বিদেশি কোনও সংস্থা নয়, ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনকেই (Corona Vaccine) দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চায় কেন্দ্র সরকার। সেক্ষেত্রে রাশিয়া (Russia) বা অক্সফোর্ডের (Oxford) তৈরি ভ্যাকসিন নয় বরং ভারতীয় সংস্থার তৈরি ভ্যাকসিনই দেশে প্রথম চালু হবে। আর সেই ভ্যাকসিন প্রথমে দেওয়া হবে করোনা মোকবিলার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মীদের। সঙ্গে বয়স্কদেরও, যাঁদের বয়সজনিত কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। সেক্ষেত্রেও আবার যাদের কোমর্বিডিটি রয়েছে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, “ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে তা সকলেই জানেন। ভারত বায়োটেক ও জাইডাস ক্যাডিলা সেই কাজ করছে। সেগুলি চালু করার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্য দেশের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
দেশে করোনা পরিস্থিতি চালু হওয়ার পর থেকেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সেইমতোই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সব ধরনের কাজের ক্ষেত্রে প্রথমে দেশীয় সংস্থাকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ মাথায় রেখেই চলা হচ্ছে বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। চলতি বছরের শেষের দিকেই দেশে ভ্যাকসিন চালু করার উপর জোর দিচ্ছে সরকার। ভ্যাকসিন চালু হলে তা বণ্টনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না, সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, ভ্যাকসিনের বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারই সব ব্যবস্থা করবে রাজ্যগুলির আলাদাভাবে কিছু করার দরকার নেই। ভ্যাকসিন চালু হলে কীভাবে তা দ্রুত দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় বর্তমানে সেই রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত রয়েছে কেন্দ্রীয় ভ্যাকসিন কমিটি। কেন্দ্র আগেই ঘোষণা করেছে যে ভ্যাকসিনের দাম মানুষের আয়ত্তের মধ্যেই থাকবে। ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পরে তা খোলা বাজারে নিয়ে আসা হবে কিনা সেই বিষয়টি নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর।
ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে শুধুমাত্র সরকারি পরিকাঠামোর মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন বণ্টন যে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। ভ্যাকসিন চালুর প্রথম দিকে তা বণ্টনের ব্যবস্থা সরকারিভাবে করা হলেও পরে আর্থিকভাবে সঙ্গতিপন্নরা যাতে তা বাজার থেকে কিনে নিতে পারে, সেই বিষয়টির উপরেও ভ্যাকসিন কমিটি ভাবনাচিন্তা করছে। করোনার ভ্যাকসিন যে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভ্যাকসিনের মতই প্রতি বছর নিতে হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা সদ্য দিন কয়েক আগেই আইসিএমআরের প্রধান বলরাম ভার্গব ইঙ্গিতে বলেছিলেন। দেশে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়লেও করোনার মৃত্যু হার যে কম সেই বিষয়টির উপরেই জোর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। এ প্রসঙ্গে দেশে ম্যালেরিয়া এবং যক্ষার মত রোগে যে বহু মানুষ মারা যান সেই খতিয়ান তুলে ধরেই পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্য কর্তা। টেষ্টিং যে একমাত্র পথ সেকথা বারবারই কেন্দ্রের তরফ থেকে বলা হয়ে আসছে।
বর্তমানে দৈনিক প্রায় বারো লক্ষ টেষ্ট হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত ‘পজিটিভিটি রেট’ পাঁচ শতাংশের উপরে থাকবে ততদিন এই সংখ্যা বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়লেও নানান কর্মকান্ডের বিষয়ে ছাড় দেওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখ পড়তে হয়েছে কেন্দ্রকে। সেই বিষয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ সাংবাদিক বৈঠকেই জানিয়েছিলেন, “জীবন যেমন মূল্যবান, প্রয়োজনীয় জীবিকাও তেমনই প্রয়োজনীয়”। দেশে দ্বিতীয়বার করোনা সংক্রমণের ঢেউ আসতে পারে বলেও চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্য কর্তার দাবি, তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। তাই নতুন করে লকডাউনের সম্ভাবনা নেই।