কাটরার হোটেল থেকে তিনটে গাড়ি সকাল আটটায় একসাথে ছাড়ল। দুটো ছোট বাস যারা ট্রাভেল এজেন্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাতায়াত ও সাইটসিন করবে এবং একটি শেভরোলে ট্যাভেরা যাতে পাঁচজনের একটি পরিবার যার ক্ষুদ্রতম সদস্য আট বছরের একটি মেয়ে। সঙ্গে আছে তার মা, বাবা, অকাল বার্ধক্যে নড়বড়ে দাদু আর অমৃতসর স্টেশনে নেমেই পা ভেঙে পঙ্গু দিদা। অমৃতসরের হাতুড়ে বলেছিল পা ভাঙেনি, কেবল স্প্রেইন হয়েছে। খান কতক পেইনকিলার আর মলম নিজেই বেচে বিদায় নিয়েছিল। কাটরায় সরকারি হাসপাতালে ধরা পড়ল একটা নয় দুটো হাড় ভেঙেছে হাঁটুর ঠিক নীচ থেকে এবং মূল ভারবাহী হাড় টিবিয়া ভেঙে সরে গেছে। শল্যচিকিৎসা ছাড়া গতি নেই এবং সেটা কলকাতায় ফিরেই করা ভালো। ট্রাভেল এজেন্ট টাকা ফেরৎ দেবে না, ওদিকে তৎকালেও এসি টু টায়ারের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাড়তি কুড়ি হাজার দিয়ে একটি পালোয়ান ড্রাইভারসহ ট্যাভেরা নিয়ে বকেয়া ভ্রমণ সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা। জামাই শ্বাশুড়ির চিকিৎসাকে অগ্রধিকার দিলেও শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, স্ত্রী, কন্যা এবং ট্যুর অপারেটর অভিজিৎ বোস সকলেই বেড়িয়ে ‘উপভোগ’ করার পক্ষে রায় দিল। তাই আপাতত পায়ে জগদ্দল স্ল্যাব লাগিয়ে ও বেডপ্যান কিনে ওরা সিলেবাস কমপ্লিট করছে। পঁয়ষট্টি হাজার টাকা উসুলের জন্য আরও বিশ-ত্রিশ খরচ করা ছাড়া উপায় নেই।
পাহাড় শম্পা আর সপ্তর্ষির নেশা। ট্রেকিং-এর সাধ থাকলেও এখনও পর্যন্ত হয়ে ওঠে নি। তবে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করলেই অধিকাংশ সময় হিমালয়ের বুকে পিঠেই চড়া হয়। প্রথমে ঠিক ছিল, কিন্নর কৈলাশ, লাহুল স্পীতি শুদ্ধু। জায়গাটা বেশি উঁচু ও যাত্রাটা ধকল সাপেক্ষ বলে শম্পার মা বাবা রাজি হচ্ছিলেন না। তাছাড়া লাহুল-স্পীতি কোনও পছন্দসই ও নির্ভরযোগ্য ট্যুর অপারেটর নিয়েও যাচ্ছিল না। শেষে কাশ্মীরের নাম করাতে মা বাবা দুজনে এক পায়ে খাড়া। চাকরি থাকতে কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়ার পরিবেশ ছিল না বলে অমরেশবাবু কতবার আফশোস করেছেন। আজ বড় মেয়ের সৌজন্যে ভূস্বর্গারোহনের বিরল সৌভাগ্য – ছাড়া যায়? কিন্তু স্বর্গের পথে প্রথম ধাপেই অত বড় দুর্ঘটনা। নেহাৎ বিস্তর খরচ করে বুকিং হয়ে গেছে যা ফেরৎ পাওয়া যাবে না, তাই মেয়ে জামাই নাতনীর আনন্দটা মাটি করবেন না বলে আরতি দেবী অবর্ণনীয় কষ্ট সয়ে হাসি মুখে রয়েছেন। দুই মেয়েই যে যখন বেড়াতে যায় মা বাবাকে ঘুরিয়ে আনে। এর আগে এই বড় মেয়ের সাথে দক্ষিণ ভারত বেড়িয়ে ফেরার পথে মেয়েরই পা ভেঙে যায়। শাড়ির দোকানের দিকে নজর রেখে বাস থেকে নামতে গিয়ে দু পায়ের পাতা মুচড়ে সপাটে পতন। বাসে প্রবল যন্ত্রণা সয়ে বসে থেকে মা বাবা বর আর কন্যাকে জোর করে মাইশোরের বাকি জায়গাগুলো দেখিয়ে