আমফান ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে জেলার সমস্ত অংশ। বুধবারের পর থেকে বহু এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। গ্রাম কিংবা শহর, অন্ধকার নেমে আসছে সন্ধে হতেই। আর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল চার্জ দিতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয়দের। শুধু মোবাইল নয়, এমার্জেন্সি লাইট, টর্চ- কোনওকিছুই চার্জ করা যাচ্ছে না বিদ্যুৎ না থাকায়। সমস্যা এতটাই গুরুতর যে বিভিন্ন বাড়িতে চার্জার বা এমার্জেন্সি লাইট নেই বলে মোমবাতি আর হাত পাখাই রাত কাটানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল জেনারেটর চলছে। আর সেই জেনারেটর থেকে বিভিন্ন তার সংযোগে ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শয়ে শয়ে মোবাইল। শুধু মোবাইল ফোন নয়, রয়েছে অন্যান্য ইলেকট্রিকের জিনিসপত্রও। যেগুলি সবই চার্জ দেওয়া হচ্ছে জেনারেটরের সাহায্যে। প্রতিটি জিনিস চার্জ দিতে আলাদা আলাদা দাম ধার্য আছে। একটি মোবাইল চার্জ দিতে কোথাও লাগছে ৩০ টাকা তো কোথাও দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। এমার্জেন্সি লাইট চার্জ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার বিনিময়ে। আর এইভাবেই চার্জ দিয়ে চলছে উপার্জন। এর পাশাপাশি আবার রয়েছে জেরক্স করার কাজও। ঘূর্ণিঝড়ে বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণের দরখাস্ত করতে গেলে সঙ্গে দিতে হচ্ছে রেশন কার্ড, আধার কার্ড অথবা ভোটার কার্ডের ফটো কপি। প্রতিটা দরকারি কাগজ জেরক্স করতে খরচ ৫ টাকা। উপায় না দেখে ৫০ টাকা দিয়ে যেমন মোবাইল চার্জ দিচ্ছেন, তেমনি পাঁচ টাকা দিয়ে প্রতিটি কাগজ জেরক্সও করছেন। সাধারণত প্রতি পৃষ্ঠা জেরক্সের জন্য এক টাকা নেয়। কিন্তু সাইক্লোন সেই ছবিটা বদলে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মোবাইল চার্জ দেওয়ার দোকানের দোকানি সেলিম আলি বলেন, “যার মোবাইল চার্জ দিতে যত বেশি তেল খরচ হবে তার থেকে তত বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর এখন যদি এইভাবে পরিষেবা না দিতাম তাহলে কেউ মোবাইলে যোগাযোগই করতে পারত না। চারিদিকে ইলেকট্রিক না থাকার কারণে জেরক্সও করা যাচ্ছে না। ফলে টাকা বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছে।”
এলাকার বহু মানুষ রয়েছেন অন্য শহরে। কেউ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে তো কেউ অন্য কারণে ভিনরাজ্যে। এদিকে সুপার সাইক্লোনে লন্ডভন্ড এলাকা। বাড়ির খবর ভিনরাজ্যে থাকা মানুষগুলিকে জানাতে একমাত্র ভরসা মোবাইল। আর তাই মোবাইল চার্জ দেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। এক গ্রাহক নমিতা সর্দার বলেন, “অবস্থা এমনই হয়েছে যে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিদিন। বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে দিন চলছে। তার মধ্যেও ৪০-৫০ টাকা দিয়ে মোবাইল চার্জ দিতে হচ্ছে। ভিনরাজ্যে থাকা বাড়ির মানুষটির সঙ্গে নাহলে কথা বলা হবে না।”