১৮৩৬ সালে ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি নামে প্রথম গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় এটি ছিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন এই লাইব্রেরির প্রথম মালিক। ভারতের তদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল লর্ড মেটকাফ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ লাইব্রেরির ৪,৬৭৫টি বই এই গ্রন্থাগারে দান করেছিলেন। এই দানের ফলেই গ্রন্থাগারের গোড়াপত্তন সম্ভব হয়েছিল। এই সময় বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার বইই এই গ্রন্থাগারের জন্য ক্রয় করা হত। কলকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গ্রন্থাগারকে অর্থসাহায্য করতেন; সরকারের কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যেত। এই সময় এই গ্রন্থাগারে বহু দেশি ও বিদেশি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগৃহীত হয়, যা আজও রক্ষিত আছে। ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরিই ছিল শহরের প্রথম নাগরিক পাঠাগার।
১৮৯১ সালে কলকাতার একাধিক সচিবালয় গ্রন্থাগারকে একত্রিত করে গঠিত হয় ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি। এই গ্রন্থাগারের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল গৃহ মন্ত্রকের গ্রন্থাগার।
১৯০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টায় ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি ও ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিকে সংযুক্ত করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সংযুক্ত লাইব্রেরিটি ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি নামেই পরিচিত হয়। এই সময় গ্রন্থাগারটি উঠে আসে আলিপুরের বেলভেডিয়ার রোডস্থ মেটকাফ হলের বর্তমান ঠিকানায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লাইব্রেরিটি এসপ্ল্যানেডের জবাকুসুম হাউসে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি আবার মেটকাফ হলে উঠে আসে। এই সময় লাইব্রেরির নতুন নামকরণ হয় জাতীয় গ্রন্থাগার বা ন্যাশানাল লাইব্রেরি। ১৯৫৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ জাতীয় গ্রন্থাগারকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে প্রায় ২০ লক্ষ বই এবং ৫ লক্ষ পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
“ভারত সরকারের পর্যটন ও সংস্কৃতি মণ্ত্রকের” অধীনে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিকে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে নিম্নলিখিত ভাষাগুলির জন্য স্বতন্ত্র ভারতীয় ভাষা বিভাজন রয়েছে :
অসমিয়া
বাংলা
গুজরাটি
হিন্দি
কানাড়ী
কাশ্মীরি
মালায়ালম
মারাঠি
ওড়িয়া
পাঞ্জাবি
সংস্কৃত
সিন্ধি
তামিল
তেলুগু
উর্দু
কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি ১৮,০০০-রও অধিক পাঠকগণদের দ্বারা পরিদর্শিত হয়। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির সংগ্রহে প্রায় ২০,০০,০০০ পুস্তক এবং ৫,০০,০০০ প্রাচীন পাণ্ডুলিপি রয়েছে। এর সুবিশাল এলাকা প্রায় ১৩০ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত। বর্তমানে কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি হল এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি গ্রন্থাগার।
কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির প্রসিদ্ধ দাতারা হলেন স্যার আশুতোষ মুখার্জি, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখরা।
কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ভারতের সমস্ত প্রধান সংবাদপত্রের সংগ্রহ রয়েছে। ঐতিহাসিকগণ এখানে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সংবাদপত্র ও সাময়িক প্রকাশনার মূল্যবান সংগ্রহ পেতে পারেন।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি-বিরল সংগ্রহের পুস্তক, প্রাক-ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রকৃত চিঠিপত্র এবং মন্তব্যের ভাণ্ডারগৃহ।