১। ২০১৯ নভেল করোনা ভাইরাস কি ?
উঃ ২০১৯ নভেল করোনা ভাইরাস বা ২০১৯ এনকভ একটি নতুন ভাইরাস যা চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম চিহ্নিত করা গেছে। এটিকে “নভেল” ভাইরাস বলা হচ্ছে কারণ এটি এর আগে দেখা যায় নি।
২। ২০১৯ নভেল করোনা ভাইরাসের উৎস কি ?
উঃ ২০১৯ নভেল ভাইরাস সংক্রমণের নির্দিষ্ট কোনো উৎস চিহ্নিত করা যায় নি। প্রাণিবিদ্যা অনুযায়ী করোনা ভাইরাস একটি বড় ভাইরাস পরিবারের অংশ, যা কিছু মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটায় এবং বাকি কিছু অন্যান জীবের/পশুর দেহে ঘটায়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী উহান যেখানে এই রোগের প্রথম খবর পাওয়া গেছে সেখানে এই রোগের সাথে সামুদ্রিক খাদ্য ও পশু বাজারের সাথে নিবিড় সংযোগ আছে, এর থেকে ভাবা হচ্ছে যে এই ভাইরাস জীবজগত থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩। এই রোগ ছড়ায় কি ভাবে ? কাদের বেশি হয়, বাচ্চাদের না বড়দের ?
উঃ মূলতঃ হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই রোগ যাকে বলে কোভিডি ১৯ সেটা ছড়ায়, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে ড্রপলেট। রোগীর ব্যবহার করা জিনিসপত্র থেকেও ছড়াতে পারে। সাধারণত উপসর্গ যুক্ত রুগীরাই এই রোগ ছড়াচ্ছে, উপসর্গবিহীনরা নয়। শরীরে ভাইরাস ঢুকলে ২ থেকে ১০ দিন লাগে উপসর্গ দেখা দিতে।
সব রকম বয়সের মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। বয়স্ক মানুষ, যাদের অন্য রোগ যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগ আছে, তারা বেশি অসুস্থ হয় এই রোগ হলে।
৪। নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ ও লক্ষণ কি ?
উঃ প্রাথমিক লক্ষণ হল, ৩৮ ডিগ্রি C জ্বর দশদিন বা তার কম দিন ধরে। সঙ্গে কাশি, স্বাস কষ্ট।
৫। রোগ নিশ্চিতভাবে কেমন করে বোঝা যায় ? কোনো টেস্ট আছে ? কোথায় হয় ?
উঃ রোগ চিহ্নিত করার জন্য সন্দেহভাজক এর গলা ও নাক এর ভেতর থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। সরকারি ভাবে এই পরীক্ষা বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা আছে নির্দিষ্ট হাসপাতালে/ প্রতিষ্ঠানে (এখনো অবধি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে)। কলকাতা থেকে দূরবর্তী জায়গা থেকে ওই ল্যাবে বিশেষ ভাবে প্যাক করে স্যাম্পল পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। কার কখন পরীক্ষা করা হবে সেটা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই ঠিক করবেন। কোনো সাধারণ মানুষ ইচ্ছে হলেই এই পরীক্ষা করাতে পারবেন না।
৬। ভারতে কোনো রুগী কি পাওয়া গেছে ?
উঃ সংখ্যা পরিবর্তন শীল। সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।
৭। এই রোগের চিকিৎসা কোথায় গেলে পাওয়া যাবে ? এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু কি অবিধারিত ?
উঃ এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী মোটামুটি ৮২-৮৫% মাইল্ড বা মৃদু, ১২-১৫% সিভিয়ার বা তীব্র আর ৩-৫% ক্রিটিক্যাল বা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটির প্রয়োজন নেই। চিকিৎসক নিজে ঠিক করে দেবেন কোথায় যেতে হবে, আদৌ ভর্তি হতে হবে কিনা ইত্যাদি বলে দেবেন। ইবোলা, নিপা, সার্স, মার্স এসব রোগের মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
৮। রোগের চিকিৎসা কি ?
উঃ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নিৰ্দিষ্ট কোনো ওষুধ কোনো চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই বা আবিষ্কার হয় নি। সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা হবে। তার সাথে আর যা অসুবিধে থাকবে তার চিকিৎসা হবে, স্বাস কষ্টের জন্য অক্সিজেন ইত্যাদি, প্রয়োজনে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বা ডায়ালিসিস জাতীয় সাপোর্ট প্রয়োজন হবে
৯। এই ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো প্রতিষেধক ওষুধ বা টিকা আছে ? প্রচুর জল খেলে কোনো লাভ আছে ?
উঃ এখনও অবধি কোনো কার্যকরী ও বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত প্রতিষেধক ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয় নি। কোনো চিকিৎসা শাস্ত্রেই নেই। জ্বর সর্দির রুগী প্রচুর জল খেলে তার লাভ আছে কিছু কিন্তু করোনা ঘটিত রোগে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
১০। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিজেকে ও নিজের প্রিয়জন কে এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে কিছু করতে পারি ?