নিয়েছিল শম্পা। তারপর একটা পায়ে প্লাস্টার, অন্য পায়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় ক্রেপ ব্যান্ডেজ। টাটা ইন্ডিকা ভাড়া করে মহীশূর থেকে চেন্নাই ফিরতে হয়েছিল কলকাতায় ফেরার ট্রেন ধরার জন্য। মাইশোর থেকে চেন্নাইয়ের ট্রেনের বুকিং ক্যানসেল করা যায়নি। সেটা ছিল ভ্রমণের শেষের দিকে, দেখা প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। দুটো পায়ের পাতা ফাটায় কোনও পায়েই ভর দেওয়া যাচ্ছিল না। তবু বেডপ্যান নেয়নি। তবে কন্যার পটি খুব কাজে এসেছিল ছোট বাইরের জন্য। কিন্তু মায়ের গোটা শরীরবাহী মূল হাড়টাই গেছে এমন ভাবে দু টুকরো হয়ে, যে অন্যের ঠেক নিয়েও দাঁড়াতে পারছেন না। আর এবার আট বছরের নাতনীর জন্য স্বাভাবতই পটি আনা হয়নি। মহিলা সব চেপে চুপে গাড়িতে চুপ করে বসে আছেন। স্ল্যাবের ঘষা লেগে উরুর পেছনের ছাল উঠে যাওয়ায় জ্বালা করছে। কাউকে বলেননি এখনও পর্যন্ত। এত কষ্টের মধ্যেও পাহাড়ি রাস্তার নিসর্গ যেটুকু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা যায় দেখার চেষ্টা করছেন। তাঁর স্বামী সামনের সীটে বসায় বিনা পরিশ্রমে অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছেন।
পাটনিটপে মধ্যাহ্ণভিজনের বিরতির কথা। ছোটো গাড়ি বাসগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে গিয়ে খাবার জন্য পাটনিটপে অপেক্ষা করল ঘণ্টাখানেকের বেশি। একটা পার্কে খাওয়ার কথা ছিল। তার বদলে হতশ্রী এক ধাবায় খাবার পরিবেশন করা হল। সর্দারজি ড্রাইভার শত অনুরোধেও গাড়ির মাথায় বাঁধা প্যাকিং খুলতে রাজি হল না। বেডপ্যান সেখানে বাঁধা, গরম জামাকাপড়ও ওপরে। অনেকেই টয়লেটে গেল। পা ভাঙা মহিলা ছোট বাইরে চেপে গাড়িতে বসে যা হোক করে খেয়ে নিলেন। জায়গাটা বেশ মনোরম। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হল, গায়ে তেমন শীত অনুভূত না হলেও দূরে পাহাড়ের মাথায় বরফ দেখা যায়। ওহ্! শীতকালে এলে আর কোথাও যাওয়ার দরকার হবে না। যাদের গাইডেন্সে আসা, তারা নিজেদের সুবিধামতো ব্যবস্থা করছে। যাত্রীদের মনঃপূত হোক বা না হোক। কারোর তো কিছু করার নেই। সুতরাং গাড়ি চলল। ঝিলম নদী ছুটল সাথে সাথে। ওরা পাঁচজন ছোট গাড়ি নিয়ে অনেকটা সময় এগিয়েই ছিল। কিন্তু বোস তো নয়ই, এমন কি দিন প্রতি ইচ্ছামতো ঘোরার শর্তে ভাড়া নেওয়া সপ্তর্ষিদের শেভরোলেও কিছুতেই পাটনি টপের দর্শনীয় ছোটদের পার্কটায় নিয়ে গেল না। যেখানে গাড়ি থামাতে বলা হয় হতচ্ছাড়া ড্রাইভারকে, থামে তার চেয়ে কমপক্ষে দু মাইল এগিয়ে। মনোমতো ছবি পাওয়া যায় না। এসব জায়গায় তো প্রায় আটটা পর্যন্ত রোদ থাকে। জওহর টানেলের মানে স্বর্গের ঠিক মুখটার একটা ছবি তুলতে হবে। ছোট্ট কুর্চি মা বাবার দেখাদেখি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছে, “দিদু, তোমার কষ্ট হচ্ছে? হিসি পায়নি তো? পা ভালো করে ছড়িয়ে বসবে?”
