জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় শহরের দুই হাসপাতালে মৃত্যু হল তিনটি শিশুর। যাদের দু’জনের এখনও এক বছর বয়স হয়নি। আর এক জনের বয়স দেড় বছর। বেসরকারি সূত্রের খবর, গত দু’মাসে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে জনা পনেরো শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যে। যাদের মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি বলে জানা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা রাজশ্রী রায় (৯ মাস) গত ২ ফেব্রুয়ারি জ্বর নিয়ে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১১ তারিখ তার ছুটি হয়। পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও জ্বর কমেনি রাজশ্রীর। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় ১৯ ফেব্রুয়ারি ফের তাকে বি সি রায় শিশু হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। কিন্তু শুক্রবার থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তার। শনিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় রাজশ্রীর। তার ডেথ সার্টিফিকেটে অ্যাডিনোভাইরাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে। ওই হাসপাতালেই রবিবার সকালে মারা যায় বাদুড়িয়ার বাসিন্দা, আট মাসের শুভজিৎ মণ্ডল। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সিভিয়র নিউমোনিয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে শুভজিতের।
এ দিন ভোরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে কল্যাণীর মাঝেরচক গ্রামের বাসিন্দা, দেড় বছরের রুদ্রিক সরকারের। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কল্যাণীর এমসে দিন দশেক ভর্তি ছিল সে। অবস্থার অবনতি হতে থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রেফার করা হয় তাকে। সে দিন শহরের সরকারি কোনও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যা খালি ছিল না। ফলে রুদ্রিককে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তাকে। সেপসিস ও ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে ওই শিশুর ভাইরাল প্যানেল পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও না আসায় বোঝা যাচ্ছে না, সে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল কি না।
জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন। অথচ, এই দুই কারণে চলতি মরসুমে ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তার কোনও পরিসংখ্যান সরকারি ভাবে এখনও জানায়নি তারা। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘অ্যাডিনোভাইরাস ছাড়া অন্যান্য ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণেও মৃত্যু ঘটছে। ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই। তবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে প্রতিদিনই বৈঠক করা হচ্ছে।’’
রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় বি সি রায় শিশু হাসপাতালের মূল ভবনে একটি শয্যাও আর খালি নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সংলগ্ন বি সি রায়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসও ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অধ্যক্ষ দিলীপ পাল। তিনি জানান, রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ১৫টি শয্যা অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি ১৫টি শয্যা থাকছে অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “আতঙ্কিত হলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, বড়দের থেকেই বাচ্চারা সংক্রমিত হচ্ছে। বাইরে থেকে ফিরে বাচ্চাদের সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়। জ্বর, সর্দিতে ভোগা শিশুকে আইসোলেশনে রাখতে হবে।”