বক্তব্য সংশোধন করুন মোদীজী, একশো ত্রিশ কোটি ভারতীয় ক্ষুব্ধ নয় একেবারেই। তাকিয়ে দেখুন, চল্লিশ সেনার মৃত্যু ঘটানো জঙ্গি আদিল আহমেদের জানাজায় ভিড় জমেছে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে খুশির হাওয়া। ভারতের পেটের ভিতর থেকেই ভেসে ভেসে আসছে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান। দেশভক্তদের শোকমিছিলে হামলা চলছে। ফেসবুকের মতো গণমাধ্যমেও দেখতে পাবেন সে উল্লাস। তাকিয়ে দেখুন মন্ত্রী সিধু কি বলছে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা ব্যানার্জী, সীতারামরা কী বলছে। ভারতের পেটের ভিতর অনেক পাকিস্তান গুটি বেঁধেছে সেই কবেই, জল হাওয়া পেয়ে বেশ তরতরিয়ে উঠেছে। ক্ষুব্ধের সংখ্যাটা অনেকটাই কমবে মোদীজী। আমরা যন্ত্রণাকাতর, ক্ষুব্ধ। তা না হয়ে কি করে থাকি? আমরা যে শুধু ভারতবাসী নয়, ভারতীয়, ভারত মায়ের সন্তান। ভয়ানক বিস্ফোরণে সেনা ভর্তি গাড়ি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সঙ্গে বাইরে ওৎ পেতে থাকা জঙ্গিরা শুরু করল বুলেট বৃষ্টি। বিস্ফোরণের ধোঁয়া কাটতেই বীভৎস দৃশ্য ফুটে উঠল। রাস্তার বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়ানো সিআরপিএফ জওয়ানদের টুকরো টুকরো শরীর। যুদ্ধের ময়দানে নয়, চল্লিশ জন জওয়ানের নির্মম মৃত্যু ঘটল নিশ্চিন্ত পথে। আহত জওয়ানের সংখ্যাও পঞ্চাশের বেশি। এমন ভয়াবহ নাশকতা কে বা কারা ঘটালো, কেন ঘটালো সে প্রশ্ন সরকারি স্তরে তদন্তের বিষয় হলেও বাস্তবের নিরিখে নয়। কয়েক দশক ধরে এমন নাশকতা ঘটছেই। পিছনে যে সরাসরি আছে পাকিস্তানের নানা ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন এবং তাদের অনুপ্রাণিত ও পুষ্ট এদেশীয় জঙ্গিরা তা সবাই জানে। এদিনের নাশকতা ঘটিয়েছে শ্রীনগরের বাসিন্দা জঙ্গি আদিল আহমেদ। সঙ্গী ছিল আরও যারা বাইরে থেকে ঘিরে ধরে গুলিবর্ষণ করে গা ঢাকা দিয়েছে। পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদ বুক ঠুকে আক্রমণের দায় স্বীকার করে নিয়েছে যার প্রধান মাসুদ আজাহার। আপনিও ক্ষুব্ধ, কিন্তু কী করবেন? প্রত্যাঘাত? সেটা খুব জরুরি।
পাল্টা সমুচিত আঘাতই ক্ষতের প্রলেপ, পাকিস্তানের জঙ্গিপনা রোখার জন্য পাল্টা আঘাতে ভয় ধরানো এবং স্বাধীন সার্বভৌম শক্তিশালী রাষ্ট্রের মর্যাদা পুনরুদ্ধার দরকার। কিন্তু তার পর? আমেরিকা পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে লাদেনকে মেরেছে। উড়ি সন্ত্রাসি হামলার পর আমাদের সেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে পাকিস্তানে ঢুকে ওদের খতম করে এসেছে কিছু আগেই। তবুও পাকিস্তানের ভারত নীতি, জঙ্গিবাদ, কাশ্মীর নীতি একই আছে তা ওরা বার বার প্রমাণ করছে। চল্লিশের পাল্টা চারশো মারতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে হবে। তাতেও পাকিস্তান সংযত হবে না তার কারণ, রাষ্ট্রীয় বিকাশ ও শান্তি ওদের লক্ষ্য নয়, ওদের লক্ষ্য ধর্ম বিদ্বেষ প্রসূত হিন্দু ভারতের বিনাশ, তার জন্য জিহাদ।