বনিহালের আগেই ট্যাভেরা থেমে গেল বাসদুটোর অপেক্ষায় নয়, জওহর টানেলে যানজটের জেরে। কতক্ষণ লাগবে টানেল পৌঁছতে, সে প্রশ্নের এক এক জন এক-এক উত্তর দিতে লাগল। তখন রোদ থাকবে তো ফটো তোলার মতো? রাস্তায় এত দেরি হচ্ছে, মা এই অবস্থায় কতক্ষণ সহযোগিতা করতে পারবে.. নানা চিন্তায় মেয়ের মাথা আকীর্ণ। জামাই অবশ্য ফটোটটো নিয়ে অত ভাবিত নয়। তার চিন্তা অভুক্ত কন্যা ও বাকিদের খাওবার ব্যবস্থা নিয়ে। বৌয়ের কথা মানলে চলবে না। রাস্তায় কোনও ধাবাতে পেট ভরাতে হবে। জওহর টানেল পার করতে করতে রাত সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেল। ঘিঞ্জি শহরের রাস্তাতেও এমন মোক্ষম যানজট আজকাল দেখা যায় না। একটিই মাত্র টানেল আর অসংখ্য গাড়ি অবস্থা জটিল করে দিয়েছে। কোম্পানির ভরসা না করে একটা ধাবায় শেভরোলে দাঁড়াল। ফর্সা ফর্সা কাশ্মীরি ছেলেরা দুহাতে খেতে খেতেই এঁটো হাতে পরিবেশন করল রুটি, রাজমা, টমেটো তড়কা, পনির মসালা। খিদের মুখে তাই অমৃত। এমনকি অনশনে থাকা বাচ্চা মেয়েটাও খেয়ে নিল তৃপ্তি করে। সর্দারের আবার ভাতও চাই। কনডাক্টেড ট্যুরে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিধর্মীর হাতে না খাওয়া! হায়রে হুজুক, হায় সংস্কার!
জ্যামে গাড়িগুলোর দূরত্ব কমে এসেছিল। অভিজিৎ বোস বাস থেকে ঐ ধাবাতেই নেমে বলল, “মুখার্জীদা, আপনারা শ্রীনগর পৌঁছে মমতা চকের গৌসিয়ার পাশের হোটেলে রুম নিয়ে নেবেন।” আগে বলেছিল গৌসিয়াতেই বুকিং আছে। এখন বলছে তার পাশেরটায়। হোটেলের নাম বলতে পারল না ঠিকমতো। এরা শেষ মুহূর্তেও আশ্রয়ের নাম বলতে পারে না। এটা অমৃতসর থেকেই লক্ষ্য করেছে শম্পা। এখানে নিজেদের প্রিপেইড মোবাইল অকেজো। ভরসা ড্রাইভারের চলভাষ।
মমতা চকে বড় রাস্তা থেকে একটু ভেতরে নির্দিষ্ট হোটেলদ্বয় খুঁজে পেয়ে ঘর চাইতে রিসেপশানে বসে থাকা ছেলেরা বেজায় বেজার। তারা বোস স্পেশালের নামই শোনেনি। একপ্রস্থ ফোনাফুনির পর গৌসিয়ার লাগোয়া হোটেল ইরাম যে ঘরগুলো খুলে দিল তা ওয়াল-টু-ওয়াল কার্পেট ও এক দেওয়ালে চাদর ঝোলানো নরকের খুপরি বললে অত্যুক্তি হয় না। অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে ঘরের মেঝে থেকে দুফুট উঁচুতে অবস্থিত বাথরুমের দিকে করুণ চোখে চেয়ে রইলেন। একতলার ঘরই চাই। কাণ্ডারী সপ্তর্ষি খুঁতখুঁত করার অবস্থায় ছিল না রাত তিনটের সময়। বৌ শ্বাশুড়িকে বেডপ্যান দিয়ে শ্বশুরকে লুঙ্গি পাঞ্জাবি বার করে দেবার পর নিজেদের দোতলার খুপরিতে ঢুকে বলল, “আর পারছি না। সকালে দেখা যাবে।”
“আমাদের ঘরের জানলার ওপারে একটা করিডোর আর সার সার ঘর। পর্দা সরানোই যাবে না।”
“কাল দেখব।”
“কাল হতে বাকি কোথায়? সাড়ে তিনটে বাজতে চলল।”
“ওঃ! ঘুমোতে দাও।”
ঘুমটা অবশ্য এল না বোসের বাকি যাত্রীরা এসে পড়ায়। তারা রুম দেখে চ্যাঁচামেচি জুড়েছে। শম্পা গিয়ে দেখে এল ওরা যে ঘরগুলো নিয়ে প্রবল রুষ্ট সেগুলো শম্পা ও তার মা-বাবার কামরার তুলনায় স্বর্গ।
“কাটরায় মাকে রুমে রেখে রিসেপশনে আসতে একটু সময় নিয়েছিলাম বলে ঘরই পাচ্ছিলাম না। আর এখানে সবার আগে এসে সব চেয়ে ওঁচা রুম?” সপ্তর্ষির নাক কয়েক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে আবার ডাকতে লাগল।
বুকিং ছিল গৌসিয়ায়। মালিকের প্রক্সি দেওয়া তার দাদা নাকি দয়া পরবশত কয়েকটি বাঙালি পরিবারকে বোস ট্রাভেলস্-এর বুক করা রুম দিয়ে দিয়েছে। তাই তারই আত্মীয়র হোটেল ইরাম-এ রুমের সুবন্দোবস্ত করেছে। দিনের আলো ফোটার আগেই পরিস্কার হয়ে গেল মে মাসের ভরা মরশুমে সাতশ টাকার বুকড রুম তিন-চার হাজারে অন্যকে দিয়ে ফায়দা লুটছে গৌসিয়া। আর ইরামের ওপর পড়েছে গৌসিয়ার দায়। ইরামের কর্মীরা বোর্ডারদের রিফিউজির বেশি কিছু ভাবছে না।
“চাদর গন্দা হেয়।”
“কঁহা গন্দা? ঠিক তো হেয়।”
“এক রেজাই অর এক সিরানা লগেগা..”
