কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়। নামটা শুনেছেন? হয়তো নামটাই শুনলেন প্রথমবার। স্বাধীনতা সংগ্রামী তো বটেই। বিশেষ করে দেশের তাঁতশিল্প ও নাট্যসংস্কৃতিতে রেনেসাঁ ঘটিয়েছিলেন কমলাদেবী। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-র প্রতিষ্ঠাতেও অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে তাঁর।
মহাত্মা গান্ধী যখন স্বাধীনতার আন্দোলনে গোটা দেশকে সামিল হওয়ার ডাক দিচ্ছেন, তখন মহিলাদের অধিকার রক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন কমলাদেবী।
কমলাদেবী বিশ্বাস করতেন, নাগরিক অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা– সব ইন্টার-রিলেটেড। মহিলাদের উন্নয়ন হলেই সমাজের উন্নয়ন হবে। সমাজের উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন।
১৯০৩ সালের ৩ এপ্রিল মেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়। তিনি পিতামাতার চতুর্থ এবং কনিষ্ঠ কন্যা সন্তান। তার বাবার নাম আন্নানথায়া ধারেশ্বর ও মায়ের নাম গিরিজাবা। কামালদেবী একজন ব্যতিক্রমী ছাত্রী ছিলেন এবং অল্প বয়স হতে তিনি দৃঢ়চেতা এবং সাহসী ছিলেন। তার বাবা-মা’র মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং রামাবাই রানাডে এবং অ্যানি বেসন্তের মতো মহিলা নেতাসহ অনেক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে বন্ধুত্ব ছিল। যা তরুণ কমলাদেবীকে স্বদেশী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য উৎসাহী করে তুলেছিল।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের বছর দুই পরেই স্বামী মারা যান। তারপরে চেন্নাইয়ে রানী মেরি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে সুহাসিনী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কমলাদেবীর পরিচয় হয়, যিনি সরোজিনী নাইডুর ছোট বোন ও ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টির নেত্রী ছিলেন। সুহাসিনী ছিল কমলাদেবীর সহপাঠি, পরবর্তীতে তিনি কমলাদেবীকে তার প্রতিভাবান ভাই হারিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। হারিন্দ্রনাথ ছিলেন কবি-নাট্যকার-অভিনেতা। অবশেষে, যখন কমলাদেবীর বিশ বছর বয়স, তখন হরিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে হয়। এর ফলে নানা সমসযার সম্মুখীন হতে হয়। পরের বছরে তাদের একমাত্র পুত্র রাম জন্মগ্রহণ করেন।
বিবাহের অল্পসময় পরে, হরিন্দ্রনাথ লন্ডন ভ্রমণে চলে যান এবং কয়েক মাস পরে কামালদেবীও তার সাথে যোগ দেন। সেখানে গিয়ে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেডফোর্ড কলেজে ভর্তি হন এবং পরে সমাজবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
লন্ডনে থাকাকালীন কমলাদেবী ১৯২৩ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তিনি অবিলম্বে দেশের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত গান্ধী সংগঠন সেবা দলে যোগদান করার জন্য ভারতে ফিরে আসেন।এই দলের মাধ্যমে নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে একত্রিত করেন।
১৯২৬ সালে তিনি মাদ্রাসের প্রাদেশিক বিধানসভায় অংশ নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স (এআইডাব্লিউসি) এর প্রতিষ্ঠাতা মার্গারেট ই ক্যাসিন্সের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে তিনি ভারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রথম মহিলা নেত্রী হয়েছিলেন। যদিও তিনি কয়েকদিনের জন্য প্রচারণা চালাতে পারেছিলেন এবং তিনি ৫৫টি ভোটের পার্থক্যে হেরেছিলেন।
কমলাদেবীকে বলা হয় ‘কালচার কুইন অফ ইন্ডিয়া’, নাট্যসংস্কৃতিতে তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, সেন্ট্রাল কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এম্পোরিয়াম, ক্রাফটস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া তৈরি তাঁরই হাতে। ১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর ৮৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।