্রতী ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম অবশ্যই স্মরণীয়। তাঁরা হলেন—৺পরেশ দাশগুপ্ত, ৺নৃপেন্দ্র নাথ মজুমদার, ৺শ্রীধর চক্রবর্ত্তী, ৺হরিপদ চট্টোপাধ্যায়, ৺সুরেন্দ্রনাথ সান্যাল, ৺ইন্দু ভূষণ সেনগুপ্ত ইত্যাদি।


“গেইট পাবলিক লাইব্রেরী” পাটনায় স্থানান্তরিত হবার পর আবার সেই সাংস্কৃতিক শূন্যতা উপনগরীর জনজীবনে অনুভূত হতে লাগল। ঐ সময়ে, ১৯২২ খৃষ্টাব্দে স্থানীয় এ. জি. অফিসের অন্যতম কর্মচারী শ্ৰীশ্রীমায়ের শিষ্য ৺শ্ৰীশচন্দ্র গাঙ্গুলী ঘটক মহাশয় স্বগৃহে নিজ সংগৃহীত একটি পুস্তকাগার পরিচালনা করতেন। তাতে পরমহংসদেবের সম্বন্ধে প্রকাশিত নানা বই, স্বামী বিবেকানন্দের কিছু কিছু রচনা, স্বামী সারদানন্দের “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলা প্রসঙ্গ” প্রভৃতি ৫০/৬০ খানা ধর্মগ্রন্থ ছিল। বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ শ্ৰীযুক্ত ব্রহ্মানন্দ মহারাজের “সদ্‌গ্রন্থই শ্রেষ্ঠ সৎসঙ্গ” এই অনুপ্রেরণা ৺ঘটক মশায়কে এই গ্রন্থালয় পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করে। কাজেই ১৯২৫-২৬ খৃষ্টাব্দে যখন তিনি এই গ্রন্থাগারের পরিচালনার ভার তখনকার যুবকগোষ্ঠীর হাতে অর্পণ করেন তখন শ্রদ্ধেয় ঘটক মহাশয়ের ইচ্ছানুসারে গ্রন্থাগারটির নাম “ব্রহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরী” রাখা হয়।


নামে মাত্র গ্রন্থাগার। সভ্য সংখ্যা খুবই সীমিত। অর্থাভাবই প্রধান সমস্যা। তাই সৰ্ব্বপ্রথমে একটি সাধারণ পাঠাগারের (Free Reading Room) পরিকল্পনা করা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু সাধারণ পাঠাগারই বা বিনা অর্থব্যয়ে কিভাবে করা যায়? তখন স্থির হয় সভ্যদের বাড়ি থেকে তাদের নিজস্ব দৈনিক সংবাদ পত্র, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং বাংসরিক পত্রিকা প্রতি সন্ধ্যায় সংগ্রহ করে এনে পাঠাগারে রাখা হবে সৰ্বসাধারণের জন্য। প্রতি রাত্রেই সে সব পত্রিকা পুনরায় স্বস্থানে ফেরত দেওয়া হতো। এইভাবে প্রতি সন্ধ্যায় Statesman, Amrit Bazar Patrika, Forward, Indian Nation, Searchlight, দৈনিক বসুমতী, সাপ্তাহিক হিতবাদী, Modern Review, প্রবাসী ভারতবর্ষ, মানসী ও মর্ম্মবাণী, কল্লোল, শনিবারের চিঠি, উদ্বোধন, প্রবুদ্ধ ভারত ইত্যাদি পাঠাগারের শোভা বর্দ্ধন করত। সে সময় পাঠাগারে প্রথমে কেরোসিনের মেলানো আলো এবং পরে হ্যাজাক আলো ব্যবহার করা হতো। যে সব সহৃদয় ব্যক্তি পাঠাগারে এইসব পত্রিকা সরবরাহ করতেন তাদের মধ্যে সৰ্বশী তারাপদ মুখার্জী, কিশোরীলাল মুখার্জী, ৺সুরেন্দ্রনাথ সান্যাল এবং কৃষ্ণচন্দ্র মারিক মহাশয়দের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়।