…উত্তর নেই।
“ ভাইয়া, বাথরুম গন্দা হেয়। সাফ করওয়া দিজিয়ে।”
“সব ঠিক হেয়। গন্দা হেয় তো রুম খালি কিজিয়ে।” ভাইয়া সম্বোধনের উত্তরে এত ঝাঁজ?
হাক্লান্ত আরতি সারা রাত কম্বলের অভাবে অসমান বিছানায় ভাঙা পা নিয়ে এপাশ-ওপাশ পর্যন্ত করতে পারেননি। নড়বড়ে স্বামী বেডপ্যান দিলে আশঙ্কা এই বুঝি হিসি ছলকাল। আবার তাঁকে ডেকে ডেকেও সব সময় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। রাত ভর বৌকে কাঁদিয়ে ভোর হতে অমরেশ দয়া করে মেয়েকে ডাক দিলেন। আগের হোটেলগুলোতে ঘরের মেঝে ও স্নানঘরের মেঝে মোটামুটি এক লেভেলে ছিল। এখানে বাথরুম দু ফুট উঁচুতে। অমরেশই দেওয়াল ধরে বহু কষ্টে উঠছেন নামছেন। এই বাথরুমে মাকে নিয়ে যাওয়া শম্পার একার কম্ম নয়। অগত্যা লজ্জার মাথা খেয়ে ডাক পড়ে জামাইয়ের – শ্বাশুড়িকে বুকে জড়িয়ে যথাস্থানে তুলে দেওয়া ও নামিয়ে নেওয়ার জন্য।
চারদিন থাকতে হবে এই নরকতুল্য ঘরেই। অথর্ব বাপ, পঙ্গু মা আর ভদ্রলোক বরের জন্য চুপচাপ কাটিয়ে দিচ্ছে শম্পারা। মেয়েটা বাবার বুকে ঢুকে শোয় বলে দুটো বালিশেই হয়ে যাচ্ছিল। আশ্চর্য এটাই যে এত অব্যবস্থার মধ্যেও জল, এমনকি গরম জলেরও অভাব হয়নি -যদিও এই নোংরা ঘরে স্নান করে কোনও তৃপ্তি নেই। লোডশডিংও হয় না বোধহয়। তবে একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল শুধু এই হোটেলে, বোসের পার্টিদের তাড়ানোর জন্যই কি? এর পরেও সবুজ টিশার্ট পরা একটি সুদর্শন ছেলে এসে তার গোলাপি ঠোঁট দিয়ে আগুন উগরে গেল, “ঘরমে খানা মনা হেয়। জমিন মে থালি নহি রখনা। হামারা ফর্শ গন্দা হোনা নহি চাহিয়ে।”
বাকি যাত্রীরা তো অতটা অসহায় নয়। উত্তর এল, “আপকা তো পুরা হোটেলহি গন্দা হেয়।”
অগ্নিতে ঘৃতাহূতি! “গন্দা হেয় তো নিকলো বাহার। ইয়ে হামারা প্রপার্টি হেয়। অপনি খুন পসিনেসে বনায়া ইসে। পসন্দ নহি তো চলতে বনো।” সকালের শুরুটা ভালোই হল।
ভরা মরশুমে পর্যটকরা শুধু হালালকা বখ্রা নয়, শরনার্থীর অধম। যে রুমের ভাড়া পাঁচশোর বেশি হতে পারে না, তার জন্য তিন-চার হাজার নেওয়া হচ্ছে। আগে থেকে বুক করা রুম বেশি দামে অন্য লোককে দিয়ে বোস স্পেশালের মতো বড় ট্যুর অপারেটরদেরও পথ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে যারা গলার জোর দেখাতে পেরেছে, তারা বোস বা তার স্থানীয় এজেন্টের গচ্চায় অন্য হোটেলে উঠে যেতে পেরেছে। একজন স্বামী মরো-মরো এমন পৃথুলা বৃদ্ধাও উন্নততর ব্যবস্থা বাগিয়ে নিতে পেরেছে। শুধু সপ্তর্ষির মতো সদাশয় মানুষ, যার ঘাড়ে