ঝুঁকিপূর্ণ করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আশার আলো জাগাচ্ছে অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি । দেশের মধ্যে এই প্রথম করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হল অ্যান্টিবডি ককটেল । আর তার প্রয়োগে সুস্থ হয়ে উঠলেন হরিয়ানার এক ৮৪ বছরের বৃদ্ধ। তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহ থেকেই গুরগাঁওয়ের মেদান্ত হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল অশীতিপর মহব্বত সিংয়ের। এবার তাঁর উপরে প্রয়োগ করা হল এই ওষুধ। প্রায় আধঘণ্টা ধরে তাঁর শিরার মধ্যে ওই ককটেলের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সংক্রমিত কোষগুলিকে সারিয়ে তুলতে এই চিকিৎসা পদ্ধতি দারুণ কার্যকর বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। ককটেল প্রয়োগের পরে বাড়িও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওই বৃদ্ধকে।
হাসপাতালে চেয়ারম্যান নরেশ ট্রেহান জানালেন, ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ অর্থাৎ গবেষণাগারে তৈরি ওষুধের সংমিশ্রণ শরীরে অ্যান্টিবডির বিকল্প হিসেবে কাজ করে। কোভিড আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে সেটি। আমেরিকা এবং ইউরোপে এই ওষুধের প্রয়োগ সবথেকে বেশি। কোভিড ধরা পড়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে ওই অ্যান্টিবডি মিশ্রণ শরীরে প্রয়োগ করা হলে ৭০–৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের আর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ প্রয়োগের ফলে রোগীর শরীরে কোনও প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে কি না তা দেখা হবে। কোভিড রোগীর শরীরে ভাইরাল লোডের পরিমাণ অনেক সময় বেশি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম ওই ওষুধ। একেবারে প্রাথমিক স্তরেই ‘ক্যাসিরিভিম্যাব’ এবং ‘ইমডেভিম্যাব’ ওষুধ শরীরে প্রয়োগ করা হলে তা রোগীর কোষে ভাইরাসকে ঢুকতে বাধা দেয়। করোনার ভারতীয় প্রজাতিকেও অনায়াসে কাবু করতে পারে এই কৃত্রিম অ্যান্টিবডি।
গত ৫ মে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের তরফে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল এই ওষুধকে। সোমবারই দেশে এসে পৌঁছে গিয়েছিল অ্যান্টিবডি ককটেলের প্রথম ব্যাচ। এবার তা দেশের মধ্যে প্রথমবার প্রয়োগও করা হল।
প্রসঙ্গত, এই ককটেলের চলতি নাম ‘ট্রাম্প ককটেল’। আসলে এই ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়েছিল প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের । গত বছরের শেষদিকে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় এই ওষুধেই চিকিৎসা হয়েছিল তাঁর। দামি এই ওষুধ এতদিন কেবলমাত্র আমেরিকাতেই ছিল। এবার চিকিৎসার জন্য প্রখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারক দুই সংস্থা রশে ইন্ডিয়া ও সিপলার তৈরি অ্যান্টিবডি ককটেল ওষুধের প্রথম ব্যাচ এসে গিয়েছে দেশে। ডোজপিছু এর মূল্য ৫৯ হাজার ৭৫০ টাকা। প্রসঙ্গত, ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশেও অনুমতি পেয়েছে এই ওষুধ।