“গেইট পাবলিক লাইব্রেরী” এবং পরে “ব্ৰহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর” কাজে সে সময়ে যাঁরা আত্মনিয়োগ করেন তাঁরা হলেন—৺রাজেন্দ্রলাল মুখার্জী, ৺ইন্দু ভূষণ সেনগুপ্ত, ৺প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ৺হিরন্ময় প্রজাপতি, ৺সুরেন্দ্রনাথ সান্যাল, ৺অবিনাশ চন্দ্র সেন, ৺যোগেশ চন্দ্র গুহ, ৺অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ৺বঙ্কিম চন্দ্র রায়, ৺সুরেন্দ্রনাথ সরকার, ৺অতীন্দ্রনাথ দত্ত, ৺পরেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত, ৺নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার, ৺হরিপদ চট্টোপাধ্যায়, শ্ৰীঅতুল চন্দ্র মুখার্জী [হিনুর], শ্রী শ্রীধর চক্রবর্তী ইত্যাদি।
এবং পরবর্তী যুগে–
সৰ্ব্বশ্রী হিমাংশু সান্যাল, শশীভূষণ ভট্টাচাৰ্য, ৺পঙ্কজ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নুটবিহারী দত্ত, ৺অজিত কুমার মুখোপাধ্যায়, সুধাকান্তি রায়, বিমানবিহারী তরফদার, প্রশান্ত বোস, প্রতাপ চন্দ্র রায়, ৺প্রাণধন চট্টোপাধ্যায়, ৺সুবিনয় রায়, ৺জগদীশ চন্দ্র রায়, সুখময় দাশগুপ্ত, জীবনলাল ব্যানার্জী ইত্যাদি।
এ সকল উদ্‌যোগীরা নিজেরা আরও ৪০/৫০ টাকা সংগ্রহ করে বসুমতী সাহিত্য মন্দির প্রকাশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অনুরূপা দেবী, নিরুপমা দেবী, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ইত্যাদির গ্রন্থাবলী ও গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স প্রকাশিত আট আন সংস্করণের বই কিনে গ্রন্থাগারটির কলেবর বৃদ্ধি করেন। প্রবাসী, ভারতবর্ষ, মাসিক বসুমতী, Modern Review ইত্যাদি পত্রিকা রাখার ব্যবস্থা হয়। কোনও এক শুভাকাংখী উদ্বোধন ও প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকা দুটি আনিয়ে দিতেন। স্বর্গীয় আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্মৃতি উৎসবও তাঁরা পালন করতে সুরু করেন।


১৯২৮-২৯ সালে, যখন পাটনা থেকে গ্রীষ্মকালে রাজধানী রাঁচীতে আসতো, তখন বিহার সেক্রেটারিয়েটের কর্মচারী সৰ্ব্বশ্রী প্রমথনাথ চট্টোপাধায় এবং বলরাম ব্যানার্জী মহাশয়দের ঐকান্তিক আগ্রহে ও চেষ্টায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ মহম্মদ ফক্‌রুদ্দীন আহমেদ দুইবার গ্রন্থাগারটি পরিদর্শন করেন। তিনি প্রথমবার (১৯২৮) গ্রন্থ ক্রয়ের জন্য ৪৭৫-০০ টাকা ও পরে (১৯২৯) গৃহনির্ম্মাণের জন্য ৩৫০-০০ টাকা দান করেন। শ্ৰীযুক্ত আহ্‌মেদকে ৫ই জুলাই, ১৯৩১ সালে এক মানপত্রও গ্রন্থাগারের সদস্যগণ প্রদান করেন। সে সময় গ্রন্থাগারের সভ্য সংখ্যা ও পুস্তক সংখ্যা যথাক্রমে ১০ থেকে ১০০ জন এবং ৫০০ থেকে ১১৩১ খানায় উন্নীত হয়। ডোরাণ্ডা পূজা সমিতিও গৃহনির্মাণের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করেন। ডোরাণ্ডা নোটিফায়েড এরিয়া কমিটিও গ্রন্থাগারটিকে মাঝে মাঝে অল্প অর্থ সাহায্য করতো।
