সকাল তখন প্রায় সাড়ে ছটা বাজে। পটলার ঘুমটা পুরোপুরি শেষ হয়নি।
মাথার কাছে রাখা সেলফোনটা বেজে উঠল। চোখ কচলে ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্তে পাড়ার মাতৃসমা জেঠিমার আকুল ডাক – “ও পটল, সোনা ছেলে আমার, একবার চট করে আমাদের বাড়ি আয় তো বাবা, একটা জরুরি জিনিস কিনে নিয়ে আসতে হবে।”
লকডাউনের বাজার। পাড়ার বহু বাড়িতে বয়স্ক মানুষরা একা থাকেন। তা পটলাদের পাড়ার ছেলেরা পালা করে সকলেই একে অপরকে সাহায্য করছে। সেদিকে কোনও অসুবিধা নেই। তবে পটলার ওপরে অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধারই স্পেশাল একটু ভরসা। পটলকে কোনও কাজ করে দিতে বললে, সে সেটা করে দেবেই।
“আসছি, আসছি জ্যেঠি, দশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছি।” – অভয় দেয় পটলা।
যেমন বলা তেমনই কাজ। হাতমুখ ধুয়ে দশ মিনিটের মধ্যেই জেঠিমার বাড়ি পৌঁছে যায় পটলা।
দরজা খুলে পটলার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেঠিমা। কেমন যেন একটু অস্থির দেখাচ্ছে তাকে, শরীরটাও যেন একটু কাহিল।
পটলাকে দেখামাত্র প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রায় কাঁদোকাঁদো স্বরে তিনি বললেন- “ও পটল, দোকানপাট কখন খোলা থাকে, কখন বন্ধ… অতশত জানিনা বাপু, তুই আমাকে চট করে চল্লিশটা পান এনে দিবি বাবা? আর শোন, শুধু আজ নয়, আগামী একমাস রোজ তোকে এই ব্যবস্থা করে দিতে হবে গোপাল।”
চল্লিশটা পান শুনে পটলা একটু চমকে যায়, ভাবে ব্যাপারটা কিরকম হল… এই জেঠিমার তো আগে কখনও এমন পানের নেশা ছিল না। হঠাৎ নতুন করে নেশা হল নাকি? তাও আবার একেবারে গুনেগুনে চল্লিশটা পান? পটলার মনে একটু সন্দেহ জাগে। করোনার বাজারে একা বাড়িতে থাকতে থাকতে কার যে কখন কি হচ্ছে?
কিন্তু পটলা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার ছেলে নয়। সে জেঠিমার হাত ধরে বলে – “কি ব্যাপার গো জেঠি? একটু খোলসা করে বলো তো। তুমি কি কোনও ইস্পেশাল পুজোআচ্চা করবে নাকি গো? চল্লিশটা পান কিসের জন্য লাগবে? আগে তো তোমাকে কখনও পান খেতে দেখিনি।”
কপালের ঘাম চোখের জল শাড়ির আঁচলে মুছে জেঠিমা বললেন – “ওরে না না, সেসব কিছু নয়… পুজোও নয়, নেশাও নয়। দেখ না বাবা গত বেশ কিছুদিন ধরে পেটে গ্যাস আর অম্বলে এত কষ্ট পাচ্ছি। করোনার ভয়ে ডাক্তারবদ্যির কাছে যাওয়াও তো বড় মুশকিল। তা পুরোনো বন্ধুবান্ধবদেরই জিজ্ঞেস করলাম – “কি করা যায় বল দেখি সকলে? গ্যাসের জ্বালায় যে বড় কষ্ট পাচ্ছি।”
এইটুকু বলে জেঠিমা একটু লাজুক হাসলেন, বললেন – “বুড়ি হয়ে যাচ্ছি তো কি হয়েছে, জানিস তো তোদের ওই ফেসবুক থেকে আমরা বুড়িরাও আমাদের অনেক পুরোনো বন্ধু খুঁজে পেয়েছি। বুঝলি বাপু আমাদেরও এখন আছে একটা ‘ওয়াটসঅ্যাপ’ গ্রুপ।
তা যে কথা বলছিলাম – ওই গ্রুপে গ্যাস অম্বলের কথা জানাতেই অনেকেই বলল – আগামী একমাস রোজ চল্লিশটা পান খেতে, সকালবেলা খালি পেটে।” তা চট করে খুঁজেপেতে একটু নিয়ে আয় না বাবা।
গ্যাস অম্বলের সঙ্গে আলাপ পরিচয় নেই এমন বীর বাঙালি কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে।
কিন্তু গ্যাস অম্বল সারানোর জন্য চল্লিশটা পান শুনে পটলার মনে একটু খটকা লাগলো। জেঠির দিকে হাতটা বাড়িয়ে ও বলল – “তোমার ফোনটা একটু দাও দেখি, তোমার বন্ধুদের মেসেজগুলো দেখি।”
মেসেজ পড়ে পটলার তো চোখ কপালে। হাসবে, না কাঁদবে, না নিজের মাথার চুল ছিঁড়বে ভেবে পেলনা। যাক গে যাক বয়স্ক মানুষ…। বেশি কথায় কাজ নেই।
ওষুধের দোকান তো মোটামুটি সবসময়ই খোলা থাকে। জেঠিমার জন্য গ্যাস অম্বলের ওষুধ প্যান৪০ (pan 40) কেনার জন্য পটলা হাঁটা দিলো…।
(সত্যি ঘটনার ওপরে ভিত্তি করে লেখা।
আরেকটা কথা যারা গ্যাস অম্বলের জন্য Pan40 ওষুধটি খেয়ে থাকেন, অপরকে প্রেসক্রাইব করার সময়ে একটু বুঝেশুনে করবেন।)