প্রতিবন্ধী দুই বুড়োবুড়ি আর হাঙ্গারস্ট্রাইক করা বাচ্চা, জলের মতো পয়সা খরচের বিনিময়ে সর্ব নিকৃষ্ট পরিসেবায় তুষ্ট থাকছে। গৌসিয়ায় এক মারাঠি দল কিচেনের দখল নিয়েছে। বোসের রাঁধিয়েরা মালিকের ডাক্তার বড়ভাই লোনের রক্তচক্ষুর সামনে রান্না করছে নোংরা উঠোনে। বৃষ্টি পড়লে হয়ে গেল। খাওয়ার কোনও সময় নেই। বিকেল চারটেয় দুপুরের খাবার, রাত একটায় নৈশাহার। মরশুমের ফায়দা ওঠাচ্ছে গৌসিয়া। আর ইরাম গৌসিয়ার দায় নিয়ে বোর্ডারদের ওপর ঝাল মেটাচ্ছে –“বাথরুম উইল রিমেইন ডার্টি। অ্যাট ইওর হোম ইউর বাথরুম ইজ অলসো ডার্টি..”
এরই মধ্যে সকালবেলা যাওয়া হল সিলেবাসে থাকা শ্রীনগরের বাগিচাগুলো ও শঙ্করাচার্য মন্দির দর্শনে এবং শিকারায় যাচ্ছেতাই ভাড়া দিয়ে ডালহ্রদ বিহারে। ডাল হ্রদ যেন একাধারে শ্রীনগর শহরটাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে রেখেছে, আবার একে ঘিরেই শ্রীনগর। যেখানে যাও ডাল লেকের চমৎকার দৃশ্য। সেই সাথে দূরে পাহাড়ের মাথায় তুষারের শুভ্রতা। গায়ে গরম জামা রাখার দরকার পড়ে না, অথচ বরফ দেখা যায় এমন দূরত্বেও যেন উড়ে গিয়ে ছুঁয়ে আসা যাবে। পার্কগুলোতে কাশ্মীরি চিরাচরিত পোষাক পরিয়ে যে ছবি তোলা হচ্ছিল, কাশ্মীরের কোনও মেয়ে বা পুরুষের গায়ে অমন ঝলমলে পোষাক আর বড় বড় গয়না দেখা যায় না। প্যান্ট-শার্ট আর সালোয়ার কামিজেরই জনপ্রিয়তা। কদাচিৎ দু-এক জন বয়স্ক স্ত্রী-পুরুষের গায়ে কম্বলের মতো কাপড়ের আলখাল্লা দেখা যায় যার আস্তিনদুটো প্রায়শ এমনি ঝোলে আর পরনদার পোষাকের মূল গহ্বরে নিজেদের হাতদুটো ঢুকিয়ে রাখে। কয়েকজন গরীব মহিলার গা ছাড়া ফিরান তো চোখেই পড়ে না। আচ্ছা পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং ছাড়া কেন এমন করে ছবি তোলানোর রেওয়াজ নেই? সেখানেও টার্গেট মূলত বাঙালি ট্যুরিস্ট। কলকাতায় বাইরের পর্যটকদের তো বাঙালী ধুতি-পাঞ্জাবি আর আটপৌরে করে শাড়ি পরিয়ে ছবি তোলানোর কথা কারও মাথায় আসে না। ফেরার পথে একটা দোকানে গরম মশলা দেওয়া লিকার চায়ের আতিথেয়তার মান না রেখে দাম শুনে বিষম খেয়ে বেরিয়ে এল শম্পারা। বাবা আর সপ্তর্ষি তো পটেই গিয়েছিল।
