ওমিক্রন নিয়ে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগের আবহে ব্রিটেনে ফের লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে দৈনিক কোভিড সংক্রমণ। গত শুক্রবারই রেকর্ড ভেঙে ব্রিটেনে দৈনিক সংক্রমণ ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে। ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ছুঁয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ওমিক্রন ডেল্টা রূপের চেয়ে কম ক্ষতিকারক, এই দাবির সপক্ষে এখনও কোনও ‘প্রমাণ’ মেলেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই তা বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের একাধিক দেশ ছাড়াও ব্রিটেন, ডেনমার্কে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই রূপে আক্রান্ত হয়েছেন। এই আবহে বিশেষজ্ঞরা তৎপর একটিই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। কার জোর বেশি—ডেল্টা না ওমিক্রনের?
ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ দাবি করেছে, ওমিক্রন তার পূর্বসূরি ডেল্টার মতো অতটা ক্ষতিকর নয়। তবে তার মানে এই নয় ওমিক্রন নিরীহ। বরং করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপের এমন কিছু বিরল শক্তি আছে যা ডেল্টার ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি)-এর অধিকর্তা আদ্রিয়ান পুরেন বলেন, “সংক্রমণের নিরিখে ডেল্টাকে অতিক্রম করবে কোন রূপ, এই প্রশ্নটা অনেক দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। হতে পারে ওমিক্রনই হয়তো ডেল্টার জায়গাটা নেবে।”
সম্প্রতি লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এক লক্ষ ২০ হাজার ডেল্টা আক্রান্ত এবং ১৫ হাজার সন্দেহভাজন ওমিক্রন আক্রান্তের তথ্য পাশাপাশি রেখে ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নজরে রাখা হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক হাজারেরও বেশি ডেল্টা রোগী ও ২৪ জন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থার বিষয়়টি। এই ভাবে কোভিডের দুই রূপের তুলনামূলক বিচার করে রিপোর্টে ইম্পিরিয়াল কলেজের বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডেল্টা রোগীদের মতো ওমিক্রন আক্রান্তদের শরীরেও দেখা যায় উপসর্গ। তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি।
ব্রিটেনের বর্তমান পরিস্থিতি নজরে রেখে ওই রিপোর্টের অন্যতম লেখক তথা মহামারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আজরা গনি বলেন, ‘‘এই হারে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে প্রচুর রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে ভবিষ্যতে।’’ তাঁর দাবি, গত শীতে ব্রিটেনে কোভিডে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, এই শীতের পরিসংখ্যান তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। দিনে হাজারেরও বেশি কোভিড রোগীর মৃত্যু হতে পারে ব্রিটেনে।
ওমিক্রন সংক্রমণের জেরে তৈরি অতিমারি পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত নাগরিকদের বুস্টার টিকা দেওয়ার কথাই ভাবছে বরিস জনসনের সরকার। কিন্তু ওমিক্রন প্রতিরোধে বুস্টার টিকাও কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজের রিপোর্ট বলছে, যাঁরা অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার দু’টি টিকাই নিয়েছেন, তাঁরা ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে গুরুতর উপসর্গের সম্ভাবনা ২০ শতাংশ কমতে পারে। অন্য দিকে, যাঁরা ফাইজারের দু’টি টিকা পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে গুরুতর ভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কমতে পারে।
আর যদি বুস্টার টিকা নেওয়া থাকে, তবে ওমিক্রনে গুরুতর ভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ কমতে পারে। বুস্টার টিকা নেওয়ার ৬০ দিনের মাথায় কেউ ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে ৯০ শতাংশ কমতে পারে মৃত্যুর সম্ভাবনা।