১৯৩৩-৩৪ সালে ৺তারকনাথ ঘোষের চেষ্টায় ও তদানীন্তন P.W.D., S.D.O মহাপ্রাণ ৺তারানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উদারমনা কন্ট্রাক্টর ৺সতীশ চন্দ্র বল মহাশয়ের অসীম অনুগ্রহে গ্রন্থাগার ও পূজামণ্ডপের সম্প্রসারণ হয়। পুরণো, জীর্ণ পূজামণ্ডপ সংস্কার করে গ্রন্থাগারের জন্য পৃথক সংলগ্ন ঘর, পাঠাগারের জন্য হলঘর [যেখানে সেদিন থেকে যাবতীয় সাৰ্বজনীন পূজা-পাৰ্ব্বণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জনসভা, কীৰ্ত্তন গান, রামায়ণ গান ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতে থাকে], পূজা-পার্ব্বনে ভাঁড়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংলগ্ন আরও একটী ছোটঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। যে কয়জন তরুণের অক্লান্ত সেবা ও পরিশ্রম সে সময় এই সংগঠনের সাফল্য এনেছিল, তাদের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রী সুধাকান্তি রায়, শশীভূষণ ভট্টাচার্য, হিমাংশু সান্যাল, ৺পঙ্কজ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ৺প্রাণধন চট্টোপাধ্যায়, ৺সুবিনয় রায়, ৺বিমান বিহারী তরফদার, ৺জগদীশ চন্দ্র রায়, সুখময় দাসগুপ্ত, জীবনলাল ব্যানার্জী, ৺অজিত কুমার মুখার্জী ইত্যাদির নাম চিরস্মরণীয়।


১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে পূজামণ্ডপ ও গ্রন্থাগারটির বৈদ্যুতিকরণ হয় এবং এই জন্যে পূজাসমিতি ১০০ টাকা ও গ্রন্থাগার সমিতি ৫০ টাকা দান করে।
মাঝখানের [১৯৪০-৫০] ইতিহাস গতানুগতিক। এই সময়ে গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য সাধারণ সভা মাত্র দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবার ১৯৪১ সালের জুন মাসে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। এই সময়ে যাঁরা গ্রন্থাগার পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁরা হলেন–
৺তারকনাথ ঘোষ, সৰ্ব্বশ্রী প্রশান্ত কুমার বোস, নুটবিহারী দত্ত, শঙ্করলাল মুখার্জী, কালিদাস গাংগুলী, সুবোধ চন্দ্র সেন, রতন ব্যানার্জী, অজিত ভট্টাচার্য্য, মধুসূদন ঘোষ ইত্যাদি।
১৯৫০ সালের নভেম্বর মাসে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রীসুশীল কুমার বসু। তখন থেকে ১৯৫৭ সালের ১৩ই এপ্রিল পর্যন্ত তিনি অতি নিষ্ঠার সাথে গ্রন্থাগার পরিচালনা করেন। ব্রহ্মানন্দ পাব্‌লিক লাইব্রেরীর ইতিহাসে এই দীর্ঘ ছয়/সাত বছর নিঃসন্দেহে এক গৌরবময় অধ্যায়। সে সময় গ্রন্থাগার পরিচালনায় শ্রীযুক্ত বসুকে যাঁরা সাহায্য করেছেন তাঁরা হলেন–
সৰ্বশ্রী সঞ্জিত কুমার ভট্টাচার্য, মণিময় দাশগুপ্ত, সুকুমার বসু, জগন্নাথ দে, সনৎ কুমার দে, নিত্যগোপাল দে, সুনীল সেন, সলিল গুহ, সুশীল মজুমদার, সন্তোষ দাস, উৎপল ব্যানার্জী, অনিল ভট্টাচার্য্য ইত্যাদি।