চারিদিকে শত্রু বেষ্টিত হয়েও ইজরায়েল যা পারে বিশাল ভারত তা পারে না কেন? ইতিহাস সাক্ষী, গৃহশত্রু বড়ো শত্রু। যখন এতগুলো সৈনিকের নির্মম মৃত্যুতে দেশ যন্ত্রণায় ছটফট করছে, সৈনিক বেশে প্রাণবন্ত যুবকেরা কফিন বন্দি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রক্ত-মাংসের পিণ্ড হয়ে সন্তান হারা মা-বাবার ঘরে ফিরছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দিকে দিকে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে ঠিক তখন এই দেশেই আওয়াজ উঠছে ‘তদন্ত না করে পাকিস্তানকে দোষ দেওয়া উচিত নয়’, ‘যুদ্ধ সমাধান নয়’, ‘পাকিস্তান দায়ী নয়’। এরা কী নিজ দেশের উপর আঘাতে যন্ত্রণাক্লিষ্ট নয় ? দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আজও এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে চায় না কেন? এরা, হুরিয়ত নেতারা, পাকিস্তানবাদি মেহবুবা, ফারক আব্দুল্লা, পাথরবাজদের সমর্থক রাজনৈতিক নেতা ও সমাজকর্মীরা, এরা আজও সক্রিয় পাকিস্তান আর তাদের জঙ্গিদের সহায়তায়। দেশের ভিতর দেশেদ্রোহী না থাকলে কয়েক জন বন্দুকধারি জঙ্গি কখনই নাশকতা চালাতে পারে না। এরাই ওদের সহযোগী টিম। ঘরের শত্রু নির্বিচারে দমন না করলে কোনো যুদ্ধ কোনো প্রচেষ্টাই পাকিস্তান ও ইসলামিক সন্ত্রাসি আক্রমণ থেকে ভারতকে বাঁচাতে পারবে না।
উপত্যকায় যারা সেনার উপর হামলে পড়ে পাথরে পাথরে ক্ষত-বিক্ষত করে তারা শুধুই পাথরবাজ নয়, তারা পাকিস্তান ও তাদের জঙ্গিদের হয়ে চরবৃত্তি করে, দেশের ভিতরের সকল সন্ধান সরবরাহ করে। তারা ওই জঙ্গিদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে, আশ্রয় দেয়, খাবার ওষুধ অস্ত্রের জোগান দেয়। তারপর সেই জঙ্গিরা কখনো সেনার সামনে বিপন্ন হয়ে পাথর হাতে সেনাকে আক্রমণ করে। ওই পাথরবাজরা কোন হিসাবে জঙ্গি নয়? দেশের যে সকল রাজনৈতিক দল ও নেতা, সমাজকর্মী, কলাকুশলিরা ওই পাথরবাজদের সমর্থনে পথে নামে, দেশের সেনার উপর চাপ সৃষ্টি করে ও সেনার হাত-পা বাঁধতে চায় তারাও ওই জঙ্গিদের থেকে আলাদা নয়। এরা সকলে মিলে একটা টিম, একটা শত্রুদল।
বাকস্বাধীনতার নামে যারা দিল্লির বুকে জঙ্গি আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিশোধে মুষ্ঠি ছুঁড়ে ছুড়ে ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো করার প্রতিজ্ঞা করছিল তাদের সঙ্গে পাকিস্তান ও পাকিস্তানি জঙ্গিদের কোনো পার্থক্য নেই। এরা সকলেই ভারতের বরবাদি চায়, ভারতকে টুকরো টুকরো করে দিতে চায়। ভারতের ভিতরে ওই পাকিস্তানি জঙ্গি আর ওই পাথরবাজদের শক্তির উৎস কী এই টুকরো গ্যাঙ নয়! ওই টুকরো গ্যাঙের সমর্থনে তাদের রক্ষাকবজ হয়ে ছুটে গিয়েছিল রাহুল গান্ধী,প্রকাশ কারাত, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা। এক শ্রেণীর টিভির পর্দায় এসে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে সরকারকেই আক্রমণে নেমেছিল। সমস্ত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হবার পরও অরবিন্দ কেজরিওয়াল ওদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার অনুমতি আটকে রেখে ভারতকে যারা টুকরো করতে চায় তাদের রক্ষাই তো করছে, আর ভারতের সর্বনাশকে ত্বরান্বিত করছে।
জম্মু-কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতারা দেশের কোন সেবায় লাগে যে তারা দেশের নিরাপত্তা, গাড়ি, বাংলো, ভাতায় পুষ্ট হবে? ওরা প্রকাশ্যেই দেশ বিরোধী। জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তান ও সকল সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিদের প্রধান অবলম্বন, আশ্রয়দাতা, জোগানদাতা, রক্ষক, সহায়ক। ভারতে থেকে, ভারতের খেয়ে, ভারতের নিরাপত্তা ও সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ওরা স্লোগান তোলে ‘পাকিস্তান হামারা হ্যায়, হাম পাকিস্তানি হ্যায়’। সরকারি সুযোগ-সুবিধা তো অনেক পরের কথা, কেন ওরা জেলে না পচে মুক্ত সমাজে লাটসাহেবি করছে? কে সে ব্যবস্থা করেছে?