সোনমার্গ যাওয়ার রাস্তায় সিন্ধু নদ আর বরফের টুপি পরা পাহাড়চূড়া দেখে শম্পা আর কুর্চি তো অভিভূত। মনে হল হোটেলর সব গ্লানি মুছে গেল। কিন্তু সিংজীর বিশেষ আগ্রহে সোনমার্গে গিয়ে ঘোড়াওয়ালা ও স্লেজওয়ালাদের মিলিত অত্যাচারে শরীর জেরবার করে আড়াই হাজার ফুটুস্। ভাগ্যিস বাবা ঘোড়ায় চাপেননি। যা বিপদসঙ্কুল রাস্তা! আর তার ওপর বৃষ্টি, কাদা। ঘোড়াওয়ালারা নিজেদের বৌ-মেয়ের গায়ে কেউ হাত দিলে কী করবে কে জানে, অথচ ম্যাডামদের হাত ধরে টানাটানি। বৃষ্টি কাদাজল আর ফাটা জুতোর জেরে ঠাণ্ডায় বেহাল শম্পা ও মেয়ে টুকাই। মা সিংজির কোলেপিঠে চেপে গাড়িতে উঠে বসে থেকেছেন। হোটেলের ঘরে বিশ্রাম নেওয়া আর হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে কাটানো-খুব আলাদা নয়। বাবাও কোথাও বিশেষ নামছেন না। আলাদা গাড়ি বলে সোনমার্গের দিন দুপুরের খাবার জোটেনি। বাকি গাড়িগুলোর দেখাই পাওয়া যায়নি, ড্রাইভারের ফোন কাজ করলেও বোসরা যোগাযোগ করেনি। শম্পার ঠক্ঠকানি আর রাগ দেখে সিংজির খিদেও নীরব। বিনে পয়সায় বাথরুম সারারও উপায় নেই। ফেরার পথে কুড়ি টাকার টিকিট কেটে নদীর ধারে এক ঘেরা রেস্তোঁরায় টয়লেট সারল শম্পা। সেখানে ওর কাঁপুনি দেখে কয়েকজন স্থানীয় লোক আঁচ পোয়ানোর ব্যবস্থা করে দিল। একজন মস্করা করল, “দিদিকো কাশ্মীরকি গরমী লগ গয়ী!”
ফিরে এল পেটে সারা দিনের ক্ষিদে আর শরীর ভরা ক্লান্তি নিয়ে। এরপরেও রুমে ঢুকে ঘুমোনোর জো নেই। কখন মার প্রয়োজন হয়।
তৃতীয় রাতে সজাগ ঘুম ভাঙল মহিলা কণ্ঠের তীব্র চিৎকারে। “ইউ ক্যাননট টক টু আস লাইক দ্যাট। উই হ্যাভ বোর্ডেড দিস হোটেল এ্যান্ড পেয়িং ইউ..”
“শাট আপ। উই ক্যান ডু হোয়াটেভার উই লাইক। দিস ইজ আওয়ার প্রপার্টি। হাম কশ্মীরি হেয়, আপ আউটসাইডার।”
“উই হ্যাভ বোর্ডেড দিস হোটেল ফর থ্রী ডেজ। টুডে ইজ দা ফার্স্ট ডে। উই আর নট সাপোজড টু চেকাউট টুমরো -”
“ডোন্ট ফরগেট দ্যাট ইউ আর ইন আওয়ার ল্যান্ড। হাম জব কহেঙ্গে ইয়ে হোটেল তো কয়া, কশ্মীর ছোড়কর জানা পড়েগা..”
ঝামেলাটা তাহলে শুধু বোস স্পেশালের সাথে নয়! পর্যটকরা এদের নজরে মূলত বহিরাগত! রাত দুপুরে ‘কাশ্মীরি’ যুবার দর্পিত আস্ফালনে হৃদকম্প হল শম্পার। এরা কারা! হোটেলের চাবির বদলে হাতে অস্ত্রই যেন বেশি মানানসই। অবলীলায় এক ভাই বেইমানি করে আর এক ভাইকে লেলিয়ে দিচ্ছে কামড়ানোর জন্য। শম্পাদের যদি বলে “কল খালি করনা হেয়”? যাদের টাকা প্রতি এত লোভ, তাদের প্রতি এত ঘৃণা ? অথচ বাংলার কাশ্মীরপ্রীতির কারণে অনেকেই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। নিজেদের মধ্যে বলে কশ্মীরি যার বিন্দুবিসর্গ বোঝা যায় না। দুরস্ত উর্দু হিন্দী সিনামার পরিবেশনা। ডাঃ লোনের নিজের জবানিতেই “বাঙালি আজিব জাত। অপনি কামাইকা আধা হিস্যা ঘুমনে ফিরনেমে খরচ কর দেতে। হামারি কশ্মীরকো ওলোগ ভুসর্গো কহেতে হেয়!”
