করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু দেশ। উদ্বেগ বাড়িয়ে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে সংক্রমণের গ্রাফচিত্র। হু-হু করে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় দিশেহারা গোটা দেশ। বাজারে ভ্যাক্সিন চলে আসলেও সেভাবে মিলছে না কোনও আশার আলো। বরং জীবাণুর সঙ্গে চলছে যমে-মানুষে টানাটানি। আর এই অবস্থায় করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের ঘাটতি যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া।
অক্সিজেনের এই অপ্রতুলতায় যখন সবাই কেন্দ্রকে দুষছে ঠিক তখনই সঠিক সময়ে তরল অক্সিজেনের ট্যাংকার পৌঁছে দিয়ে সংকটজনক প্রায় ৫০০ করোনা রোগীর প্রাণ বাঁচাল রাজধানী দিল্লির জিটিবি হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর তুলনায় অক্সিজেনের অপ্রতুলতায় ভুগছে দিল্লির একাধিক হাসপাতাল। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি জিটিবি হাসপাতালও। মঙ্গলবার সেখানে করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের চরম ঘাটতি দেখা যায়। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ না থাকায় রাত ১১ টার পর পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
এই বিষয়ে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দিল্লির জিটিবি হাসপাতালের অক্সিজেনের সাপ্লাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, করোনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে কোনও মিরাকেল ঘটা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না৷ এই বিষয়ে অবগত করতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের কাছে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহের আবেদন জানান। এরপর রাত ১:৩০ টা নাগাদ জিটিবি হাসপাতাল চত্বরে এসে পৌঁছায় অক্সিজেনের ট্যাংকার। জরুরি ভিত্তিতে বাঁচানো গিয়েছে প্রায় ৫০০ করোনা সংক্রমিত রোগীর প্রাণ।
রাজধানীতে ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৮,৩৯৯ জন। রাজধানীতে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৮৫,৫০০। সঙ্গে পাল্ল দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। অন্যদিকে দেশের মধ্যে করোনার সেকেন্ড ওয়েভে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হল মহারাষ্ট্র । সেখানে দৈনিক সংক্রমণের হার ৫০,০০০ ছুঁয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮,৯২৪ জন। করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫১ জন।
মঙ্গলবারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ১৭০ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ জনের। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ২১ হাজার ৮৯ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৩০ জনে। অ্য়াক্টিভ মামলার সংখ্যা ২০ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৯৭। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৬১ জন। এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৮ হাজার ৫৮২। করোনাকে ঠেকাতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে টিকাকরণ প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে দেশের ১২ কোটি ৭১ লক্ষ ২৯ হাজার ১১৩ জনকে। মঙ্গলবারের রিপোর্ট অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা হলেও কম। করোনার এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে এটুকুই যা সাময়িক স্বস্তি।