১৯৫৭ সালে উড়িষ্যার একাউন্টেন্ট জেনারেল অফিস ভুবনেশ্বরে স্থানান্তরিত হন শ্রীসুশীল বসু ও আরও অনেকে ভুবনেশ্বরে চলে যান। কাজেই গ্রন্থাগারের সভ্যসংখ্যা অনেক হ্রাস পায় এবং গ্রন্থাগার ক্রমশঃ বিলুপ্তির পথে যেতে থাকে। এই দুঃসময়ে সৰ্ব্বশ্রী নুটবিহারী দত্ত, প্রবোধ চন্দ্র দাস ও প্রতুল দত্ত এই মূল্যবান সংস্থাটি রক্ষা করতে আত্মনিয়োগ করেন। এদের ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও গ্রন্থাগারটি স্থানীয় জনসাধারণের আগ্রহের অভাবে নিস্তেজ হতে থাকে। বছর কয়েক বাদে অর্থাৎ ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রন্থাগারটি নিশ্চিত অবলুপ্তির হাত থেকে মুক্তি পেয়ে নবজীবন লাভ করে যখন ক্লাব ও গ্রন্থাগার পুনর্গঠিত হয়। বর্তমান ক্লাবের ইতিহাসের এই নতুন অধ্যায় আরম্ভ করার পূৰ্ব্বে বীণাপাণি ক্লাবের ইতিহাস, যার কাগজপত্র প্রায় কিছুই পাওয়া যায়নি, সামান্য পর্যালোচনা করা যাক্।
শুনেছি বীণাপাণি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানতঃ ফুটবল ও হকি খেলার উদ্দেশ্যে। প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মানন্দ পাবলিক লাইব্রেরী ছিল প্রধানতঃ প্রবীণদের এবং বীণাপাণি ক্লাব অপেক্ষাকৃত তরুণদের। সে সময় পাটনা থেকে বিহার সরকারের ক্যাম্প অফিস প্রতি বছর এপ্রিল মাসে রাঁচীতে আসতে এবং পুনরায় নভেম্বর মাসে পাটনাতে ফিরে যেতো। সেই সাথে আসতো অনেক উৎসাহী তরুণ। তারা স্থানীয় তরুণদের সাথে একসাথে খেলাধূলা করতো। এদের সকলের প্রচেষ্টায় বীণাপাণি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন–
সৰ্ব্বশ্রী সন্তোষ কুমার কারক, নরেন্দ্র নাথ ঘোষ, জ্যোতিষ চন্দ্র গুহ, শচীন্দ্র চন্দ্র দত্ত, ৺প্রবোধ চন্দ্র রায়, শান্তি ভূষণ সেনগুপ্ত, ৺রথীন্দ্র চন্দ্র দত্ত, হেমচন্দ্র ঘোষ, ৺সুধীর কুমার ঘোষ, হরিদাস গাঙ্গুলী ঘটক, রামকৃষ্ণ সেন, হিমানী রায় ইত্যাদি।
শ্ৰীযুক্ত সন্তোষ কুমার কারক ক্লাবের ফুটবল ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন। বীণাপাণি ক্লাব নামটি শ্ৰীযুক্ত কারকেরই দেওয়া। খেলাধূলা ছাড়াও ক্লাবের তরুণ সভ্যবৃন্দ আর্ত ও পীড়িতের সেবাব্রতও গ্রহণ করেছিলেন। সৰ্ব্বশ্রী সৌমেন্দ্রনাথ পাল এবং খগেন্দ্রনাথ দে মহাশয়দের চেষ্টায় একটি ব্যায়ামাগারেরও স্থাপনা হয়েছিল।
১৯৩৪ সালে ক্লাবের নাট্য বিভাগ খোলা হয়। নাট্যানুষ্ঠান সাধারণত গ্রীষ্মের ছুটীতে এবং শারদীয়া পূজা উপলক্ষ্যে আয়োজিত হ’তো।
গ্রন্থাগারের পরিচালনায় ইতিপূৰ্ব্বে আভ্যন্তরীণ খেলাধূলা (তাস, পাশা, দাবা, ক্যারম ইত্যাদি) একবার আরম্ভ হয় এবং কিছুদিন বাদেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে শ্রীযুক্ত ধীরেন্দ্রলাল ব্যানার্জ্জীর আগ্রহে ও চেষ্টায় ঐ বিভাগ পুনরায় চালু করা হয়। ঐ সময় থেকেই ক্লাবের তরুণ সভ্যবৃন্দ নিয়মিতভাবে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেন।
