১০০ বছর : বামপন্থার শতবর্ষ : অপকর্ম – অপতত্ত্বের সাক্ষ্য
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) CPI(M) ২০১৯ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও কর্মসূচী পরিকল্পনা করেছে, কারণ তারা মনে করে ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তদানীন্দতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত তুর্কিস্তানের তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (CPI)-র জন্ম হয়। ওদিকে সিপিআই দলটির বক্তব্য ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্টি কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের দলটির জন্ম। মূলত একই দলের দুটি শাখা, কিন্তু ভারতে নিজেদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার তিথি নিয়ে সহমত নয়। যে শাখাটি শতবর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে, সেই সিপিএম ১৯৬৪ সালে ভারত চীন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সিপিআই-এর মধ্যে অন্তর্কলহের জেরে দল ভেঙে বেরিয়ে এসে তৈরি হয়েছিল, যেখানে মূল দলটি আরও ২৫ বছর পর নিজেদের শতায়ু ঘোষণার পক্ষপাতী।
আনুষ্ঠানিক সূত্রপাৎ যখনই হোক, ২০২০-তে দাঁড়িয়ে শতবর্ষ পূর্বে বিদেশের মাটিতে বসে যে রাজনৈতিক মতবাদ ভারত জয়ের পরিকল্পনা করে, তার একটা মূল্যায়ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বামপন্থার অনুসারীরা সাম্যবাদ, শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই, শোষিতের শৃঙ্খলমোচন ইত্যাদি মহান নীতির কথা ঘোষণা করলেও বাস্তবে যে কাজটা করেছে ও করে চলেছে, তা হল ভারতের মাটিতে অটোমান ও আরবি সাম্রাজ্যবাদের সুদৃঢ় ভিত রচনা এবং ভারতের নিজস্ব ইতিবৃত্তকে বিকৃত করে পশ্চিম এশিয়ার উত্তরাধীকারী সাব্যস্ত করার চেষ্টা। দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রকৃত কারণ গোপন করে অপব্যাখ্যা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে সাময়িক ও অতীত দুর্ঘটনা বলে ভোলানোর চেষ্টা, হিন্দু হলোকাস্টের ধারাবাহিকতাকে ক্রমাগত আড়াল করা, আর্যদের বহিরাগত দস্যু ও অনার্যদের ভূমিসন্তান তত্ত্ব খাড়া করে ভারতের সনাতন সমাজে ফাটল তৈরির লাগাতার চেষ্টা, হিন্দু সমাজে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যে বিভেদ জিইয়ে রাখতে ক্রমাগত উস্কানি, প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলাকে হয় মামুলি ডাকাতি দুষ্কৃতকর্ম বলে চালানো, শরণার্থী হত্যা, সন্ন্যাসী হত্যা – ইত্যাদি অপতত্ত্ব ও অপকর্মের তালিকা দিতে বসলে দুটো আলাদা ডিরেক্টরি হয়ে যাবে।
মুখোশ খুলেছে। তার পরেও ওদের সাফল্য ওরা জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মজ্জায় মজ্জায় এমনভাবে বামপন্থী দৃষ্টিকোণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, যে কয়েক প্রজন্মের ভারতীয় বিশেষত বাঙালী নিজেদের অজান্তেই শুধু যে আত্মবিস্মৃত আত্মঘাতী জাতি হয়ে উঠেছে তাই নয়, রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়েও সেই বিকৃত ভাবধারার উত্তরাধিকার সঞ্চারিত করতে পেরেছে আমাদের ভাবী প্রজন্মের মধ্যেও। ভারতকে টুকরো করার স্পর্ধা, হিন্দু নির্মূলীকরণের পৈশাচিক আকাঙ্খা যতদিন আমাদের শাসিয়ে যাবে, ততদিন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে পারলেও এই মতবাদের ছত্রছায়ায় থাকা দলগুলো নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা যাওয়ার নয়। বর্তমান সংখ্যাটি সে কথা মাথায় রেখেই।
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়