নিপা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার কোভিডের সংক্রমণে মৃত্যুর হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি! সতর্কতা জারি করে তেমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)। শুক্রবার আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) রাজীব বহল শুক্রবার জানিয়েছেন, নিপা ভাইরাসের আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৪০-৭০ শতাংশ। অন্য দিকে কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার নিপার তুলনায় অনেকটাই কম। মাত্র ২-৩ শতাংশ।
সম্প্রতি কেরলে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ছ’জন নিপায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কেরলের কোঝিকোড়, কান্নুড়, ওয়েনাড় এবং মলপ্পুরমে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রের পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কেরলের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, যাঁরা ওই সব রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন ব্যক্তিদেরও চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদেরও একান্তবাসে পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। কেরলের পাশাপাশি কর্নাটক এবং রাজস্থানেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজস্থান সরকার বৃহস্পতিবার নিপা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। একই সঙ্গে, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্নাটকেও নিপা ঠেকাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সেই আবহেই নিপা নিয়ে সর্তকতা জারি করল কেন্দ্র। কেরলে নিপার সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতেই কেন্দ্র আক্রান্তদের চিকিত্সার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই প্রসঙ্গে আইসিএমআর-এর ডিজি রাজীব বাহল বলেন, ‘‘আমরা ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির কিছু ডোজ় আনিয়েছিলাম। আরও ২০টি ডোজ় সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ দেওয়া দরকার। ভারতে এখনও পর্যন্ত কাউকে এই ওষুধ দেওয়া হয়নি।’’
আইসিএমআর-এর ডিজি জানিয়েছেন, ভারতের বাইরে নিপায় আক্রান্ত ১৪ জন রোগীকে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়েছিল। সকলেই বেঁচে আছেন। তবে এই অ্যান্টিবডি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কেরল সরকার, ডাক্তার এবং রোগীদের পরিবারের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে, বলেছেন রাজীব।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিপার যে রূপটি কেরলের কোঝিকোড়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেটি বাংলাদেশ রূপ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই ভাইরাসের এখনও কোনও প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। ফলে সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। ফলে এই ভাইরাসকে যাতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এখন সে দিকেই নজর কেরল সরকারের।
২০১৮ সালে কেরলে নিপার সংক্রমণ ছড়ায়। তার পর ২০১৯ এবং ২০২১ সালেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ভারতের উপকূলবর্তী এই রাজ্যে।