১৯৩৭-৩৮ সালে ক্লাবের সভ্য ৺গৌরী মুখার্জী এবং “সেন্ট্রাল পি. ডব্লিউ. ভি.”র তদানীন্তন ওভারসীয়র শ্রীরহমান সাহেবের আনুকূল্যে নাট্যানুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ তৈরী করা হয়। আজও পূজার সময় সেখানে নাটক, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদি মঞ্চস্থ হয়ে থাকে। রহমান সাহেবদের চেষ্টায় তখন ক্লাবের দরজা-জানালাগুলিও নূতন করে তৈরী হয়।
বীণাপাণি ক্লাবের নাট্যানুষ্ঠানে ঐ সময় যাঁরা নিয়মিতভাবে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন তাঁরা হলেন–
৺চিত্তরঞ্জন দত্তগুপ্ত, বলাই চন্দ্র সাঁন্তরা, সৰ্ব্বশ্রী শান্তি সেনগুপ্ত, ফণি মল্লিক, শোভা গোস্বামী, সচ্চিদানন্দ মুখার্জী, গণেশ মুখার্জী, সুনীল মুখার্জী ইত্যাদি। ১৯৩৪ সাল থেকেই বীণাপাণি ক্লাব একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্থার রূপ নেয়। তখন থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত শ্রীযুক্ত নরেন্দ্রনাথ ঘোষের সম্পাদনায় ক্লাবের কাজ সুপরিচালিত হয়।
এর কিছুদিন পরেই চাকুরী বা অন্য কারণবশতঃ ক্লাবের বেশীর ভাগ সদস্যই বাইরে চলে যাওয়ায় ক্লাবের কাজে মন্দা পড়ে এবং ১৯৪৩-৪৪ সাল নাগাদ ক্লাব একরকম লুপ্তই হয়ে যায়; যদিও তার কিছু পরদা, পোষাক, পূজা সমিতির কাছে গচ্ছিত ছিল। ঐ সময়টায় পাড়ায় পাড়ায় অসুখ-বিসুখে সেবাব্রতী হিনুর “সেবক সংঘের”ও প্রায় বিলুপ্তি। তখন একবার হিনু ও ডোরাণ্ডায় ঘরে ঘরে টাইফয়েড এবং মেনিন্‌জাইটিস এর মড়ক দেখা দেয়। তখনকার দিনে টাইফয়েডের জন্য কোন এন্টিবায়টিক ওষুধ বার হয় নি। কাজেই প্রায় সব রোগীই ২১ দিন থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত অসুস্থ থাকত। এই রোগে সেবা-শুশ্রুষার জন্য স্বেচ্ছা সেবকের খুবই প্রয়োজন। হিনুর “সেবক সংঘ” ও ডোরাণ্ডার বীণাপাণি ক্লাবকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা তখনই হয়। শ্ৰীযুক্ত শ্যামাশংকর ঘোষ ওরকে সমরদা তখন ব্যাধি ও মৃত্যুর–বাঁচা ও মরার মাঝখানে সেবার কাজটুকু নিজের কাঁধেই তুলে নেন।
তিনি তখন বীণাপাণি ক্লাবের সম্পাদক। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে তখনকার যুবসমাজ কেবলমাত্র খেলাধূলাতেই নয়, আর্ত্ত ও পীড়িতের অক্লান্ত সেবা, রামকৃষ্ণ জন্মোৎসব উপলক্ষে দরিদ্রনারায়ণ সেবা ইত্যাদি সব রকম গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ হন এবং পরিপূর্ণভাবে সমাজকল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। সমরদার সাথে সুনিশ্চিতভাবে যাঁরা ক্লাবের কাজে জড়িত ছিলেন তাঁরা হলেন—সৰ্বশ্রী অজিত কুমার গুহ, অজিত কুমার ভট্টাচাৰ্য, দেবী প্রসাদ রায়, অজয় কুমার দত্ত, তুষার চক্রবর্তী, বিষ্ণুপদ ঘোষ, প্রভাত চন্দ্র রায় ইত্যাদি। ঐ সময় থেকেই রবীন্দ্র-জয়ন্তীর ব্যবস্থা হয়–ধূমধামের সংগেই তা হত। তাছাড়া হ’ত বিচিত্রানুষ্ঠান। সদস্য শিল্পী অজিত ভট্টাচার্য ও তুষার চক্রবর্তীর নিজ হাতে গড়া মূর্তি দিয়ে বীণাপাণি ক্লাবের বীণাপাণির আরাধনাও তখনই শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের দাঙ্গার সময় ক্লাবের