পরের দিন ঘোড়াওয়ালাদের ঝামেলায় গুলমার্গের রাস্তা বন্ধ। এমনিতেই সপ্তর্ষিরা ঠিক করেছিল এইদিনটা আর অনাহারে ধকল করে অ্যাসিডিটি নয়, বিশ্রাম। এই ঘোড়াওয়ালারা সোনমার্গ গুলমার্গের আতঙ্ক। তার পরের দিনই পহেলগাঁও যাত্রা সকাল নটার মধ্যে প্রাতরাশ করে। বিকেলটা কেনাকাটা করল মায়ের মন রাখতে। বেচারা কিছুই তো দেখলেন না, অন্তত শালের শখ মিটুক। বেয়ানের জন্য কেনারও টাকা দিয়েছেন। রাস্তায় আজ নিজেদের ভাড়া করা গাড়ির বদলে হেঁটে আর পাবলিক বাসে ঘুরল শম্পা, সপ্তর্ষি আর কুর্চি। বাসের যাত্রী থেকে কনডাক্টার সবার ব্যবহার কী আন্তরিক, হোটেল মালিক বা কর্মীদের সাথে মেলানো যায় না। পর্যটকদের সত্তর শতাংশ বাঙালি হওয়ায় অনেকেই অল্পবিস্তর বাংলা বলতে পারে। পুরুষদের কাউকে কাউকে স্থানীয় বা কাশ্মীরি মনে হচ্ছে বলে শম্পা মন্তব্য করায়, তারা বেশ লাজুক লাজুক হেসে ফেলে। নিজেদের রূপ নিয়ে কাশ্মীরি ছেলেরা বেশ সচেতন ও গর্বিত। মেয়েদের ভালো করে দেখাই হল না, গাত্র বর্ণ গৌর বোঝা গেলেও মুখ চোখের পরিপূর্ণ রূপ, মানসিকতা কোনওটার সাথেই পরিচিত হওয়া গেল না। এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, “কশ্মীরকে সাথ তো বঙ্গালকা বহুত পুরানা রিশ্তা। হমারি হ্যান্ডিক্রাফ্ট্স্ কি ভি বহুত ডিমান্ড হ্যায় বঙ্গালমে।” বাংলায় কথা বলে বাঙালি পর্যটকদের ইমপ্রেস করার আগ্রহটা বেশ মজার। তবে কাশ্মীরি বলে যতটা গর্ব, ভারতীয়-হিন্দুস্তানী বা ইন্ডিয়ান পরিচয়টার প্রতি যেন ততটাই উদাসীনতা। আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করল শম্পা, অন্যান্য পাহাড়ি শীতপ্রধান জায়গার মানুষের মতো গায়ে দুর্গন্ধ নেই এদের। পোষাকও অপরিচ্ছন্ন নয়। দোকানের হদিশ দেওয়া থেকে হোটেলে ফেরার পথ নির্দেশ দেওয়া, সব ব্যাপারেই সহযোগিতা। এরাও কাশ্মীরি, যারা বলছে, “পহেলে সাত বজেকে বাদ সব ঘরকে অন্দর হো যাতা থা; অব তো দাদা আপ বৌদিকো-বচ্চিকো লেকে রাত বারা বজে ভি রস্তেমে ঘুমেঙ্গে তো কোই খতরা নহি”..?! কিন্তু এরা তো থাকার বন্দোবস্তো করতে পারবে না!
সকালে নতুন একটা মুখ, হোটেলের লিজ নেওয়া সদ্য মালিক দরজায় দরজায় পিটিয়ে ঘোষণা করতে এসেছিল রুমে কাপড় কাচা মানা, করিডোরের মেঝেতে থালা রাখা মানা।
শম্পা সাথে সাথে প্রশ্ন করে, “আপকে হোটেলমে লন্ড্রিসার্ভিস হেয়?”
“হেয় না। বতায়া কিসিকো?”
“রুম সার্ভিস নহি হেয় অর আপ লন্ড্রিকি বাত কর রহে হেয়?”
“কিসনে কহা রুম সার্ভিস নহি হেয়? আপনে পুছা কিসিসে?”
“হর স্টাফসে পুছা। এক সিরানা মাঙনেসে নহি মিলতা, রেজাই মাঙনেসে নহি মিলা, গন্দা চাদর বদলায়া নহি যাতা, বাথরুম সাফ করনেকো বোলা তো কহা কি সফাই নহি হোগী-! অর আপ সার্ভিসকি দাওয়া কর রহে হেয়?”
“আপকে ম্যানেজার জিস রেটমে রুম লিয়া উসমে ইসসে জাদা কুছ নহি মিলেগা। এক্স্ট্রা চার্জ লগেগা”
“এক্স্ট্রা চার্জকি বাত আপ কহে রহে হেয়, পহেলে কিসিনে কিঁউ নহি বতায়া? অর কাপড়া হম বহারই দিয়ে থেঁ। বারিশকে কারণ অন্দর কী হেয়। কোই ধুলাইকে কে লিয়ে অ্যাভেলেব্ল নহি থা…..” সপ্তর্ষি মুখ খুলল। এঁড়ে তার্কিক শেষে “ওকে ওকে” বলে বিদায় নিয়ে মা-বাবার ঘরে গিয়ে একই তম্বি করে গেল।
ভোর পাঁচটা বাজতে না বাজতেই ঘরে ঘরে দুম্ দুম্! “চেক আউট, চেক আউট। ঘর খালি কিজিয়ে..”
