লাভ জিহাদ আছে না নেই জানিনা, তবে গত ৭৫ বছর মাত্র একটি সিনেমাতে দেখানো হয়েছিল যে হিন্দু নায়ক এবং মুসলিম নায়িকার বিয়ে l মনিরত্নমের ‘বম্বে’ l সারা দেশ উত্তাল l প্রতিবাদে পিছিয়ে যায় মুক্তি l কিন্তু নরসীমা রাও পরিবর্তন করেন গান্ধী পরিবার যুগের সাংস্কৃতিক ধারা l মুক্তি পায় বম্বে l প্রথম এবং শেষ l তখন বুঝিনি প্রতিবাদের কারণ কি? আপাদমস্তক একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবিতে কিসের সমস্যা? সমস্যা এই নায়ক নায়িকার পরিচয়ে l বহু সিনেমায় মুসলিম ছেলে এবং হিন্দু মেয়ের বিয়ে দেখানো হয়েছে l কিন্তু বম্বে একমাত্র ব্যতিক্রম l

১৯৯১ তে সোভিয়েতের পতন হলে ভারতীয় সিনেমা, থিয়েটার, মিডিয়া, শিক্ষাজগতে কেজিবির বিনিয়োগ বন্ধ হয় l বামপন্থীরা শুরু করে নতুন ন্যারেটিভ তৈরির কাজ l কারণ নতুন বিনিয়োগকরি প্রয়োজন l ২০০২ তে তৈরি হয় মিস্টার এন্ড মিসেস আয়ার l একজন মুসলিম ছেলে, যে নিজেকে রাজা বলে পরিচয় দেয়, তার সঙ্গে একজন তামিল ব্রাহ্মণ বিবাহিতা মহিলার (আধা)পরকীয়া প্রেমের কাহিনী l অপর্ণা সেনের পক্ষে এটা সম্ভব সবাই জানি l কিন্তু এটা ঠিক পরমা পার্ট ২ র মত সরলরৈখিক সমীকরণ ছিল না l প্রশ্নের উত্তর খোজা শুরু করি l কেন আয়ার? প্রথমে মনে হয়েছিল তামিল ব্রাহ্মণরা ভারতের সবচেয়ে মেধাবী হিন্দু গোষ্ঠী বলে হয়ত l

কিন্তু ভুল ভাঙলো l স্বস্তিকা পত্রিকার হয়ে বাঙালীর বাণিজ্য নিয়ে একটা লেখা লিখতে গিয়ে কিছু তথ্য খোঁজ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইতিহাসের অধ্যাপিকার থেকে একটা তথ্য পেলাম l
(Ref: David Kopf, The Brahmo Samaj & The Shaping of the Modern Indian Mind).ব্রাহ্ম সমাজের রীতিনীতি তৈরি করতে দায়িত্ব দেয়া হয় দক্ষিনী ব্রাহ্মণদের এবং তাঁদের দিয়ে উপনিষদ মন্ত্র পাঠ করানো হত l এই নিয়ে কেশব সেন এবং দ্বারকানাথ ঠাকুরের গন্ডগোল বাধে l পরে কেশব সেন নিজের গ্রূপ তৈরি করে নতুন সমাজ তৈরি করেন l কিছুদিনের মধ্যে ঠাকুর রামকৃষ্ণ শুধুমাত্র যুক্ত তর্ক এবং গল্পের মাধ্যমে তৎকালীন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেন খ্রীষ্টান ধৰ্ম এবং ব্রাহ্ম সমাজের l কেশব সেন ঠাকুরের পদতলে ঠাই নেন l এরপরে অনেক জল গড়ায় গঙ্গায় l অনেকে বলেন, অনুশীলন এবং যুগান্তরকে ডুবিয়ে পরের প্রজন্মের এক ব্রাহ্ম নেতা এর শোধ নেন l (যদিও অনুশীলন সমিতির অন্যতম সদস্য ডাক্তারজি সেই ধারাতেই তৈরি করেন আজকের পৃথিবীর বৃহত্তম সামাজিক সংগঠনটি ) l দেশ স্বাধীন হয় l আরও কয়েক প্রজন্ম চলে যায় l কিন্তু দক্ষিনী ব্রাহ্মণদের উপর রাগ থেকে যায় কেশব সেন গ্রূপের ব্রাহ্মসমাজের পরবর্তী প্রজন্মের l ২০০২ তে ছোট্ট বদলা নেয়া হল l তথাকথিত লাভ জিহাদের উপর টালিগঞ্জের নির্মিত প্রথম ছবির নাম হয় মিস্টার এন্ড মিসেস আয়ার l পরিচালিকা অপর্ণা সেন l না ব্যানার্জী, না সেন, না বসু l একেবারে আয়ার l

আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে লাভ জিহাদ নেই l কিন্তু কেউ যদি বিজয়া, বিসর্জন, আর্শীনগর, জুলফিকার, শুধু তোমারি জন্য, শেষ থেকে শুরু, বোঝে না সে বোঝে না, গোত্র এই ছবিগুলোর যে কোন একটা ছবির প্রত্যেক হিন্দু চরিত্রকে মুসলিম এবং মুসলিম চরিত্রকে হিন্দু করে একই কাহিনী, একই সংলাপ রেখে রিমেক তৈরি করে একদিনের জন্য কলকাতায় চালাতে পারে, আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.