ছেলেরা “আত্মরক্ষা সমিতি” গঠন করে। ভলিবল, টেবিলটেনিস, ও ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা হয়। রাঁচীতে তথা বিহারে টেবিল টেনিস খেলার উৎকর্ষ সাধনে বীণাপাণি ক্লাবের অবদান অনস্বীকার্য্য। এই প্রসঙ্গে ক্লাবের তৎকালীন সম্পাদক শ্রীযুক্ত কান্তি বসুর নাম চিরস্মরণীয়। প্রকৃতপক্ষে তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহ ও চেষ্টায় ক্লাবের মূল্যবান টেবিল টেনিস বোর্ডটি ক্রয় করা হয় (১৯৫৪) এবং খেলার মান ক্রমশঃ খুবই উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়। সে সময় যে সমস্ত সদস্য ক্লাবে নিয়মিত অনুশীলন করে উচ্চমানের খেলোয়াড়রূপে স্বীকৃতি লাভ করেন তারা হলেন–
সৰ্বশ্রী কান্তি বসু, বিশ্বজিৎ ঘটক, দেবু রায়, ভেঙ্কটরমণ আইয়ার, রাখাল চন্দ্র দাস, তারাদাস মুখার্জী, সলিল গুহ, রামমূৰ্ত্তি আইয়ার, সমর রায়, ভূদেব ঘটক, দুর্গা সিং, বাবর প্রসাদ, মুন্নু প্রসাদ, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজন নাথন, দিলীপ সেনগুপ্ত, কাইজার সামাদ, কান্নুলাল ঘটক, সুশীল মুখার্জী, বিশ্বজিৎ গুহ, পৃথ্বীশ মুখার্জী, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচাৰ্য, বিপুল চন্দ্র করঞ্জয় ইত্যাদি।


শ্ৰীযুক্ত বসু ও তাঁর সহকর্মীরা (সৰ্ব্বশ্রী সুনীল সেন, নিমাই ঘোষ, নিখিল মুখার্জী, সুশীল বসু ইতাদি) ক্লাবগৃহের সংযোজন ও মার্জনা ক’রে ক্লাবের পরিধিকে ব্যাপকতর করেন। এই ব্যাপারে স্থানীয় সহৃদয় কণ্ট্রাক্টর ৺নলিনী দেব মহাশয়ের সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। ৺দেব মহাশয় যতদিন জীবিত ছিলেন প্রতি বছর ৺পূজার পূর্ব্বে নিজব্যয়ে ক্লাব বা মণ্ডপের ছোটখাট সংস্কার, চুনকাম ইত্যাদি করিয়ে দিতেন। তাঁর তিরোধানে ক্লাব এক অকৃত্রিম হিতৈষীকে হারিয়েছে।
১৯৬১ সালের গোড়ার দিকে শ্রীযুক্ত কান্তি বসুকে কর্ম্মোপলক্ষ্যে রাঁচীর বাইরে চলে যেতে হয়। ব্রহ্মানন্দ পাব্‌লিক লাইব্রেরীর পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন শ্রীযুক্ত সুশীল কুমার বসুর ভুবনেশ্বরে স্থানান্তরণের ফলে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়, বীণাপাণি ক্লাবের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শূন্যতার সৃষ্টি হয় যখন শ্রীকান্তি বসু রাঁচী থেকে বোকারো চলে গেলেন। গ্রন্থাগার ও ক্লাব, এই উভয় সংস্থারই তখন মূমুর্ষু অবস্থা। উপায়ন্তর না দেখে, এই মূল্যবান সংস্থা দুটীকে পুনর্জীবিত করার সাধু প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হলেন সৰ্ব্বশ্রী বিপুল চন্দ্র করঞ্জয়, মধুসূদন ঘোষ, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশীল মুখার্জী, অজিত গাঙ্গুলী ঘটক প্রমুখ হিতৈষী সভ্যবৃন্দ। এঁদের আগ্রহ ও চেষ্টায় ১৯৬১ সালের ২রা ডিসেম্বর বীণাপাণি ক্লাব হলে এক ঐতিহাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় গ্রন্থাগার ও ক্লাব, উভয় সংস্থার সভ্য ছাড়াও, হিনু ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের সভ্যবৃন্দও বিশেষ আমন্ত্রণক্রমে উপস্থিত ছিলেন। সভায় এক নূতন কাৰ্য্যনিৰ্ব্বাহক সমিতি গঠন করে তার উপরে গ্রন্থাগার ও ক্লাবের পুনর্গঠনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। ঐ সমিতির সভ্যদের নাম–
