কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে পাওয়া যাওয়া বাঙালি দাসদের নাম, পরিচয়, জীবনী ঘাটতে গিয়া বড় ধরণের ইমোশনাল ধাক্কা খাইছিলাম। কেননা, এই ইতিহাসগুলা ছিল বড় বর্বর ও নির্মম। তো আজকে Sina Hasan ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্কাইভে থাকা বাঙালি দাসদের ব্যাপারে জানতে চাওয়ায় হাতের কাছে থাকা কিছু তথ্য পাঠাইলাম। তখনই অপেক্ষাকৃত কম দুঃখজনক এক মা ও মেয়ের ইতিহাস চোখের সামনে চলে আসলো। ঐ আমলের প্রেক্ষাপটে খানিকটা হ্যাপি এন্ডিং (তবে অস্বস্তিকর) হিসাবেও পাঠ করতে পারেন।

এই বাঙালি মা পরিচিত ছিলেন এনসিয়েলা (এঞ্জেলা) ভ্যান বেঙ্গালেন (১৬৪৬-১৭২০) নামে। তার আদি বাঙালি নাম জানা যায় না। দাস জীবনের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ায়। তার মালিক ছিলেন ডাচ নৌ কমান্ডার ও প্রশাসক ইয়ান ভ্যান রিবেক, যিনি পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। দাস এনসিয়েলারও তখন নিবাস হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে পরবর্তিতে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়। এই সময় তিনি বিয়ে করেন, এবং ফল ও সবজির ব্যাবসা শুর করেন। অচিরেই এনসিয়েলা পরিণত হন কেপ অফ গুড হোপের অন্যতম ধনী একজন ব্যক্তিতে। এমনকি ঐ আমলে কেপ অঞ্চলে তিনি ছিলেন একমাত্র অশ্বেতাঙ্গ নারী, যিনি জমির মালিক ছিলেন। আমাদের জন্যে আয়রনিক ব্যাপার হচ্ছে যে এক পর্যায়ে তিনি নিজেই একাধিক দাসের মালিক হয়ে যান। আফ্রিকার কালো মানুষদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন, যারা তাকে ডাকতেন “মায়ে এনসিয়েলা” বা মা এনসিয়েলা নামে।

বিয়ের আগে ও পরে এনসিয়েলা বেশ কয়েকজন সন্তানের জন্ম দেন। তবে, এই সন্তানদের মধ্যে কেবল একজন কন্যা সন্তানই বিখ্যাত হয়ে আছেন, যার নাম ছিল আনা ডে কনিঙ্ঘ। আনার জন্ম হয় এনসিয়েলার দাস জীবনে। ফলে আনা জন্ম থেকে দাস ছিলেন। কিন্তু পরবর্তি জীবনে তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং ধনী (খুব সম্ভবত তৎকালীন আফ্রিকায় ডাচ কলোনির সবচাইতে ধনী মহিলা)। তিনি ওলফ বার্ঘ নামক একজন সুইডিশ ব্যাক্তিকে বিয়ে করেন। তাদের বারো জন সন্তান ছিলেন। বার্ঘ পরিবারটি পরবর্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সম্ভ্রান্ত পরিবারে পরিণত হয়। এবং আমাদের জন্যে অস্বস্তিকর তথ্য হচ্ছে যে ১৭৩৪ সালে মৃত্যুর সময় আনা ডে কনিঙ্ঘ ছিলেন প্রায় জনপঞ্চাশেক দাসের মালিক।

ছবিঃ আনা ডে কনিঙ্ঘ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.