ভারতে দিন দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সব রেকর্ড ভেঙে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৪ হাজারের বেশি। এই অবস্থায় দেশে টিকাকরণের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রের কাছে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে তাতে কি নির্দিষ্ট সময়ে দেশের মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে? একাধিক রাজ্য টিকা ঘাটতির দাবি তুলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষ বর্ধন বলেছেন, কেন্দ্রের কাছে পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে অন্য কথা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতে বর্তমানে টিকাকরণের দৈনিক গড় সংখ্যা ৩৫ লক্ষ ৮০ হাজার। ভারতের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা অর্থাৎ ৬৫ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য ১৩০ কোটি ডোজ প্রয়োজন। এই পরিমাণ ডোজ দেওয়ার জন্য ৩৩৮ দিন বা ১২ মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, সংক্রমণ কমানোর জন্য দরকার হার্ড ইমিউনিটি। অর্থাৎ প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৩ জনকে টিকা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের ৭৮ কোটি নাগরিকের জন্য ১৫৬ কোটি ডোজ প্রয়োজন। তার জন্য এখনও ৪০৬ দিন বা ১৩ মাস সময় লাগবে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারে।AdvertisementAdvertisement
অর্থাৎ এই গতিতে ভারতের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য ৬৭৭ দিন বা ২৩ মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারে
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত ৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভারতে এই মুহূর্তে ২ কোটি ৪০ লক্ষ ডোজ স্টকে রয়েছে। এ ছাড়া আরও ১ কোটি ৯০ লক্ষ ডোজ তাড়াতাড়ি চলে আসবে। কিন্তু তা হলেও এই পরিমাণ ডোজে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত টিকাকরণ সম্ভব হবে (দৈনিক গড় হারের হিসেবে)।
বর্তমান টিকাকরণের গতিতে চললে অগস্ট মাসের মধ্যে দেশের ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে, যা মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ। কিন্তু এই সংখ্যক নাগরিককে টিকা দিলেও তাতে সংক্রমণ বিশেষ কমবে না বলেই দাবি করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, দেশের ৬০ শতাংশ নাগরিককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি ৫০ লক্ষ ডোজ প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ডোজ কেন্দ্রের হাতে নেই। সেই সঙ্গে হিসেবে রাখতে হবে টিকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে ১৭ মার্চ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে ৬.৫ শতাংশ ডোজ নষ্ট হচ্ছে। তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক ও জম্মু-কাশ্মীরে এই পরিমাণ জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি।
এই মুহূর্তে ভারতে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যসভার রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি মাসে কোভিশিল্ড টিকার সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে পারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট। অন্য দিকে প্রতি মাসে কোভ্যাক্সিন টিকার সর্বোচ্চ ১ কোটি ২৫ লক্ষ ডোজ উৎপাদন করতে পারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ভারত বায়োটেক। অর্থাৎ মাসে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৩০ লক্ষ থেকে ১১ কোটি ৩০ লক্ষ ডোজ উৎপাদন হতে পারে দেশে। কিন্তু এখনও সেই পরিমাণ ডোজ উৎপাদন হচ্ছে না। তা ছাড়া এই ডোজের মধ্যে কিছুটা অংশ বিভিন্ন দেশকে দেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য এর মধ্যেই রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক ভি-কে ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া। বছরে ৮৫ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে পারবে বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। দেশের ৫টি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও করেছে তারা। স্পুটনিক টিকার উৎপাদন শুরু হলে ডোজের ঘাটতি হবে না, এমনটাই মনে করছে কেন্দ্র।