সভাপতি: শ্রীনুটবিহারী দত্ত
সম্পাদক: শ্রীসত্যরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়
সহ-সম্পাদক: শ্ৰীনিমাই চাঁদ ঘোষ
গ্রন্থাগারিকদ্বয়: শ্রীসুধীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্ৰীবিপুল চন্দ্র করঞ্জয়
কোষাধ্যক্ষ: শ্ৰীঅনিল কুমার ভট্টাচাৰ্য্য
নাট্য-সম্পাদক: শ্রীসন্তোষ নাগ
সভ্যবৃন্দ: সৰ্বশ্রী অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশীল মুখার্জী ও ভূদেব ঘটক।
এদের চেষ্টায় ক্লাব ও গ্রন্থাগারের সংযুক্তিকরণ হয়ে জন্ম নেয় বৰ্তমান “বীণাপাণি ক্লাব ও ব্রহ্মানন্দ লাইব্রেরী”। ক্লাবের সংবিধানও তৈরী হয় এই সময়ে। এখন থেকে নিয়মিত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হতে থাকে এবং যথাক্রমে সৰ্ব্বশ্রী সত্যরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, নিমাই চাঁদ ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রনাথ মজুমদার, বিনোদ বিহারী মুখার্জী, সুশান্ত কুমার রায়, অরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ক্লাবের কাজ সুপরিচালিত হতে থাকে। এই কয় বছর গ্রন্থাগার পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্ব্বশ্রী মনীশ মুখার্জী, প্রকৃতি সোম, পূর্ণেন্দু ব্যানার্জ্জী, সুশান্ত রায়, সমর রায়, বিশ্বজিৎ গুহ ইত্যাদি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। যে সমস্ত শিক্ষ্মী তাদের চিত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন তাদের প্রত্যেককে আমাদের অশেষ ধন্যবাদ।
যাঁরা স্মারক-পত্রের জন্য রচনা দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমরা বিশেভাবে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া কৃতজ্ঞতা জানাই সহানুভূতিশীল মাননীয় বিজ্ঞাপন দাতাদের এবং শুভাকাংখী বন্ধুদের যাঁরা বিজ্ঞাপন সংগ্রহে সাহায্য করেছেন।
সবশেষে স্মরণ করছি সেইসব পূৰ্ব্ববর্তীদের যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতি হিসাবে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা এই দুর্লভ সম্পত্তি পেয়েছি এবং আজ বিরাট-আড়ম্বরের সংগে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করছি। এঁদের মধ্যে অনেকেই আজ ইহজগতে নেই এবং অনেকে রাঁচীর বাইরে অধিষ্ঠিত; কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান তাঁদের স্মৃতিদীপে ও আন্তরিক শুভকামনায় ভাস্বর। সেই অগ্রজদের উদ্দেশ্যে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.