গা ছ্যাঁক ছ্যাঁক। মাথা ভার ভার। সঙ্গে খুক খুক কাশি। গন্ধটাও যেন কম আসছে নাকে! সর্বনাশ! করোনা নয়তো? এই মুহূর্তে এমন চিন্তায় বহু মানুষ কাঁটা। কোথায় সঠিক পরামর্শ মিলবে, তা ভেবে ঘুম ছুটছে। ওঁদের দিশা জোগাতে আসছে নতুন অ্যাপ। শুধু কয়েকটি সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
রোগ নির্ণয় থেকে চিকিৎসা, ডাক্তারের পরামর্শ, সবই মিলবে সেখানে। কোভিড পজিটিভ (COVID-19) রোগীও এই ‘টেলিমিডিসিন অ্যাপ’-এ নাম নথিভুক্ত করে নিজের ‘স্টেটাস’ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন। অ্যাপই বলে দেবে, রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হবে, না বাড়িতে। এবং এক্ষেত্রেও নজির বাংলার। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য, যারা আত্মসমীক্ষণ ও টেলিমেডিসিনের এহেন নিজস্ব অ্যাপ হাজির করল। অন্তত এমনই দাবি অ্যাপ নির্মাতাদের। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড নিয়ে সাধারণ মানুষকে ‘গাইড’ করার লক্ষ্যে অ্যাপটি ডিজাইন করা হয়েছে।
বস্তুত কোভিড টেস্ট বা করানো নিয়ে বহু মানুষ চরম ধন্দে। কোভিড আক্রান্তরা ‘হোম আইসোলেশন’ নিয়েও দ্বিধায়। আতঙ্কে বহু উপসর্গহীন পজিটিভ রোগী হাসপাতালে ছুটছেন। ফলে বেডের আকাল দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমজনতাকে সঠিক দিশা দিতে মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের ওয়েবসাইট (wbhealth.gov.in) নয়া অ্যাপটি পেল। অ্যাপে ঢুকতে হবে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে। ফোনে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) দিলে অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি মিলবে, খুলে যাবে একটি পেজ। যেখানে নাম, বয়স, ঠিকানা দিতে হবে। যে লোকেশন থেকে ফোন আসবে, গুগল ম্যাপ মারফত তাও রেকর্ড হয়ে যাবে। কোভিড, নন-কোভিড, সবাই এখানে ‘ইনপুট’ দিতে পারবেন। পাশাপাশি অ্যাপে থাকছে উপসর্গ সংক্রান্ত পেজ। যেখানে ‘ইয়েস’ বা ‘নো’-তে উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নোত্তরপর্ব শেষ হলে আসবে সাবমিট বাটন। ক্লিক করলে রোগীর ‘স্টেটাস’ দেখাবে। সেই অনুযায়ী মিলবে উপদেশ। অস্পষ্টতা থাকলে ‘কনট্যাক্ট ডক্টর’ লেখা আইকন আসবে। তাতে ক্লিক করলে সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা যাবে।
কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল এবং এসএসকেএমের কয়েকজন চিকিৎসক মিলে এই অ্যাপ তৈরি করেছেন। আর জি করের অধ্যাপক ডা. সোমনাথ দাস জানিয়েছেন, “এমন অ্যাপের খুব প্রয়োজন ছিল। আশা করা যায়, এটি কোভিড সম্পর্কে মানুষের আতঙ্ক অনেকটাই কমাতে পারবে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকায় বিভ্রান্তি কাটবে।” উপরন্তু সরকারেরও সুবিধা হবে।
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, করোনার ক্ষেত্রে কনট্যাক্ট ট্রেসিং খুব জরুরি। স্বাস্থ্যদপ্তর যা সব সময় করে উঠতে পারছে না। নয়া অ্যাপে লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে। যে ফোন থেকে ‘ইনপুট’ এসেছে, সেটি কোথায় কোথায় ঘুরছে, তা রেকর্ড হয়ে যাবে। অর্থাৎ, কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে যারপরনাই সুবিধা। হোম আইসোলেশনে থাকা মানুষকেও গাইড করবে এই অ্যাপ। জিঙ্ক, ভিটামিন সি, প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ থাকবে। কারও টেস্ট দরকার হলেও দিশা দেখাবে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, কেন্দ্র-রাজ্যের গাইডলাইন ও প্রোটোকলের উপর ভিত্তি করে অ্যাপটি তৈরি হয়েছে। বানাতে সময় লেগেছে দু’সপ্তাহ।