রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মাপার কৌশল বাতলে কোভিডযুদ্ধে নয়া দিশা বেঙ্গালুরুর দুই বিজ্ঞানীর

রোগজীবাণু হামলা চালালে রুখতে হবে। কিন্তু তার সাধ্য আছে তো? বহিঃশত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা সবার শরীরের এক নয়। কার কতটা, তা বলে দেয় ব্যক্তিগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বহর। এবং সেই রক্ষকবাহিনীর অন্যতম সেনাপতি টি লিম্ফোসাইট সেল (T cell)। এবার টি সেলের কার্যকারিতা পরিমাপের পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কোভিডযুদ্ধে নতুন দিশা দেখালেন বেঙ্গালুরুর দুই চিকিৎসক-বিজ্ঞানী। ডা. সোনাল আস্থানা ও ডা. বিষ্ণু কুরপদ। সার্স-কোভ-২ (Sars COV-2) শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের অন্যতম সেনানী টি সেল কতটা লড়াই দিতে পারবে, এই দুই বিজ্ঞানী আগাম তা বলে দেওয়ার উপায় বার করায় স্বাভাবিক ভাবেই শোরগোল পড়েছে।

কী ভাবে তা জানা যাবে? উত্তর- রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে। ইনভিট্রো কালচার, যাতে কিনা নমুনাকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাল অ্যান্টিজেন দিয়ে উদ্দীপ্ত করা হবে। তারপর এলাইজা পদ্ধতিতে দেখা হবে, ভাইরাসযুদ্ধে রক্তে মজুত টি সেল কতটা ইন্টারফেরন গামা নামক সাইটোকাইন নিঃসরণ করতে পারছে। বস্তুত ভাইরাস আঘাত হানলে কোনও ব্যক্তি আক্রান্ত হবেন, নাকি উপসর্গবিহীন থাকবেন, তার চাবিকাঠি রয়েছে এই টি সেলের হাতে। বিজ্ঞানীদের দাবি, টি সেলের কার্যকারিতা মাপা গেলেই কোভিডের (Covid-19) বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চিহ্নিত করা যাবে। উদ্ভাবনাটির পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কিট তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে।


কোভিড পর্বের গোড়ায় অনেকেই হার্ড ইমিউনিটির কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে সেই ধারণা প্রবলভাবে ঝাঁকুনি খেয়েছে। একাধিক গবেষণায় উঠে আসে, পার্সোনাল ইমিউনিটিই কোভিডযুদ্ধের ফলাফলের মুখ্য নির্ধারক। বেঙ্গালুরুর উদ্ভাবন সেই সত্যিকেই আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা করল বলে পর্যবেক্ষণ ভাইরোলজিস্টদের।
যদিও এই প্রথম নয়। এর আগে টিউবারকিউলোসিস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, হারপিস জস্টার–সহ বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে এই ‘গামা ইন্টারফেরন রিলিজিং অ্যাসে’ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে কোভিডের ক্ষেত্রে এই প্রথম ব্যবহার করা হল। এমনটাই জানালেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। টি সেল পরিমাপের ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলির নাগালে তেমন কোনও পদ্ধতি এই মুহূর্তে নেই। মজুত শুধু অ্যান্টিবডি মাপার কিট। যা দিয়ে বোঝা যায়, কেউ কখনও কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না। কিন্তু সমস্যা হল, কোভিডের হাত থেকে বাঁচতে শুধু অ্যান্টিবডি যথেষ্ট নয়। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে টি লিম্ফোসাইট সেল বা টি সেলের, যা মাপার হ্যাপা অনেক। তারই সহজ পদ্ধতি নাগালের এনে দিয়েছেন দুই ভারতীয় বিজ্ঞানী।


বিদেশ তো বটেই, কলকাতা শহরেও কোভিড পুনঃসংক্রমণের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। একই ওয়ার্ডে ছ’জনেরও পুনঃসংক্রমণ হয়েছে। ফলে প্রশ্নের মুখে করোনাজয়ীদের ভবিষ্যৎ। একাধিক গবেষণা জানিয়ে দিয়েছে, করোনাজয়ীদের শরীরে অ্যান্টিবডির আয়ু বড়জোড় তিন মাস। কারও ক্ষেত্রে তারও আগে উধাও হয়ে যাচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই উপকরণ। বিশেষ সমস্যা হচ্ছে উপসর্গবিহীনদের নিয়ে। তাঁদের খুঁজে বের করতে গেলে অ্যান্টিবডি বা টি সেলের কার্যকারিতার পরিমাপ একান্ত জরুরি। সেই নিরিখে দুই চিকিৎসক কালজয়ী কাজ করেছেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞ মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.