উঃ বিদেশ ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে আক্রান্ত দেশ গুলিতে। ওই দেশে যদি সাম্প্রতিক কালে (গত ১৪ দিনের মধ্যে) গিয়ে থাকেন তাহলে আপনার বা আপনার সংস্পর্শে এসে থাকা কারুর শরীরে রোগ লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক কে জানান। এর সাথে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
১১। কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত ?
উঃ নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন তরল সাবান বা এলকোহল যুক্ত হ্যান্ড রাব দিয়ে। হাঁচি-কাশি হলে মুখ রুমাল, কাপড়, আঁচল, টিস্যু দিয়ে ঢাকুন। কিছু না পেলে কনুই এর ভেতরের ভাঁজ দিয়ে মুখ ঢাকুন। যেখানে সেখানে থুতু ফেলবেন না। হাত মুখে দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। হাত মেলানো বন্ধ। খাদ্য পানীয় নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই। আইসক্রিম খেলে করোনা বাড়ে না বা গরম জল খেলে বা কুলকুচি করলে কমে না। চিকেন, গরু, শুওর, পাঁঠা সবই খাওয়া যাবে। সাপব্যাঙ শকুনির ঠ্যাং না খেলেই হল।
১২। বিভিন্ন ধরণের মুখোশ বা মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। কোনটা কিনবো, ব্যবহার করবো ?
উঃ আক্রান্ত রুগী, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী না হলে, কোনো ধরণের মাস্ক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা ও রুগীদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহারবিধি আছে।
১৪। সামাজিক মেলামেশায়, উৎসবে যোগদানে বা যাতায়াতে কোনো বিধিনিষেধ আছে ?
উঃ করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগের জন্য সামাজিক মেলামেশা, উৎসব, পরীক্ষা, জনসমাগমের ওপরে এখনো এখানে সরকার কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে নি। প্রচুর রুগী পেলে একটি এলাকা ঘিরে ফেলে এসব বিধিনিষেধ হতে পারে। বিদেশ যাত্রা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
১৫। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর কোনো বিশেষ বিধিনিষেধ মানতে হবে ? আমার কোনো রোগ লক্ষণ নেই।
উঃ বিদেশ থেকে , সে দেশ আক্রান্ত দেশ হলে, গত ১৪ দিনের মধ্যে ফিরলে বা কোনো রুগীর সংস্পর্শে এসে থাকলে সামান্য দু একটি নিয়ম মেনে চলুন। আরো চোদ্দদিন বাড়িতেই থাকুন। সামাজিক মেলামেশা বা ঘোরাঘুরি যতটা কম পারেন। বাড়িতে আলাদা ঘরে ঘুমোন। পরিবারের সদস্যদের সাথেও যতটা কম সম্ভব মেলামেশা। হাঁচি কাশি হলে আগে বলা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলুন। অন্য কারুর হাঁচি কাশি থাকলে তার থেকে অন্ততঃ এক মিটার দুরত্ব বজায় রাখুন। জ্বরের উপসর্গ বা খুব শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে নিজে অথবা বাড়ির লোকের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন। জ্বর এর সাথে সর্দিকাশি থাকলে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করুন। জামা কাপড় বিছানার চাদর গুঁড়ো সাবান ও গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
১৬। বাড়িতে থেকে কি চিকিৎসা সম্ভব ? হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে ? হলে কদ্দিন বাদে ছুটি পাওয়া যাবে ?
উঃ সাধারণ মানুষ বা উপসর্গ হীন মানুষ যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তারা বাড়িতে থাকতে পারেন। উপসর্গ দেখা দিলে বাড়িতে থাকা যাবে না। হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে। রোগ ধরা পড়লে উপসর্গ বিহীন না হওয়া পর্যন্ত এবং টেস্ট এর রেজাল্ট নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত ছুটি পাওয়া যাবে না।
১৭। এই আতঙ্কের পরিবেশ থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে ? গরম পড়লে, বৃষ্টি পড়লে এসব কমে যাবে ?
উঃ আতঙ্কিত হবেন না। সতর্ক থাকবেন। গরম পড়লে কি হবে বলা মুশকিল। তবে করোনা প্রজাতির ভাইরাস কিন্তু গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ও বেঁচে থাকতে পারে।
বিধি সম্মত সতর্কীকরণ: সামাজিক মিডিয়াতে প্রচুর লেখাপত্র ঘোরাঘুরি করছে। তার মধ্যে অনেক কিছুই ভুল তথ্যে ভরা। তাই চোখ বুঁজে সব কিছু মেনে নেবেন না এমনকি এই লেখাটাও নয়। সঠিক তথ্যের জন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইট দেখুন। বিদেশি সংস্থার নির্দেশনামাগুলির সাথে আমাদের দেশের স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় সামান্য তফাৎ থাকে। তাই ওগুলির ওয়েবসাইট দেখলে এটা মাথায় রাখবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি এক যোগে কাজ করছে এই রোগের মোকাবিলায়। চিন্তিত হবেন না। আতঙ্কিত হবেন না। স্রেফ সতর্ক থাকুন।