পাকিস্তানের হয়ে দেশের ভিতর থেকে বড়ো খিলাড়ি মেহেবুবা মুফতি ও ফারুক আব্দুল্লা, ওমর আব্দুল্লাও। উপত্যকায় সফল নির্বাচনের জন্য ওরা পাকিস্তান আর জঙ্গিদের ধন্যবাদ দেয়। ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের হয়ে ওকালতি করে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় সেনার উপর চাপ সৃষ্টি করে পাকিস্তান ও জঙ্গিদের পথ তৈরি করে, বাঁচিয়ে নেয়। এরাই শুরু থেকে জম্মু-কাশ্মীর শাসন করছে। এদের শাসনেই কাশ্মীরি হিন্দুরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, বিতাড়িত হয়েছে, আর পাকিস্তানি জঙ্গিদের ঘাটি ও ভারত বিরোধী পাকিস্তানি মতবাদের আখড়া হয়েছে। এরাই ধারা ৩৭০-এর বড়ো সমর্থক। এরা সকলেই বাইরে থেকে পাকিস্তান ও জঙ্গিবাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ও রক্ষক, ভিতর থেকে আরও অনেক বেশি।
পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র, সীমার ওপারে। সীমায় তারা আঘাত হানতেই পারে, তা নিজ জমি থেকেই সম্ভব। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে যদি তাদের সহযোগী না থাকে তবে ভারতে প্রবেশ করে বাসা বেঁধে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে সকল সুলুকসন্ধান করে আঘাত হানা অনেক দূরের কথা, এক মুহূর্ত টিকে থাকা সম্ভব নয়। ইতিহাস সাক্ষী, ভারত বার বার বিশ্বাসঘাতক গৃহশত্রুর কারণে পর্যুদস্ত হয়েছে। পাকিস্তান কোনওদিক দিয়েই ভারতের সমকক্ষ নয় তবু ভারতের সব চেয়ে বড়ো বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে ভারতের ভিতরের এই পাকিস্তানিরা। সীমায় পাকিস্তানকে আটকে রাখা বা চূর্ণ-বিচূর্ণ করা ক্ষমতা ভারতের আছে, তা যে কোনো মুহূর্তেই ভারত করতে পারে। কিন্তু যে দেশে গৃহশত্রু আছে সেখানে বহিঃশত্রুর শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়। ভারতের ভিতর পাকিস্তান দ্রুত বেড়ে চলেছে সর্বস্তরে। ভারতের বিপদ সীমাপারের পাকিস্তান নয়, ভারতের ভিতরের পাকিস্তান।
পাল্টা আঘাত করে পাকিস্তানের কিছু সেনা মেরে হয়তো গায়ের জ্বালা জুড়াবে, পাকিস্তান শোধরাবে না। ধর্মবিদ্বেষ আর জনবিস্ফোরণের যুগে জঙ্গি মেরে জঙ্গি শেষ হবে না। ভারতের ভিতর ওদের পা রাখার জায়গা যেন না থাকে সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। যত বাধাই থাকুক অবিলম্বে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার খর্ব করে বাকি ভারতের সঙ্গে একাকার করুন আর ভারতের ভিতরের পাকিস্তানিদের নির্মম ভাবে নিশ্চিহ্ন করুন মোদীজী। পাকিস্তানকে যে কোনো সময় শাস্তি দেওয়া সম্ভব, আগে গৃহশত্রু বিনাশ করুন মোদীজী, তবেই ভারত নিরাপদ, নতুবা এরাই একদিন ভারতের পতন ঘটাবে।
প্রীতীশ তালুকদার