“চেক আউটকা সময় তো দোপহর বারা বজে হেয়। আভি কিঁউ?”
ম্যনেজার কোথায়? অভিজিৎ কোথায়? হৈচৈ! দুম্ দুম্! “আভি খালি করো”…। যাঃ! বিদ্যুৎ চলে গেল। না পাশের হোটেলগুলোতে তো আছে। শুধু ইরামে নেই। পাওয়ার কেটে দিয়েছে। আর কত অসভ্যতা সইতে হবে চলে যাবার ঘণ্টাখানেক আগেও!?
রহস্যটা পরিস্কার হল গৌসিয়ার চত্তরে খেতে গিয়ে। অভিজিৎ বোস পরের বুকিংটা গৌসিয়া থেকে বাতিল করেছে। এসব তারই প্রতিক্রিয়া। আজ গৌসিয়ার আসল মালিক শমীম হাজির। দাঁত কিড়মিড় করল, “ডার্টি বেঙ্গলি!”
“হোয়াট হ্যাভ ইউ সেইড? ইউ আর ফেড বাই আস। হাম আনা ছোড় দে তো আপকা রোজি রোটি বন্ধ্ হো জায়েগা..” গর্জে উঠল সপ্তর্ষি।
“মেয়নে আপকো নহি কহা। আপলোগোকা কিচেন স্টাফ বহুত গন্দা হেয়। হাম যাঁহা রসুই করতে ওঁহা জুতা পহনকর নহি যাতে। এক পার্টি আয়া থা- উসকে কিচেন স্টাফ যাঁহা পর খানা বনায়া রাত কো, ওঁহি ড্রিংক কিয়া, পিসাব কিয়া – হামারা কার্পেট গন্দা কিয়া। মেয়নে প্রোটেস্ট কিয়া। আফটার অল হমারি প্রপার্টি।”
“উসে দেখকর হর বাঙ্গালিকো কেয়সে ডার্টি কহে সখতে আপ? অগর আপকো দেখতে হুয়ে হাম ইয়ে কহে, কি হর কশ্মীরি দগাবাজ হেয়, খরাব হেয়, ঝুটে হেয় তো?”
শমীম চুপ করে গেল। একে ভরা মরশুম, তার ওপর ভারত সরকার ১৮জুন পর্যন্ত সব শ্রেণীর সরকারি চাকুরের জন্য দিল্লী থেকে শ্রীনগর অব্দি বিমান ভাড়া মঞ্জুর করেছে বলে মলমূত্র ভরা ডাললেকের আশপাশ কলকাতার অষ্টমীর রাত হয়ে রয়েছে। অফসিজনে এই বোসেরাই ব্যবসা বজায় রাখে। সদ্য তার কাছ থেকে দাওয়াই পেয়েছে।
ওদিকে শম্পার “চার আখবারোমে লিখতি হুঁ মেয়। আপকে মেহমান-নওয়াজিকা জিকর জরুর করুঙ্গী” শুনে ইরামের নতুন চোখ রাঙানো মালিক খুরশিদ “ম্যাডাম ম্যাডাম, গুস্সা থুক দিজিয়ে..স্যার স্যার” করেছে বেরিয়ে আসার আগের আধঘণ্টা। এই নরকভোগের শেষে একটা ফাঁকা আওয়াজের বিনিময়ে এইটুকু খোশামোদ বেশ উপভোগ করছিল শম্পা। অবশ্য জানে না পহেলগাঁমে গিয়ে বোস একই রকম বেইমানির গল্প শোনাবে কিনা। একেও তো বিশ্বাস করা কঠিন। তাই দুর্ভোগের শেষ ভাবতে ভরসা হচ্ছিল না।
গৌসিয়ার উঠোনে খাওয়ার জায়গার পাশেই আবর্জনার দুর্গন্ধময় ড্রাম। তারই মধ্যে ব্রেকফাস্ট সারছে সব হাঁস্-হাঁস্ করে। বাঙালী সত্যিই ‘ডার্টি’। এত হ্যাংলামো ভূস্বর্গ দর্শনের?
পুরোনো বোর্ডাররা একে একে ঘর ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে পিলপিল করে ঢুকছে নতুন নতুন উন্মাদের দল। বেশিরভাগই “ডার্টি বেঙ্গলি”!
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়