চলতি সময়ে কখনও বৃষ্টি, কখনও শীতের কনকনানি আবার কখনও গরমের প্রভাবের জেরে এই মরসুমে পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ গোটা রাজ্যেই আলুতে ব্যাপক নাভি ধ্বসা রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এই ঘটনায় আলুচাষীদের মধ্যে ব্যাপক আতংক ছড়িয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তিনিও জানিয়েছেন, এই ধরণের আবহাওয়ায় আলুতে নাভি ধ্বসা রোগের প্রভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন গোটা বিযষয়টি নিয়ে রীতিমত চিন্তিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রদীপবাবু জানান।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনার জেরে পিঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া হবার পর আলুর দামও ক্রমশই বাড়তে থাকে। আলু নিয়ে শুরু হয় নাভিশ্বাস। আচমকাই হু হু করে আলুর দাম বাড়তে শুরু করায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে বর্ধমানের আলুর পাইকারী ব্যবসায়ী চন্দ্র বিজয় যাদব জানিয়েছেন, আলুর দাম বাড়ায় বাংলার প্রায় সমস্ত কোল্ড স্টোরেজ থেকেই পুরনো আলু বেড়িয়ে যায়। পাশাপাশি নতুন আলুও বাজারে সময়মত না আসায় আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই। বর্তমানে স্থানীয় নতুন আলু বাজারে চলে আসায় সেই দাম বৃদ্ধি না হলেও এখনও খুচরো বাজারে নতুন আলু ২২ থেকে ২৪ টাকা প্রতি কেজি দরে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মা্নুষকে।
কিন্তু সম্প্রতি বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি, আবহাওয়ার দ্রুত তারতম্য ঘটায় এবার মাটির তলায় থাকা আলু নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছেন আলু চাষীরা। আলু চাষীরা জানিয়েছেন, বুলবুলের প্রভাবে এবারে আলু চাষ করতে দেরি হয়েছে। তাঁরা আশা করেছিলেন এবারে ফলন ভালই হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় তাঁরা গভীর সংকটে পড়েছেন। এমনকি আলুর এই নাভিধ্বসা রোগ নিবারণের ক্ষেত্রে তাঁরা বাজারে কোনো প্রতিষেধক ওষুধও পাচ্ছেন না। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে।
অন্যদিকে, এব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবছর বুলবুলের প্রভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় আলু চাষে দেরি এবং কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। বুলবুলের প্রভাবে আলু গাছের স্বাভাবিক বাড়বৃদ্ধি বেশ কিছুটা থমকে যায়। ফলে বাজারে নতুন আলু আসতে দেরি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এবছর বুলবুলের প্রভাবের আগে যেখানে গোটা জেলায় ৬২-৬৩ হাজার হেক্টরে আলু চাষ হয়েছিল সেখানে বুলবুলের প্রভাব কাটার পর তা বেড়ে গতবারের মতই প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর এলাকায় আলু চাষ হচ্ছে।
এদিকে, বুধবার বর্ধমানের রায়নায় কৃষিমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই আবহাওয়া জনিত কারণে আলুর নাভি ধ্বসা রোগ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। এর ফলে আলুর ফলন মার খাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খোঁজখবর নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের শস্য রক্ষা গ্রুপের সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথায় কোথায় কি কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। একইসঙ্গে বাজারে প্রতিষেধক না পাবার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তিনটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্য রাজ্যের কীটনাশক প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিহারের একটি সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর তাঁরা জানিয়েছেন, বিহারে তাঁদের কিছু মাল মজুদ রয়েছে। সেই মাল দ্রুত এই রাজ্যে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।